উপত্যকায় হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে কার্যত ব্যর্থ প্রশাসন, গত কয়েক মাসে ভূস্বর্গে সংখ্যালঘুদের উপর লাগাতার জঙ্গি আক্রমণ উঠেছে এমনই অভিযোগ। এবার প্রশাসনের আরও একটি ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে কাশ্মীরের হিন্দু সমাজ।
কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত হিন্দু সরকারি কর্মীদের বদলির নির্দেশ ফলাও করে ওয়েবসাইটে পোস্ট একাধিক সরকারি দফতরের। কর্মীদের নাম ধরে ধরে তাঁদের বদলির নতুন জায়গারও উল্লেখ ওয়েবসাইটে। কোন হিন্দু সরকারি কর্মীকে উপত্যকার কোন প্রান্তে বদলি করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ এখন পাবলিক ডোমেনে। এই বিষয়টি নিয়েই উদ্বেগ চরমে উঠেছে কাশ্মীরের হিন্দু সরকারি কর্মীদের। খোদ উপত্যকার বিজেপি নেতারাই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সরকারি কর্তাদের এই কাজে।
অশান্ত উপত্যকা। বেছে-বেছে কাশ্মীরের হিন্দু নাগরিকদের টার্গট করে চলছে জঙ্গিরা। নিরাপত্তার দাবিতে পথে নেমে বিক্ষোভ-আন্দোলনে সামিল কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। গত কয়েক মাসে উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি হামলার বলি হয়েছেন নিরীহ বহু মানুষ। কখনও স্কুলে ঢুকে কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের শিক্ষিকাকে এলোপাথাড়ি গুলিতে ঝাঁঝরা করেছে জঙ্গিরা। কখনও আবার ভরা বাজারে কাশ্মীরি হিন্দুর দোকানে ঢুকে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। মোটের উপর উপত্যকায় মুখে যতই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিক কেন্দ্র, আদতে কাজের কাজ যে কিছুই হচ্ছে না, গত কয়েকমাসের হত্যালীলায় তা স্পষ্ট।
এবার উপত্যকায় সরকারি দফতরগুলিতে কর্মরত হিন্দুদের তুলনামূলক 'নিরাপদ জায়গা'গুলিতে পোস্টিং দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। কাশ্মীর প্রশাসনের এই উদ্যোগেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সরকারি কর্মচারীরা। যেভাবে তাঁদের নাম ধরে ধরে বদলির জায়গার উল্লেখ সরকারি দফতরের ওয়েবসাইটে গুলিতে রয়েছে তাতে বিপদ আরও বাড়ার আশঙ্কা তাঁদের।
আরও পড়ুন- তৃণমূলে সৎ নেতা খুঁজে পেলেন তথাগত, জামাইষষ্ঠীর সকালে চর্চায় BJP নেতার টুইট
কর্মীদের একটি বড় অংশের আপত্তির কথা জেনে ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের স্কুল শিক্ষা দফতর তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে সরকারি নির্দেশনামা সরিয়ে নিয়েছে। তবে গ্রামীণ উন্নয়ন দফতর ওয়েবসাইটে পোস্ট জারি রেখেছে। কাশ্মীরের গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগের অধিকর্তা ইমাম দিন সানডে এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশগুলি এখনও বিভাগের ওয়েবসাইটে রয়েছে বলে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, "আমাদের ওয়েবসাইটে অর্ডার পোস্ট করা হয়। প্রথমে আমাকে এটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে।"
গত কয়েকদিনে জম্মু কাশ্মীরের প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজের অধীনে নিযুক্ত শতাধিক কর্মীকে শ্রীনগর এবং উপত্যকার অন্যান্য জেলা সদরগুলিতে তুলনামূলকভাবে "নিরাপদ স্থানে" স্থানান্তর করেছে। দ্রুত এই কর্মীদের বদলির জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল প্রশাসন। কাশ্মীর প্রশাসনের নির্দেশে কার্যত চাপের মুখে শিক্ষা দফতর এবং গ্রামীণ উন্নয়ন দফতর ওয়েবসাইটে বদলি-নির্দেশ আপলোড করেছে।
আরও পড়ুন- Singer kk dies: KK-র মৃত্যু, অনেক প্রশ্ন, নড়ে গেল বঙ্গ সংস্কৃতি, তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি
তবে প্রকাশ্যে এই বদলি-নির্দেশের ফলে উল্টে তাঁদের জীবন আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল বলেই মনে করছেন কাশ্মীরা পণ্ডিতরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রশাসনের এই উদ্যোগের জেরে তাঁরা জঙ্গিদের আরও সহজ টার্গেট হয়ে গেলেন। কাশ্মীরি পণ্ডিত কর্মচারী বিকাশ হ্যাংলু বলেন, "বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে আমরা বাস করছি তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। গতকাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কর্মীদের নাম এবং পোস্টিংয়ের স্থান-সহ সরকারি অর্ডারগুলি দেখছি। এটি আমাদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।''
কাশ্মীরের বিজেপি নেতারাও এভাবে সরকারি বদলির নির্দেশ পাবলিক ডোমেনে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিতে ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছেন। এভাবে অনলাইনে বদলির নির্দেশ পোস্ট করার বিষয়টিকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড়সড় বিপদ বলে মনে করছেন তাঁরা। এর জন্য দায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। জম্মু কাশ্মীরের বিজেপির মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুর বলেন, "সামাজিক প্ল্যাটফর্মে তালিকাটি প্রকাশ করা একটি বড়সড় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের সামিল। জঙ্গিদের এখন স্পষ্ট ধারণা আছে, কাকে কোথায় পোস্ট করা হয়েছে।"