“যতবার আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি, ততবার আমাদের বলা আগামী সপ্তাহেই আপনার দেশে ফিরতে পারবেন। দেখতে দেখতে আমি এখানে এক মাস কাটিয়ে ফেলেছি, এবং আমার মতো আরও মহিলারা আছেন যারা ইতিমধ্যে ৬ থেকে ৮ মাস দেশে ফিরতে পারেননি। আমরা সবাই শুধু বাড়ি যেতে চাই,”। একবার পা দিতে চাই দেশের মাটিতে। বলেছেন আমেনা বেগম।
বর্তমানে ওমানে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে সরকার পরিচালিত একটি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা ৮৫ জন মহিলার মধ্যে একজন যারা দেশে ফেরার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছেন না। এমনকি তিনি ওমানের রাজধানী শহর মাস্কাট থেকে এসওএস মেসেজেও তুলে ধরেছেন নিজেদের যন্ত্রণার কথা। আমেনা বেগম WhatsApp ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বলেন, “এখানে কী যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছি তা দেশে থেকে পরিবারের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়”।
অবৈধ এজেন্টদের ফাঁদে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে ভারতীয় এমন মহিলার সংখ্যা নেহাত কম নয়। গৃহকর্মী অথবা রান্নার কাজ করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তাদের সেই সব দেশে পাঠানো হয়। আর একবার সেদেশে পা দিলেন চূড়ান্ত নরক যন্ত্রণা অপেক্ষা করে রয়েছে তাদের জন্য। হায়দ্রাবাদের এক সমাজ কর্মী সৈয়দ আলি আসগর, নিয়মিত মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এমনকী তাদের এই দুরবস্থার কথা জানিয়ে দিল্লিতে ওমান দূতাবাসে একাধিকবার মেলও করেন কিন্তু কন উত্তর পাননি।
অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব, কেরালা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র থেকে একাধিক মহিলারা কাজের সন্ধানে হামেশাই এই ভুয়ো এজেন্টদের পাল্লায় পড়েন। ওমানের সময় অনুসারে দুপুর ১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত মোবাইল ব্যবহারের সুবিধা পান তারা।
আমেনা বেগমের কথায়, “সংসারে মুখে হাসি ফোটাতে আমরা সবাই কঠোর পরিশ্রম করার জন্য এবং টাকা উপার্জনের জন্য এদেশে এসেছি। আমার বড় মেয়ের বয়স ১৭ এবং আমার স্বামী হার্টের রোগী। ভাল সংসারে মেয়ের বিয়ে দিতে আমার এই টাকা দরকার। আমার দুই মেয়েই সম্প্রতি অসুস্থ ছিল এবং আমি শুধু ফিরে যেতে চাই। তারা জানে না আমি এখানে আটকে আছি,”।
আসগর উল্লেখ করেন যে সব মহিলাদের বৈধ কাগজপত্র বা ভিসা নেই। “তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং অন্যান্য আরব দেশে ভ্রমণ করেছেন । সেখানে ওমানের স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ দেখাতে হচ্ছে। বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই পাসপোর্ট গুলি এজেন্টরা বাজেয়াপ্ত করছে”। বেগম আরও বলেন “আমাদের মত প্রত্যেকে এদেশে নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার। আমাদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করান, টাকা না দেওয়া। এসব রোজকারর রুটিন”।
আরও পড়ুন: < ‘তিরঙ্গা যাত্রা’য় পাকিস্তানের নামে স্লোগান ছাত্রদের, চাঞ্চল্যকর ঘটনায় শোরগোল >
আসগর বলেছেন যে নয়াদিল্লিতে ওমান দূতাবাসে তার ইমেলগুলি এই মহিলাদের দেশে ফেরানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে পাঠানো হয়েছিল । ইমেলে বলা হয়েছিল “মহিলাদের বেশির ভাগই নিরক্ষর এবং তাদের কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। তারা দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব। দয়া করে তাদের সকলকে দেশে ফেরান হোক”। যদিও আসগর দাবি করেছেন মেলের কোন উত্তর তিনি পাননি।
আমিনা বেগমের কথায়, “আমরা শুধু আশা করি এবং প্রার্থনা করি যে আমাদের অবিলম্বে ফেরত পাঠানো হবে,”
রেড্ডি, যিনি তেলেঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির এনআরআই সেলের আহ্বায়ক বলেছেন যে আইনি জটিলতা সহ প্রক্রিয়াটি দ্রুত করা উচিত। “আমরা ভারতীয় দূতাবাস, ভারত সরকার বা ওমান সরকারকে দোষ দিই না তবে আইনি সমস্যাগুলি শীঘ্রই সমাধান করা উচিত” ।