Advertisment

বন্ধু খোয়াবে ভারত, সিএএ-র জন্য সতর্ক করছে বহির্বিশ্ব

ভারতে নিযুক্ত জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশের এক রাষ্ট্রদূতের কথায়, "আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত থাকলেও ভারত সরকার এখনও একবারও সিএএ নিয়ে আমাদের জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেনি।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী

দেশজুড়ে প্রতিবাদের আবহ। সিএএ বিরোধিতায় সোচ্চার দেশের বিরোধী সব রাজনৈতিক দল। পথে নেমে আন্দোলন করছেন পড়ুয়া থেকে সমাজের বিশিষ্টরা। এতেই উদ্বিগ্ন ভারতে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা। অবশ্য, প্রকাশ্যে বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে এদেশের অভ্যরীণ বিষয় বলে জানিয়েছেন। কিন্তু, নয়া আইন নিয়ে বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়লেও মোদী সরকার নীরবতা বজায় রেখেছে। এতেই বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্বেগ ক্রমশ আশঙ্কায় পরিণত হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে ভারতের বেশ কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্রও।

Advertisment

ভারতে নিযুক্ত ১৬ টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সঙ্গে সিএএ বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সেই আলোচনাতেই নয়া আইন ও প্রতিবাদ আন্দোলন প্রসঙ্গে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তারা।

আরও পড়ুন: দিল্লির ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’কে শাস্তি দেওয়ার সময় এসেছে: অমিত শাহ

ভারত সরকার এর আগে পুলওয়ামা, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, অযোধ্যা রায় নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল। কিন্তু, সিএএ বা তার প্রেক্ষিতে ঘটে চলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনও কথা বলেনি। এমনকী দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ের আলোচনাতেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। কেন এই নীরবতা? বিপদের আঁচ বুঝেই কি সরকারের এই অবস্থান? প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে একাধিক বিদেশি রাষ্ট্র।

ভারতে নিযুক্ত জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশের এক রাষ্ট্রদূতের কথায়, "৩৭০ থেকে শুরু করে অযোধ্যা ইস্যুকে কেন্দ্রীয় সরকার এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত থাকলেও ভারত সরকার এখনও একবারও সিএএ নিয়ে আমাদের কিছু জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেনি। এই আইনে তিনটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উল্লেখ রয়েছে - বিষয়টি তাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।"

জি-২০-পি-৫ গোষ্ঠীভুক্ত এক দেশের কূটনীতিকের কথায়, "ভারত পুরো বিষয়টিকেই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে বিবেচনা করতে পারে। মনে করতে পারে এর ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ব্যাহত হবে। তাই এই নীরবতা।"

সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল (ক্যাব) আইনে পরিণত হওয়ার পরে বিক্ষোভ দানা বাঁধে। যা মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে করছিলেন বিদেশি কূটনীতিকরা। কিন্তু আন্দোলনের তীব্রতা প্রমাণ করেছে, দেশের বহু বাসিন্দাই এই আইনের বিরোধী। এটি স্রেফ সম্প্রদায়গত আন্দোলন নয়। এরপর জাপানি প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশী বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল করার বিষয়টি তাঁদের এই উপলব্ধিকে আরও পোক্ত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের নানা সভায় বলেছেন, সিএএ এদেশের নাগরিকদের জন্য নয়। মুসলমানদেরও ভয়ের কোনও কারন নেই। কিন্তু এতে আস্বস্ত হতে পারছে না অন্যান্য রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ভারতে চলা সিএএ বিক্ষোভের কথা প্রকাশ পাচ্ছে। যা দেখে বিভিন্ন রাষ্ট্রের হেডকোয়ার্টার থেকে ভারতের সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের কাছে সম্পূর্ণ তথ্য জানানোর কথা বলা হচ্ছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে যে, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

কিন্তু কেন্দ্র নীরব থাকায় রাষ্ট্রদূতরা কিছু জানাতে পারছেন না বলে দাবি করলেন এক কূটনীতিবিদ। এমনকী ভারতের বন্ধু রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের মধ্যেও মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ ঘিরে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

সিএএ নিয়ে সরকারের নীরবতা ভারতের অবস্থানকে ক্রমশ লঘু করছে বলে মত এদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গোষ্ঠীভুক্ত এক দেশের কূটনীতিকের। এর প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করছেন অনেকে। "দেশের বৃহত্তর গণতন্ত্রে প্রতিবাদের স্থান নেই। যা ভাল বিজ্ঞাপন নয়," মনে করেন জি-২০ গোষ্ঠাভুক্ত দেশের এক রাষ্ট্রদূত। উল্লেখ্য, নয়া আইনের প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি এক জার্মান পড়ুয়া ও নরওয়েবাসী এক বৃদ্ধাকে ভারত ছাড়তে হয়েছে।

আরও পড়ুন: এনআরসি + সিএএ = নাগরিকত্ব হলে আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে?

গত তিন বছর ধরে ভারতে কর্মরত এক বিদেশি কূটনীতিকের কথায়, "মোদী সরকারের ফিল গুড বিষয়টি ক্রমশ বিলুপ্তপ্রায়।"

তবে, মালয়েশিয়া বা বাংলাদেশের সরকারি স্তর থেকে সিএএ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে মুখ খোলা হলে প্রতিবাদ জানিয়েছে সাউথ ব্লক। নয়া আইনকে ভারতের 'অভ্যন্তরীণ' বিষয় বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।

Read the full story in English

PM Narendra Modi caa
Advertisment