হোয়াটসঅ্যাপ দাবি করেছিল 'নজরদারির' বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আগেই জানানো হয়েছিল সংস্থার তরফে। সে সম্পর্কে অবশ্য বিশেষ কিছু জানায়নি মোদী সরকার। এবার, হোয়াটসঅ্যাপের নজরদারি নিয়ে বিস্তারিত জানতে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রককে তলবের দাবি জানালেন ১৭ আন্দোলনকারী। এই ১৭ জনেরই হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে পেগাসাস নজরদারি চলেছিল। সংসদের তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে চিঠি দিয়ে এই আবেদন করা হয়েছে। আজই হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি সংক্রান্ত বিষয়ে 'সিটিজেনস' ডাটা সুরক্ষা নিয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের কাছে বক্তব্য পেশ করা কথা ইলেকট্রনিক্স-ইনফর্মেশন টেকনলজি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও পারমাণবিক শক্তি মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের।
চলতি মাসের ৯ তারিখ ১৭ জন হোয়াটসঅ্য়াপ 'নজরদারিতে' আক্রান্ত আন্দোলনকারী স্ট্যান্ডিং কমিটিকে ওই চিঠি দেয়। সেখানেই উল্লেখ, সরকারি দফতরের প্রতিনিধিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটিকে প্রশ্নমালা দিতে চান তারা। সেখানে ৮টি প্রশ্ন রয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, কমিটিকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কোন সংস্থা বা কারা নজরদারির লক্ষ্য হিসাবে ভারতীয়দের বেছে দিয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে কী কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারও যুক্ত? সরকারি অর্থ খরচ হয়েছে কিনা? এই চিঠিতে আনন্দ তেলতুম্বে, বেলা ভাটিয়া, শালিনী গেরা, ভিভেক সুন্দরা, অলোক শুক্লা ও দেগ্রি প্রসাদ চৌহানের সাক্ষর রয়েছে।
আরও পড়ুন: পেগাসাস নজরদারি: ভারত সরকারকে খোলা চিঠি
গত ৩১শে অক্টোবরই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস খবর করে, সানফ্রান্সিকোর মার্কিন ফেডারেল কোর্টে হোয়াটসঅ্য়াপ 'নজরদারি' নিয়ে একটি মামলা হয়েছে। সংস্থা জানায় ২০১৯ সালের মে মাসের দু'সপ্তাহ ধরে ভারতের সাংবাদিক ও মানবাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের উপর পেগাসাস সফটওয়ারের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হয়েছে। পরে হোয়াটসঅ্যাপ জানায় ভারতের ১২১ জনের উপর এই নজরদারি চলেছিল।
চলতি মাসের শুরুতেই হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছিল, গত মে সাসেই সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভারত ও আন্তর্জাতিকস্তরে জানানো হয়েছিল। ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছানোরও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, সেই সময় হোয়াটসঅ্যাপ একবারেরও জন্যও জানায়নি ভারতীয়দের গোপনীয়তা খর্ব করা হবে। বিজ্ঞপ্তিটিও বিভ্রান্তিমূলক ছিল। সরকারি তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ পেগাসাস নজরদারির স্বীকার ভারতীয়রা। আদিবাসী ও দলিত আধিকার আন্দোলনের কর্মী দেগ্রি প্রসাদ চৌহান বলেন, 'কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পুরো বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। ছত্তিশগড় সরকার এক্ষেত্রে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলেছিল। তারপর অবশ্য বিষয়টি বেশি দূর এগোয়নি। কেন্দ্রের ভূমিকাও এতই রহস্যজনক যে তাতে ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিরপেক্ষ স্বাধীন তদন্ত হওয়া খুব প্রয়োজন। এর আগেও আমি একথা বলেছিলাম, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।'
আরও পড়ুন: পেগাসাস হানা: সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রকে ১২১ জন আক্রান্তের কথা বলেছিল হোয়াটসঅ্যাপ
পেগাসাস হানার স্বীকার আন্দোলনকারীরা ইতিমধ্যেই ‘Pegasus Targeted Persons’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী বেলা বাটিয়া বলেন, 'এর আগে রাজ্য বা কেন্দ্র কোনও সরকারই পৃথক বা সম্মিলিতভাবে আমাদের কাছে কিছু জানার চেষ্টা করেনি।' পেগাসাস হানার স্বীকার আইনজীবী শালিনী গেরা জানিয়েছেন, 'সরকারকে আমরা খোলা চিঠি দিয়েছি উত্তরের আশায়। কিন্তু উত্তর মেলেনি।' অলোক শুক্লার কথায়, 'কীভাবে এতবড় ঘটনা ঘটলো?আইটিি মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ বলছেন সরকারের কাছে কোনও তথ্য ছিল না। তাহলে কোন সংস্থা এই সফটওয়ার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে?'
আরএসএস ভাবধারার কে এন গোবিন্দচারিয়া ও আইনজীবী ভিরাগ গুপ্তা ১৪ই নভেম্বর তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনুরাগ ঠাকুরকে একটি চিঠি দেন বলে জানিয়েছেন। যেখানে, গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখার আবেদন করা হয়। কিন্তু, 'এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি' বলে দাবি তাদের।
Read the full story in English