করোনার কারণে দীর্ঘ দুবছর স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে পড়াশুনার অভ্যাসের ক্ষেত্রে এক বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে তা এক কথায় মেনে নিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষিকা থেকে অভিভাবকরাও। দীর্ঘ দিন বইয়ের থেকে দূরে থাকার কারণে তাদের মধ্যে অনেকেই আবার আগের জগতে ফিরতে সমস্যায় পড়ছেন।
সদ্য সমাপ্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখার দেখার সময় শিক্ষকরা দেখেছেন অনেকেই হুবহু প্রশ্নটাই খাতায় টুকে দিয়েছেন। অনেকে আবার নিজের নামের বানান টাও ঠিক করে লিখতে পারেননি। অনেক ছাত্র ছাত্রী শব্দ গঠনেও ভুল করেছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষকরা জানিয়েছেন অনেকেই আবার সাদা খাতা জমা দিয়েছে। এমন সংকটের কারণ নিয়ে কী জানাচ্ছেন শিক্ষক মহল? তাদের কথায় “বাড়িতে দীর্ঘদিন থাকার কারণে অভ্যাসে ঘাটতি পড়েছে পড়ুয়াদের”।
কিন্তু শুধুই কি তাই? নাকি এর পিছনে রয়েছে কোন মানসিক কারণ! কী বলছেন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা? ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের মনোবিজ্ঞানী গৌরা লোহানিও বলেছেন, “যে বাবা-মায়েরা প্রতিদিন লড়াই করছেন তাদের সন্তানের স্কুলে ফিরে যাওয়ার সহজ উপায় খুঁজে বের করতে। কিন্তু সমস্যাটা রয়েছে গভীরে। দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার ফলে অনেকেই স্কুলে ফিরলেও আগের মত সকলের সঙ্গে মিশতে পারছেন না। একাকীত্ব অনুভব করছে। এব্যাপারে তিনি বাবা মায়েদের কতগুলি টিপসের কথা উল্লেখ করেছেন”।
আরো পড়ুন: ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের পাশে বিজেপি বিধায়ক, রাজ্যকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন
তিনি বলেছেন, ‘স্কুল যাওয়ার সময় ইতিবাচক দিকগুলি সন্তানের সামনে তুলে ধরুন। তাকে স্কুল যেতে উৎসাহিত করুন। শুধু স্কুল আর বাড়ি নয়। বাচ্চাদের নিয়ে সিনেমা যান, ঘুরুন ফিরুন, আড্ডা মারুন, রেস্টুরেন্টে যান। সব কিছুই যে আবার আগের মতই স্বাভাবিক এটা তাকে বোঝানোটা দরকার। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বাড়িতে থাকলে স্মার্ট ফোনের বদলে আপনার সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় ব্যয় করুন। নতুন বন্ধু এবং স্কুলের অভিজ্ঞতা শুনুন সন্তানের কাছ থেকে। বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে তাদের সচেতন করুন। সেই সঙ্গে তার কথায় বাবা মায়ের উচিত সন্তান যাতে রোজ স্কুলে যায় সেদিকে নজর দেওয়া। প্রয়োজনে একজন মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে’।
ডাঃ নীতা কেজরিওয়াল বলেছেন, তাদের সন্তানদের ভয় এবং উদ্বেগ এড়াতে বাবা, মাকে প্রথমে তাদের নিজেদের ভয় দূর করতে হবে। শিশুরা মানিয়ে নিতে সময় নেবে এবং আমাদের অবশ্যই তাদের সেই আত্মবিশ্বাস এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য সময় দিতে হবে। তাদের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য মূল স্রোতে ফিরে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”