ফেসবুকের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। ফেসবুকের থেকে নাকি ভারত সরকার ও কেন্দ্রীয় আইনি বিভাগের তরফে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারকারীদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। গত দেড় বছরে তার মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেসবুকের স্বচ্ছতা রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। গত বুধবার এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানেই উল্লেখ, ২০১৯ সালের প্রথম পর্বে জরুরী ভিত্তিতে ১,৬১৫ অনুরোধ জানানো হয়েছে। যা ২০১৮ সালের শেষ পর্বের তুলনায় ৮৬১ বেশি। ফেসবুক বলছে, ব্যবহারকারীদের তথ্য জরুরি ভিত্তিতে জানতে চেয়ে ভারত সরকার বা তার আইনি সংস্থার তরফে গত বছর ১,৪৭৮ অনুরোধ এসেছিল। এই পরিসংখ্যান ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি ছিল।
সাধারণত ইউজার সংক্রান্ত তথ্য পেতে গেলে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তির ভিত্তিতে আমেরিকার ন্যায়বিচার সংক্রান্ত বিভাগের দ্বারা মার্কিন সংস্থাটির কাছে পৌঁছায়। কিন্তু, জরুরিভিত্তিতে অনুরোধ করা হলে সরাসরি ফেসবুকের কাছেই আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে 'ল এনফোর্সমেন্ট অনলাইন রিকোয়েস্ট সিস্টেমে' অনুরোধ পৌঁছে যায় ফেসবুকের কাছে। সংস্থার স্বচ্ছতা রিপোর্টে প্রকাশ, 'জরুরিভিত্তিতে ইউজার তথ্য চেয়ে কোনও দেশের আইনি সংস্থা অনুরোধ করলে আইনি পদ্ধতি সবসময় কার্যকর হয় না। মূলত বিশ্বাসের উপরই প্রক্রিয়াটি নির্ভর করে।'
আরও পড়ুন: পেগাসাস হানা: সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রকে ১২১ জন আক্রান্তের কথা বলেছিল হোয়াটসঅ্যাপ
ফেসবুক ইউজারদের অ্যাকাউন্ট থেকেবিভিন্ন বিষয় বাদ দেওয়ার অনুরোধ করেই ভারত সরকারের তরফে জরুরি অনুরোধ বেশি করা হয়েছে। পরিসংখ্যানের বিচারে মেক্সিকো ও পাকিস্তানের পরেই রয়েছে ভারত। রিপোর্টে ফেসবুক জানিয়েছে, ভারত সরকারের অনুরোধে ১,২১১ পোস্ট, ১৯ পেজ বা গ্রুপ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের প্রথম দিকে বন্ধ করা হয় ২টি অ্যাকাউন্ট। ওই সময়ই ১৭ ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও বাতিল করা হয়। ইউজার তথ্য চেয়ে ভারতের মোট অনুরোধের প্রায় ৭ শতাংশই এসেছে আইনি পথের বাইরে, জরুরি ভিত্তিতে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত ঘৃণ্য বক্তব্য, ধর্মীয় বিষয়বস্তুর অপব্যবহার, মানহানি বক্তব্য বাতিলের জন্যই এই অনুরোধ করা হয়েছে। ফেসবুকের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ইন্টারনেট বিঘ্নের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। জম্মু-কাশ্মীর ছাড়াও ত্রিপুরা, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, উত্তর প্রদেশ এবং রাজস্থানে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। এবছরের প্রথম পর্বে দেশে লোকসভা ভোট হয়েছে। এই সময়কালে ভারতের নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে ফেসবুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ৪৮৮ প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপের টার্গেট লিস্টের বেশিরভাগই ভারতের মানবাধিকার আইনজীবী, সাংবাদিক ও অধ্যাপক
ফেসবুকের দেওয়া পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের তুলনায় ভারত সরকারের ইউজারদের আইপি এ্যাড্রেস, অ্যাকাউন্টের বিষয়বস্তু সহ নানা তথ্য জানতে চাওয়ার পরিমান কয়েকগুণ বেড়েছে। যেখানে ২০১৫ সালে এই অনুরোধ ছিল ১০, ৬৭৬টি, সেখানে ২০১৬ সালে তার পরিমান বেড়ে দাঁড়ায় ১২, ৬১৩টিতে। ২০১৭ ও ১৮ সালে এই সংখ্যাটা যথাক্রমে ২২,০২৪ ও ৩৭,৩৮৫। চলতি বছরের প্রথম ছ'মাসে ২২, ৬৮৪ অনুরোধ করা হয়ে গিয়েছে।
২০১৩ সালে ফেসবুক এই তথ্যগুলি ট্র্যাক করা শুরু করে। ভারত সরকারের অনুরোধের ৫০ শতাংশ বজায় রাখা হয়েছে বলে জানাচ্ছে ফেসবুক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৫ সালে ছিল ১৩৫.৬ মিলিয়ন, যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ২০১৮ সালে ২৮১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
Read the full story in English