কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পরাস্ত করতে করোনা ভ্যাকসিন পাওয়ার আশাতেই এখন দিন গুনছে দেশ। সেই প্রেক্ষাপটে ভারতের স্বাধীনতার দিন অর্থাৎ ১৫ অগাস্ট থেকেই কোভ্যাক্সিন পাওয়া যাবে দেশে, সেই 'প্রমিস'ই করল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)। তারা জানিয়েছে এই সময়ের মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শেষ করে সাধারণ মানুষের জন্য ১৫ অগাস্ট থেকেই পাওয়া যাবে এই ভ্যাকসিন।
আরও পড়ুন, ভারতে এই প্রথম! মানবদেহে কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমতি দিল কেন্দ্র
এদিকে আইসএমআর-এর দেওয়া এই তথ্যেকে "সম্পূর্ণ অবাস্তব এবং অসম্ভব" বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ভারত বায়োটেকের তৈরি ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য যে হাসপাতালগুলি নির্বাচন করা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠিতে আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর বলরাম ভার্গব বলেছেন যে "জনস্বাস্থ্য এবং জরুরি অবস্থা বিবেচনায করে এই টিকা চালু করা দ্রুত প্রয়োজন।"
সমস্ত স্টেকহোল্ডারকে ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরুর সঙ্গে সম্পর্কিত যা যা অনুমোদন প্রয়োজন তা দ্রুত করার পরামর্শও দেন।
আরও পড়ুন, করোনা আক্রান্ত দুর্বল দেহে সফলভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন
যদিও আইসিএমআর-এর এই 'প্রমিস'কে মানতে নারাজ আইআইএসইআর (পুনে)-এর ইমিউনোলজিস্ট এবং প্রফেসর বিনীতা ভাল। তাঁর মতে, যে ভ্যাকসিন এখনও ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত নয়। তা একমাসের মধ্যে কীভাবে তৈরি হতে পারে তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। বিনীতা বলেন, "অগাস্টের ১৫ তারিখ যে ডেডলাইন বলা হচ্ছে তা অবাস্তব টার্গেট। এখনও এই সময়ের মধ্যে তৈরি হতে পারবে সেরকম কোনও ভ্যাকসিন নেই। অনেকগুলি প্রক্রিয়া জড়িত আছে। জরুরি অবস্থা থাকলেও অগাস্ট মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি করা কখনই সম্ভব নয়।"
বায়োএথিক্স-এ কর্মরত অনন্ত ভান প্রশ্ন তোলেন আইসিএমআর-এর চিঠি নিয়ে। এমনকী কিছুটা অবাক হয়ে অনন্ত বলেন, "এখনও যে ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়ালে রয়েছে সেটিকে কীভাবে ১৫ অগাস্টের মধ্যে তৈরি করে বাজারে নিয়ে আসা সম্ভব? একটা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শেষ হতেই কম করে এক মাস সময় লাগে। সেই প্রেক্ষিতে কীভাবে আইসিএমআর এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে এমন প্রাক-সিদ্ধান্ত নিতে পারছে সেটাই আশ্চর্য।"
বিশেষজ্ঞমহলের মত ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শেষ হতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। কারণ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর কীভাবে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা সময়সাপেক্ষ। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরও তথ্য বিশ্লেষণ এবং তা যাচাই করে দেখার মতো বেশ কিছু পদ্ধতি থেকে যায়। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের কাছে ভ্যাকসিনটি নিয়ে পৌঁছনোর আগে তা একটি জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে, এমনটাই নিয়ম।
তবে আইসিএমআর-এর বিজ্ঞানী লোকেশ শর্মা বলেন, "আমরা কখনই দিনটিকে ডেডলাইন হিসেবে দেখছি না। বরং এই দিনটিকে লক্ষ্য রেখেই ইনস্টিটিউটগুলির সঙ্গে কাজ শুরু করে চাইছি। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করব এবং সাফল্যর দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের প্রত্যেকের সেটাই চাহিদা যে ট্রায়ালের মধ্য দিয়েই আমরা ভ্যাকসিন তৈরির সব কাজ শেষ করতে পারব। তবে ওষুধ একদম তৈরি। তাই আমরা সেটার ট্রায়াল করব। আর বিষয়টি ডিজির তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। তাই এই চিঠি।"
কিন্তু ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে ক্লিনিকাল ট্রায়াল রেজিস্ট্রিতে যে সময় রয়েছে তার সঙ্গে আইসিএমআর-এর নির্ধারিত সময় মিলছে না। চিঠিতে বলা হয়েছে পাঁচ সপ্তাহের কিছু সময় বেশি বেশ লাগতে পারে। এদিকে ক্লিনিকাল ট্রায়াল রেজিস্ট্রেশনে বলা হয়েছে এক বছর তিন মাস সময় লাগে একটা ট্রায়াল সম্পূর্ণ হতে। এই দ্বিমত নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী একটি ইনস্টিটটিউট বলে, "এটি জরুরিকালীন অবস্থার মধ্যে করতে হবে। আমরা তাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।"
দুটি পর্যায়ে এই ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা হয়। প্রথম দফায় যে ট্রায়াল করা হবে সেখানে তিনটি গ্রুপ থাকবে এবং কমপক্ষে ২৮ দিন সময় লাগবে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে সময় লাগবে ২ সপ্তাহ। সেই মোতাবেক ১৫ অগাস্টকেই বেছে নেওয়া হয়েছে এই ভ্যাকসিন প্রকাশের দিন হিসেবে। যদিও রেজিস্ট্রেশনে দেখা গিয়েছে যে ১২টির মধ্যে ৭টি এথিক্স কমিটি এই ট্রায়ালের অনুমতি দেয়নি। ১১২৫ জনের উপর ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা হবে বলে খবর।
কীভাবে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে?
প্রতিটি গ্রুপে ১২৫ জন করে রাখা হবে। যাদের প্রথম সপ্তাহে একটি এবং তৃতীয় সপ্তাহে একটি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ডেটা সেফটি মনিটারিং বোর্ড তাঁদের শারীরিক অবস্থার উপর লক্ষ্য রাখবে এবং সেখান থেকে তথ্য জমা করবে। পরবর্তীতে তাঁদের আরও বেশি ডোজের প্রয়োজন হবে কি না সেই দিকটিও নজরে রাখা হবে। গ্রুপ ২ এবং গ্রুপ ৩-কেও একই ভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
রেজিস্ট্রেশনে বলা হয়েছে, "এই তিন গ্রুপে কীভাবে সুরক্ষা এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে সেই মতো একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট তৈরি হবে। যা পাঠান হবে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়াকে। কীভাবে ক্লিনিকালই এটিকে আরও উন্নত করে তোলা যায় সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করবে এই বোর্ড। এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে দিয়ে একটি সুরক্ষিত,সহনশীল এবং ইমিউনোজেনিক ইন্ট্রামাসকুলার ভ্যাকসিন তৈরি করার চেষ্টা করে যাওয়া হবে।"
ক্লিনিকাল ট্রায়ালের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৫০ জন বিভিন্ন বয়সের সুস্বাস্থ্যবিশিষ্ট ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা হবে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন