কখনও বলা হত, কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, কখনও খাঁচাবন্দি তোতাপাখি! এখন আবার বলা হয়, বিজেপির তিন জামাইয়ের একটা। সিবিআই বা কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সিকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। দেশের প্রথমসারির তদন্তকারী সংস্থা, একাধারে দুর্নীতিদমনেও সেরা ছিল। কিন্তু কালের ফেরে এই সংস্থা কেন্দ্রের শাসকদলের আজ্ঞাবহ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।
গত ১৮ বছরে কখনও কংগ্রেস আমলে আবার কখনও বিজেপি জমানায়, সিবিআই ২০০-র বেশি রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার, তাঁর বাড়িতে হানা, জেরা করেছে সিবিআই। তার মধ্যে ৮০ শতাংশই বিরোধী দলের। ২০১৪ সাল কেন্দ্রে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সিবিআইয়ের কার্যকলাপ নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তমূলক অনুসন্ধান এমনই বলছে।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে ১০ বছরে অন্তত ৭২ জন নেতা ছিলেন সিবিআই স্ক্যানারে। তার মধ্যে ৪৩ জন (৬০ শতাংশ) বিরোধী পক্ষের। তবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় এনডিএ সরকারের আমলে গত ৮ বছরে অন্তত ১২৪ জন দাপুটে বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে সিবিআই। যার মধ্যে ১১৮ জনই বিরোধী পক্ষের। যা প্রায় ৯৫ শতাংশের মতো।
আরও পড়ুন ‘মোদী এসবের পিছনে রয়েছেন মনে করি না’, ED-CBI নিয়ে মমতার নিশানায় শাহ-শুভেন্দু
ইউপিএ আমলের মতোই যখনই কোনও নেতা দলবদল করেছেন, তখনই সিবিআই তদন্ত ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে।
ইউপিএ আমলের ৭২ জন এবং এনডিএ আমলের ১২৪ নেতার বিস্তারিত তথ্য হাতে এসেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। কোন দলের নেতার বিরুদ্ধে কী মামলা সবই তথ্যের আকার প্রকাশ করা হয়েছে। দেখে নিন একনজরে-
এনডিএ জমানায় সিবিআইয়ের স্ক্যানারে রয়েছেন একজন মুখ্যমন্ত্রী, ১২ জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ১০ জন মন্ত্রী, ৩৪ জন সাংসদ, ২৭ জন বিধায়ক, প্রাক্তন বিধায়ক ১০ জন, প্রাক্তন সাংসদ ৬ জন। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ২২ জন, ৪৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা হয়েছে, একজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, কেউ বেকসুর খালাস হননি। ১১৮ জন বিরোধী নেতা-নেত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (৩০), তার পরই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস (২৬)। আরজেডি এবং বিজেডির ১০ রয়েছেন তালিকায়। উল্টোদিকে, বিজেপির মাত্র ৬ জন।
আরও পড়ুন ‘তোদের মতো চোর আমরা নই রে!’, বিধানসভায় মমতার তুই-তোকারি শুভেন্দুকে, ‘ডোন্ট টাচ মি’ খোঁচা
ইউপিএ আমলের চিত্র হল. চারজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা, ২ জন মন্ত্রী, সাংসদ ১৩ জন, বিধায়ক ১৫ জন, প্রাক্তন বিধায়ক একজন, প্রাক্তন সাংসদ ৩ জন। তার মধ্যে গ্রেফতার হন ১২ জন, ৩০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট, দোষী সাব্যস্ত ৬, বেকসুর খালাস ৭ জন। যদিও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি সিবিআই। প্রশ্নের উত্তরও দিতে চায়নি। তবে কয়েকজন আধিকারিক বলেছেন, এটা কাকতালীয় ছাড়া আর কিছুই না। আর বিরোধীদের টার্গেট করা হচ্ছে সেটাও অস্বীকার করেছে সিবিআই।