Advertisment

#MeToo: এবার ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত হলেন এম জে আকবর

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার জন্য লেখা একটি প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার পল্লবী গগৈ জানিয়েছেন, ১৯৯৪ সালে তিনি এশিয়ান এজ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে একটি পাতার দায়িত্বে থাকাকালীন তাঁকে ধর্ষণ করেন আকবর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
m j akbar, এম জে আকবর

এম জে আকবর। ফাইল ছবি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এবার সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ উঠল প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এবং এশিয়ান এজ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এম জে আকবরের বিরুদ্ধে। আনলেন ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর চিফ বিজনেস করেসপন্ডেন্ট পল্লবী গগৈ। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার জন্য লেখা একটি প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার পল্লবী জানিয়েছেন, ১৯৯৪ সালে তিনি এশিয়ান এজ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে একটি পাতার দায়িত্বে থাকাকালীন তাঁকে ধর্ষণ করেন আকবর। পল্লবীর বয়স তখন ২৩।

Advertisment

আকবর পরে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সংস্থা এএনআই কে বলেন, তাঁদের দুজনের মধ্যে একটি সম্মতিসূচক সম্পর্ক ছিল, যা "ভালোভাবে শেষ হয় নি"। আকবরের আইনজীবী সন্দীপ কাপুর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, "সব অভিযোগ মিথ্যা এবং আমরা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছি।" ওয়াশিংটন পোস্টে পল্লবীর প্রতিবেদনের সঙ্গে কাপুরের বক্তব্য সম্পাদকের নোট হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।


পল্লবী লিখেছেন, তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সেই এশিয়ান এজের একটি বিশেষ পাতার সম্পাদক হয়েছিলেন। "অত কম বয়সে নিঃসন্দেহে বড় দায়িত্ব। কিন্তু নিজের পেশার প্রতি ভালবাসার দামও দিয়েছি অনেক।" তিনি আরও লিখেছেন, "এমন একটা দিনও যেত না যেদিন উনি আমাদের যে কোনও একজনকে চিৎকার করে তিরস্কার না করতেন। কিন্তু আমি ওঁর ভাষাজ্ঞান, শব্দের প্রয়োগ, ওঁর লেখার ক্ষমতায় মুগ্ধ ছিলাম, তাই সবরকম মৌখিক লাঞ্ছনা মেনে নিতাম।"

প্রতিবেদনে পল্লবীর বক্তব্য অনুযায়ী, আকবর প্রথমবার তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি। তিনি লিখছেন, "আমি ওঁর অফিস ঘরে গিয়েছিলাম, যার দরজা প্রায়ই বন্ধ থাকত। আমি আমার দেওয়া (এবং আমার মতে বেশ বুদ্ধিদীপ্ত) হেডলাইন সমেত পাতাটা দেখাতে গিয়েছিলাম। উনি আমার কাজের প্রশংসা করে হঠাৎই আমাকে চুমু খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। কোনরকমে সরে গিয়ে আমি অফিস থেকে বেরিয়ে আসি, মুখচোখ লাল, বিভ্রান্ত, লজ্জিত, সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।" দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে মুম্বইয়ে, দাবী পল্লবীর। "উনি আমাকে বিলাসবহুল তাজ হোটেলে ওঁর ঘরে ডাকেন, আবার পাতার লে-আউট দেখতে। এবার যখন উনি আমার কাছে আসার চেষ্টা করেন, আমি বাধা দিয়ে ওঁকে ঠেলে সরিয়ে দিই। যখন আমি পালিয়ে যাচ্ছি, তখন উনি আমার মুখে আঁচড় কেটে দেন, আমার চোখ দিয়ে তখন অঝোরে জল পড়ছে।"

আরও পড়ুন: #MeToo: আদালতে গৃহীত আকবরের মামলা, শুনানি ৩১ অক্টোবর

পল্লবীর বক্তব্য অনুযায়ী, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে জয়পুরে, যেখানে কাজে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রতিবেদনে পল্লবী লিখেছেন, "তাঁর হোটেলের ঘরে আমি তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু তাঁর শারীরিক শক্তি অনেক বেশি ছিল। আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে উনি আমাকে ধর্ষণ করেন।" পল্লবীর বক্তব্য, তিনি পুলিশকে কিছু বলেন নি, মূলত লজ্জায়। "তখন কাউকে কিছু বলি নি। কেউ বিশ্বাস করতো কি? আমি নিজেকেই দোষী করেছিলাম। কেন গেলাম তাঁর হোটেলের ঘরে?"

"সেই প্রথম বারের পর আমার উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করলেন উনি। আমি এতটাই অসহায় বোধ করতাম যে প্রতিরোধ করার চেষ্টাও করতাম না আর। উনি আমাকে জোর করতেই থাকেন। বেশ কয়েকমাস ধরে আমাকে শারীরিক, মৌখিক, এবং মানসিকভাবে কলুষিত করেন তিনি," লিখেছেন পল্লবী। এও যোগ করেছেন, যে তাঁকে নিউজ রুমে কোনও পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলতে দেখলে আকবর "রাগে ফেটে পড়তেন", এতটাই যে "দেখে ভয় করত"। তাঁর কথায়, তিনি শহরের, এমন কী দেশের বাইরে আকবরের থেকে অনেক দূরে চলে গেলেও তাঁকে "শিকার" করার মতো করে তাড়া করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: M J Akbar Resigned: যৌন হেনস্থার অভিযোগের জেরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন এম জে আকবর 

পল্লবী বলেছেন তিনি এশিয়ান এজের লন্ডন দপ্তরে প্রবাসী সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন আকবর সেখানে গিয়ে "আমাকে শারীরিক আঘাত করে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে তোলেন, ডেস্ক থেকে তুলে নিয়ে জিনিস ছুড়তে থাকেন আমার দিকে - কাঁচি, পেপারওয়েট, যা হাতের সামনে পান"। পল্লবীর স্মৃতিতে এই শেষ ঘটনা, যার পর তিনি এশিয়ান এজ ছেড়ে চলে যান।


প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার আকবর কোর্টে হাজির হন নিজের জবানবন্দি রেকর্ড করতে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম যে মহিলা সাংবাদিক যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন, সেই প্রিয়া রমানির নামে মানহানির ফৌজদারি মামলা করেছেন আকবর। প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, রমানির আনা অভিযোগের ফলে তাঁর সম্মানহানি ঘটেছে, এবং সমস্ত অভিযোগ রমানির "কল্পনা প্রসূত"। এও উল্লেখ্য, যে আকবরের স্ত্রী মল্লিকা ধর্ষণের ঘটনায় স্বামীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন এই বলে, যে আজ থেকে ২০ বছর আগে পল্লবীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্কের কারণে তাঁদের সংসারের শান্তি বিঘ্নিত হয়।

রমানির পর আরও ১০ জন মহিলা আকবরের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ করেছেন।

MJ Akbar
Advertisment