হাসপাতালে যখন আগুন লাগল, তখন বোন এবং সদ্যোজাত ভাগ্নের কথা ভেবে ছুটে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন ভাগ্নের মতো আরও অনেক শিশুর জীবন বিপন্ন। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আট শিশুকে আগুনের করাল গ্রাস থেকে বাঁচিয়েও নেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! বাঁচাতে পারলেন না নিজের ভাগ্নেকে। ভোপালের সরকারি হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডে হিরোর তকমা পেয়েও যেন নিঃশ্ব হয়ে গেলেন রশিদ খান।
আটদিন আগে বোন ইরফানা এবং ভগ্নিপতি রাইস কুরেশির সন্তান জন্মায়। গত সোমবার দুপুর তিনটে নাগাদ ছেলেকে কটের মধ্যে খেলতে দেখে হাসপাতাল থেকে চলে আসেন কুরেশি। রাতে বাড়িতে খাবার খাওয়ার সময় আচমকা বোনের আসে রশিদের কাছে। হাসপাতালে আগুন লেগেছে। শুনেই ছুটে যান রশিদ। যখন সদ্যোজাত কেয়ার ইউনিটে তিনি পৌঁছন দেখেন, ডাক্তার-নার্সরা শিশুদের অন্যত্র সরানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
তখন নিজের ভাগ্নের কথা না ভেবে উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন রশিদ। ভেবেছিলেন, যদি নিরীহ শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে পারেন তাহলে আল্লা তাঁর ভাগ্নেকেও বাঁচিয়ে দেবে। আটটি শিশুকে বাঁচাতে পেরেছিলেন, কিন্তু নিজের আট দিনের ভাগ্নে রাহিলকে বাঁচাতে পারেননি রশিদ। বিয়ের বারো বছর পর বোনের গর্ভে সন্তান এসেছিল। জন্মের পর থেকে অসুস্থ ছিল শিশু। হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি ছিল সে।
রশিদ মঙ্গলবার নিজের ভাগ্নেকে কবর দেওয়ার সময় কান্না ধরে রাখতে পারেননি। বলেন, "আগুনের জেরে ওয়ার্ডে ধোঁয়ায় ভরে যায়। আগুন তখন নিভু নিভু। আমরা তখন তার কেটে, সরঞ্জাম সরিয়ে শিশুদের অন্য ওয়ার্ডে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তাড়াহুড়োর মধ্যে আমি আমার ভাগ্নেকে দেখতে পারিনি। ওরা প্রত্যেকে নিরীহ শিশু, ওদের বাঁচানোর কথাই ভাবি। যখন দেখলাম সব শিশুকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।"
আরও পড়ুন হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ে মৃত্যু চার শিশুর
এর ঠিক ৩০ মিনিট পর ভাগ্নের খোঁজ করেন রশিদ। রাতে তিনটে পর্যন্ত খুঁজেও না পেয়ে শেষপর্যন্ত মর্গে গিয়ে খোঁজেন। সেখানে রাহিলের দেহর পাশে আরও এক শিশুর দেহ পড়েছিল। মাত্র একদিনের শিশু, হাতে লেখা অঙ্কুশ যাদবের মেয়ে।
২৫ বছরের অঙ্কুশ এবং তাঁর স্ত্রী রচনার জন্য সোমবার ছিল জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। যমজ মেয়ে হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু সাত মাসেই প্রসব হওয়ায় অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয় শিশুদের। সোমবার রাতে আচমকা শিশুদের ভেন্টিলেটরে স্পার্ক হয়, এরপর সবাই ছোটাছুটি করতে শুরু করে। কিছু বুঝে উঠতে পারেননি অঙ্কুশ ও রচনা। জন্মের একদিন পরেই যমজ সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা অঙ্কুশ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন