কেন্দ্রীয় দল আসাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র-রাজ্য তরজা তুঙ্গে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই পদক্ষেপকে, 'একতরফা' ও 'যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত' বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনের আগেই রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী’, এই অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের বেশকিছু জায়গায় লকডাউন মানা হচ্ছে না। যা জনস্বাস্থ বিরোধী বলে দাবি করে কেন্দ্র। সপ্তাহান্তে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে ২২৪ জন করোনা আক্রান্ত। কিন্তু, কেন্দ্রীয় দল বাংলা বাদে অন্যান্য রাজ্যের যে চার জেলায় গিয়েছেন, সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যায় ৩,৭৩২ জন।
এ রাজ্যে কলকাতায় করোনা পজেটিভের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত কলকাতায় ১০৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণের নিরিখে কলকাতার সঙ্গে মুম্বইয়ের তুলনা করলে বিস্তর ফারাক। মুম্বইয়ে সংক্রমণের হার ২,০৭০। যা কলকাতায় তুলনায় ২০ গুণ বেশি। এ শহরের চেয়ে ইন্দোর (৭০৭), পুনেতে (৪৮৫) করোনা পজেটিভের হার যথাক্রমে সাত ও চার গুণ বেশি। উল্লেখ্য, মুম্বই, জয়পুর, পুনে, ইন্দোর কার্যত করোনা বিধ্বস্ত।
তাহলে কেন এইসব শহরে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হল না? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল প্রেরণকে 'প্রচোলিত রীতির বিরুদ্ধ' কাজ বলে মোদীকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- মে’র শেষে করোনার কামড় বাড়বে, অনুমান কেন্দ্রের
টুইটে মমতা জানান, 'করোনা পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকারের থেকে সবরকম সহযোগিতা ও পরামর্শকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু, কীসের ভিত্তিতে ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে কেন্দ্রীয় দল পাঠাছে কেন্দ্র সরকার, তা স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কাছে আর্জি রাখছি, এ ব্য়াপারে তা জানান। তা না হলে, কোনও উপযুক্ত কারণ ছাড়া এই পদক্ষেপের সঙ্গে এগোতে পারবে না রাজ্য়। কারণ এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য়পূর্ণ নয়'
পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হবে যে, জলপাইগুড়ি, দার্জিলংয়ের চেয়ে এ রাজ্যের অন্য কয়েকটি জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এমনকী কলকাতায় চেয়ে সংক্রমণের মাত্রা বেশি আমেদাবাদ, হায়দ্রাবাদ, থানে ভূপাল, আগ্রাতে। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পরিসংখ্য়ান লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিলের প্রথমে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে যথাক্রমে ৩ এবং ৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর আর কোনও সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। মোদীকে চিঠিতে একই তথ্য তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যে করোনা পজেটিভ ও মৃত্যুর সংখ্যা ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ রয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুসারে, রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ৩৩৯ ও মৃত ৬৬ জন। রাজ্য় সরকারের দেওয়া হিসাব বলছে, বাংলায় করোনা আক্রান্ত ৩১৮ ও মৃত ১২ জন। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মতে পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির গড় হার জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। এর আগে করোনা নিয়ে 'রাজীনীতির' অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিশানায় ছিল বিজেপি। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও বৈঠকেও বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের দলের নেতৃত্ব ও রাজ্যপালকে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ না করার জন্য মোদীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন মমতা।
কেন্দ্রের অভিযোগ ছিল, নিয়ম বিরুদ্ধভাবে করোনায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে মমতা সরকার। নমুনা পরীক্ষার হারও বেশ কম।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন