ক্ষমতাশালীদের তালিকা প্রস্তুত করে বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রে আসে 'ফোর্বস'। ফি বছর বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন পেক্ষাপটে এই তালিকা নির্মাণ করে পত্রিকাটি। এবারও ফোর্বসের তেমনই একটি তালিকা প্রকাশ পেল যা জানিয়ে দিচ্ছে সদ্য শুরু হওয়া দশকে কে কে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন। সেই তালিকাতেই একসঙ্গে ঠাঁই পেলন তৃণমূলের নারীশক্তি এবং কৌশল রচনাকারী। তবে, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, মহুয়া মৈত্র। তৃণমূলে মমতা ভিন্ন এমন আন্তর্জাতিক উল্লেখ এক প্রকার বেনজির। ফলে সেদিক থেকে মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে দলের অন্দরে ও বাইরে নতুন করে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, নির্বাচনী কৌশল রচনাকারী প্রশান্ত কিশোরও (পিকে) এই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। তাছাড়াও এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে কানহাইয়া কুমারেরও।
সংসদে প্রথমবার পা রেখেই জ্বালাময়ী বক্তব্য পেশ করে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। দেশ যে ফ্যাসিবাদের দিকে এগিয়ে চলেছে, তার লক্ষণ প্রসঙ্গে ঝাঁঝাল বক্তৃতায় মোদী সরকারকে বিঁধে জাতীয় রাজনীতি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন মহুয়া। বলা যায় এই বক্তৃতাই কৃষ্ণনগরের সাংসদকে রাতারাতি তরুণ প্রজন্মের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে চলে এসেছিলেন। বিদেশে নামী সংস্থায় চাকরি করা 'স্মার্ট' মহুয়ার মুকুটে এবার নয়া পালক জুড়ল। ফোর্বস ইন্ডিয়ার বিচারে ২০২০ সালে ২০জন প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাঁরা এই দশককে নানাভাবে রূপদান করবে, তাঁদের তালিকায় জায়গা করে নিলেন একদা বিদেশে এনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কারের পদে চাকরি করা মহুয়া মৈত্র। তবে শুধু মহুয়াই নন, ফোর্বসের তালিকায় নজর কেড়েছেন এই মুহূর্তে রাজনীতির আঙিনায় অতিচর্চিত আরও দুই নামও। তাঁরা হলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা কানহাইয়া কুমার এবং ভোটগুরু তথা জেডিইউ নেতা প্রশান্ত কিশোর।
ফোর্বসের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় কেন মহুয়া মৈত্র?
ফোর্বস মহুয়া মৈত্রের সংসদে সেই ভাষণের কথা উল্লেখ করেছে। ২০০৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক যাত্রারম্ভের এক বছর পর তৃণমূলে আসেন মহুয়া। ২০১৯ সালে প্রথমবারের সাংসদ তাঁর ভাষণে সেদিন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে চড়া সুরে তৃণমূল সাংসদ বলেছিলেন, “যদি আপনারা চোখ খোলা রাখেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেখতে পাবেন যে গোটা দেশ ফ্যাসিবাদের দিকে এগিয়ে চলেছে। বিভাজনের রাজনীতির হাত ধরে দেশ কার্যত ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সর্বত্র এর চিহ্ন দেখা যাচ্ছে’’। এছাড়াও সম্প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়েও সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছে মহুয়াকে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছেন বাংলার এই সাংসদ।
ফোর্বসের তালিকায় কেন নজর কাড়লেন প্রশান্ত কিশোর?
তিনি সঙ্গে থাকা মানেই অনায়াসে ভোট বৈতরণী পার করে ক্ষমতার কুর্সিতে বসতে পারে যে কোনও রাজনৈতিক দল, এমনটাই অনেকের আস্থা। তাঁর কৌশলকে কাজে লাগিয়েই ২০১৪ সালে দিল্লির দরবারে পা রেখেছিল মোদী সরকার। বিহারে নীতিশ-লালু-কংগ্রেসের সরকারকেও ক্ষমতায় এনেছিলেন তিনিই। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে সেই তাঁরই শরণাপন্ন হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। ২০১১ সালে গুজরাতে নির্বাচনে বিজেপিকে জেতানোয় বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন পিকে। এরপরই বড় সাফল্য মেলে ২০১৪ সালে। এর আগে অবশ্য, ২০১৯ সালে তেলঙ্গানায় ওয়াইএসআর জগন মোহন রেড্ডি ও মহারাষ্ট্রে শিবসেনার হয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিল তাঁর সংস্থা আইপ্যাক। তৃণমূলের পাশাপাশি বর্তমানে দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিরও ভোটকুশলী তিনি। আর এ কারণেই আগামী দিনের মুখ হিসেবে প্রশান্ত কিশোরকে বেছেছে ফোর্বস।
ফোর্বসের তালিকায় কেন ঠাঁই পেলেন কানহাইয়া?
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে নজর কেড়েছিলেন কানহাইয়া কুমার। ২০১৬ সালে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এরপরই হইচই পড়ে গিয়েছিল দেশজুড়ে। ২০১৯ সালে সিপিআই-এর টিকিটে লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার প্রার্থীও হয়েছিলেন কানহাইয়া। কিন্তু বেগুসরাই কেন্দ্রে বিজেপির গিরিরাজ সিংয়ের কাছে হেরে যান এই ছাত্রনেতা। কিন্তু আগামী দিনের রাজনীতিতে যুবসমাজের নেতা হিসেবে প্রথম পছন্দ কানহাইয়াই, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। বিশেষত, কানহাইয়ার জ্বালাময়ী বক্তৃতা বরাবরই নজরকাড়া। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁর এই গ্রহণযোগ্যতার জন্যই ফোর্বসের তালিকায় ঠাঁই মিলেছে 'ফ্রম বিহার টু তিহার' বইয়ের লেখকের।