জ্বলছে উত্তর পূর্ব দিল্লি। পরতে পরতে হিংসার চিহ্ন। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাঠি, রড হাতে জটলা। রাস্তার দু'ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে দগ্ধ গাড়ি। অচেনা কাউকে দেখলেই জটলার মধ্যে থেকে ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে অজশ্র প্রশ্ন। দিল্লি পরিস্থিতির ছবি তুলে ধরতে গিয়েই বেশ কয়েকবার হুমকির সামনে পড়তে হল 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' এর সাংবাদিক শিবনারায়ণ রাজপুরোহিতকে। মোবাইল, নোট বই ছিনিয়ে নেওয়া হল। চড়া গলায় শুনতে হল 'হিন্দু তো? বেঁচে গিয়েছো'।
কারোয়াল নগর। হিংসায় পুড়েছে এই অঞ্চলের এর বেকারি। দোকানের বাইরে পড়ে রয়েছে চেয়ার, টেবিল সহ নানা সামগ্রী। রাত প্রায় ১টা। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বেকারি মালিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন সাংবাদিক শিবনারায়ণ রাজপুরোহিত। সেই সময়ই একদল উন্মত্ত জনতা রাজপুরোহিতকে ঘিরে ফেলে। বছর ৪০-এর এক ব্যক্তি হঠাই প্রশ্ন করেন 'কে আপনি?' উত্তরদাতা নিজেকে সাংবাদিক হিসাবে পরিচয় দেন। জবাবে সাংবাদিককে তাঁর নোটবুক দেওয়ার জন্য বলা হয়। নোটবুক হাতে পেয়েই চলে খতিয়ে দেখার কাজ। সেখানে সন্দেহজনক কিছু রয়েছে কিনা তা দেখা হয়। কিন্তু কয়েকটি ফোন নম্বর ও গুটি কয়েক পর্যবেক্ষণের কথা ছাড়া নোটবুকে কিছুই মেলেনি। তারপরই চড়া সুরে বলা হয়, 'আপনি এখান থেকে কিছু রিপোর্ট করতে পারবেন না।' নোটবুকটি ফেরৎ না দিয়ে তা সোজা আগুনে ফেলে দেওয়া হয়।
পূর্ব দিল্লিতে এখন এই ধরনের হুমকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে। একটু এগোতেই আবারও রাজপুরোহিতকে ঘিরে ধরে জনা ৫০-এর একটি দল। দেখতে চাওয়া হয় মোবাইল ফোন। আসলে তারা মনে করছিল যে মোবাইলে হিংসার ছবি তোলা হয়েছে। হিংসার কোনও ছবি দেখতে না পেলেও মোবাইলের বাকি সব ছবিও বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপরই সাংবাদিক রাজপুরোহিতকে জিজ্ঞাসা করা হয়, 'কেন আপনি এখানে এসেছেন? আপনি কী জেএনইউ-র থেকে এসেছেন?' এরপর সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় সাংবাদিককে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে মৃত বেড়ে ১৩, জারি ‘শুট অ্যাট সাইট’
এলাকা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রায় ২০০ মিটার দিরে রাখা বাইকের দিকে সবে এগোতে শুরু করেছেন 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' এর সাংবাদিক শিবনারায়ণ রাজপুরোহিত। ফের একদল লাঠিধারীর সামনে পড়তে হয় তাঁকে। কেউ কেউ বলতে থাকে মোবাইলে ছবি তোলা হয়েছে। মুখ ঢাকা এক যুবক সাংবাদিককে তাঁর মোবাইল দিয়ে দেওয়ার জন্য বলে। রাজপুরোহিত তখন বলেন, 'মোবাইল থেকে সব ডিলিট করা হয়ে গিয়েছে।' যা বলতেই চড়া সুরে ফের বলা হয়, 'ফোন দে'। এরপরই যুবকটি সাংবাদিকের পিছনের দিকে গিয়ে দু'বার তাঁর পায়ে রডের বাড়ি মারে। সাংবাদিক রাজপুরোহিতের কথায়, 'তখন বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বলা হয় আমার কাছে কোনটা বেশি জরুরী, জীবন নাকি মোবাইল। আমি মোবাইলটা বার করে ওদের হাতে দিতেই চিৎকার করতে করতে ওরা চলে যায়'।
এখানেই শেষ নয়। এরপরও আরও একদলের মুখোমুখি হতে হয় সাংবাদিক রাজপুরোহিতকে। তিনি বলেন, 'বছর ৫০-র এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে আমার চশমা খুলে নিল। এরপরই দু'বার থাপ্পর মারলো। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা থেকে রিপোর্টিংকরা জন্য এই পরিণতি। এরপরও ওরা আমার প্রেস কার্ড দেখল। যা দেখে বলল, হুম- তুমি হিন্দু? বেঁচে গেলে। তবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়নি। আমি প্রকৃত হিন্দু কিনা তার আরও প্রমাণ দাবি করা হয়। বলতে বলা হয়- জয় শ্রীরাম। তবে আমি নীরবই ছিলাম।'
এরপরই সাংবাদিককে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু, জটলার মধ্যে থেকেই কেউ একজন বলে, 'আরও একটি ভিড় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।' সাংবাদিক রাজপুরোহিতের ব্যাখ্যায়, 'আমি বাইকে চাপতেই বলা হয় তাড়াতাড়ি পালাও। কোনও মতে সেখান থেকে প্রাণে বেঁচে বেরিয়ে আসি। '
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন