৭ বছর আগে আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল পদে বসেছিলেন। সেটা তাঁর জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। সাত বছর পর আবার তাঁর রাজনৈতিক জীবন নয়া মোড়ে উপস্থিত। দ্রৌপদী মুর্মুই এখন গোটা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
মঙ্গলবার ৬৪ বছরের বিজেপি নেত্রী, দুবারের বিধায়ক এবং ওড়িশার প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে শাসকজোট এনডিএ। ময়ুরভঞ্জ জেলার রাইরংপুরের দুবারের বিধায়ক পরের মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়বেন। জিতলে তিনিই হবেন দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি।
কেমন ব্যক্তিত্ব দ্রৌপদী? ঝাড়খণ্ডের সরকারি আধিকারিক থেকে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অত্যন্ত ধীর-স্থির এবং ভারসাম্য বজায় রাখেন তিনি। অত্যন্ত মাটির মানুষ এবং অবশ্যই কাছের মানুষ দ্রৌপদী। যে কোনও দরকারে তাঁকে পাওয়া যায়। যখন সরকারের প্রতি আধিবাসীরা বিমুখ হয়েছিলেন তখন তাঁদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে সঠিক দিশা দেখান দ্রৌপদী।
আরও পড়ুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পাশা খেলায় হার ‘নিশ্চিৎ’, তবুও কেন প্রার্থী দিল তৃণমূল?
আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য রতন তিরকে বলেছেন, "আমি যখন সদস্য ছিলাম সেই সময় পাথালগাড়ি আন্দোলন হয়। ভাড়াটে আইনে পরিবর্তন আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তখন আমরা রাজ্যপালের কাছে যাই যাতে তিনি আদিবাসী নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের আস্থা ফিরিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠেন দ্রৌপদী। সরকারের সঙ্গে মিলে তিনি তখন ড্যামেজ কন্ট্রোল করেন।"
তিরকের কথায়, "দ্রৌপদী মুর্মু আধিকারিকদের বলেন, একটা সময়ে একটা বিষয় নিয়ে আসবেন। তাহলে আলোচনায় সুবিধা হয়।" ঝাড়খণ্ড বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ অশোক বরাইক, যিনি ঘনঘন বিজেপি সরকারের জমানায় রাজভবনে যাতায়াত করতেন, বলেছেন, "এটা প্রথমবার যখন আদিবাসীরা সরাসরি রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। আমার বিশ্বাস, তিনি নিশ্চয়ই দেশের আদিবাসী সমাজের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা নেবেন।"
আরও পড়ুন আদিবাসী মুখেই আস্থা পদ্মের, NDA-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মূর্মু
সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দ্রৌপদী মুর্মু ওড়িশার রাজনীতিতে পা রাখেন ১৯৯৭ সালে। রাইরংপুর নগর পঞ্চায়েতে কাউন্সিলর পদে জেতেন। তার পর রাজ্য বিজেপির তফসিলি মোর্চার সভানেত্রী হন। ২০০০ সালে বিজেপি-বিজেডি জোট সরকারের সময় তিনি বাণিজ্য এবং পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তার পর মৎস্য এবং প্রাণিবিকাশ দফতরের দায়িত্বও পান।
২০১৫ সালে তিনি ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল মনোনীত হন। ২০২১ পর্যন্ত ওই পদ অলঙ্কৃত করেন। ব্যক্তিগত জীবনে মুর্মু বহু ট্রাজেজি দেখেছেন। স্বামী শ্যামচরণ মুর্মু এবং দুই ছেলেকে হারিয়েছেন। এক মেয়ে রয়েছে। তিনি বিবাহিত। বিএ ডিগ্রিধারী মুর্মু ওড়িশা সরকারের সেচ ও বিদ্যু দফতরে জুনিয়র সহায়ক পদে চাকরি করেছেন। রাইরংপুরে শিক্ষিকার চাকরিও করেছেন তিনি।