হিন্দুত্বের আইকন বিনায়ক সাভারকর কি আদৌ ব্রিটিশদের মুচলেকা দিয়ে রেহাই পেয়েছিলেন? আন্দামানের সেলুলার জেলে ক্ষমাভিক্ষা চেয়ে তিনি ব্রিটিশ নির্যাতন থেক মুক্তি পান। এই নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু মঙ্গলবার বোমা ফাটালেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। তাঁর দাবি, মহাত্মা গান্ধির পরামর্শে ব্রিটিশদের মুচলেকা দিয়েছিলেন সাভারকর।
তবে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদানকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে বিরুদ্ধ মতাদর্শের মানুষ। তা আর বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিলেন রাজনাথ। এদিন সাভারকরের উপর একটি বইয়ের উদ্বোধনে এসে আম্বেদকর আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবতের সামনে রাজনাথ বলেন, "সাভারকরকে ভুল বুঝেছে দেশ।" ভাগবতও একই কথা বলেন। তাঁদের যুক্তি, "সাভারকরের মতো কথা বললে আজ দেশ ভাগ দেখতে হত না। ভাগবত আরও বলেছেন, দেশের রাস্তাঘাট মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের নামে করা উচিত নয়।"
প্রসঙ্গত, উদয় মাহুরকর এবং চিরায়ু পণ্ডিতের লেখা এই বইটির নাম 'বীর সাভারকর: দ্য ম্যান হু কুড হ্যাভ প্রিভেন্টেড পার্টিশন'। রাজনাথ বইটির প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে বলেন, "সাভারকরের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যাচার হয়েছে। বার বার বলা হয়েছে, সাভারকর না কি ব্রিটিশ সরকারের কাছে একাধিক বার ক্ষমাভিক্ষা চান। কিন্তু সত্যি হল, নিজের মুক্তির জন্য এই কাজ করেননি তিনি। বরং মহাত্মা গান্ধির পরামর্শে তিনি মুচলেকা দেন। মহাত্মাও সাভারকরের মুক্তির জন্য দরবার করেন ব্রিটিশদের কাছে। এও বলেন যে, যেভাবে আমরা অহিংসভাবে আন্দোলন করছি, সাভারকরও সেভাবে করবে।"
রাজনাথ আরও বলেছেন, "সাভারকর মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে দিতে, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, নারীদের অধিকার-সহ একাধিক মানবাধিকার নিয়ে সরব হয়েছিলেন। যদিও দেশের সাংস্কৃতিক ঐক্যের জন্য তাঁর অবদান বিস্মৃত হয়েছে। তাঁকে সবাই এতটাই ঘৃণা করেন যে ২০০৩ সালে সংসদ ভবনে যখন সাভারকরের একটি তৈলচিত্র লাগানো হচ্ছিল তখন অনেক রাজনৈতিক দল তা বয়কট করে। আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সেলুলার জেলে তাঁর নামের ফলকও সরিয়ে দেয় নতুন সরকার।"
আরও পড়ুন লখিমপুর কাণ্ড: কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ কংগ্রেস
রাজনাথের ভাষায়, "সিংহ শিকারের গল্প শিকারির মুখ থেকেই শোনা যায়। কিন্তু কখনও সিংহ তার কাহিনী বলতে পারে না। তেমনই সাভারকরের গল্প ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ নিজের মতো করে বানিয়েছেন। আপনার তাঁর মতাদর্শ নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু তাঁকে ছোট করার কোনও অধিকার নেই কারও। দেশের প্রতি তাঁর অবদানকে খাটো করার চেষ্টাকে বরদাস্ত করা হবে না।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন