দেশে সাম্প্রতিককালে শুরু হওয়া মূর্তি গড়ার দৌড়ে এবার সামিল হলো কর্ণাটক। রাজধানী বেঙ্গালুরু থেকে আন্দাজ ৯০ কিমি দূরে মান্ডিয়া জেলার কৃষ্ণ রাজা সাগর জলাধারে কাবেরী মাতার ১২৫ ফুট উচ্চতার একটি মূর্তি গড়ার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে বলে খবর। এই মূর্তি স্থাপিত হবে ৪০০ একর জমির ওপর, তৈরি করার আনুমানিক খরচ ১২০০ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, সপ্তাহখানেক আগে গুজরাটের ভদোদরা শহরের কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের উদ্দেশ্যে নিবেদিত স্ট্যাচু অফ ইউনিটির, যা কিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের উচ্চতম মূর্তি।
কাবেরী নদীর উৎপত্তি পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত পাহাড়ে, কর্ণাটকের কোড়াগু অঞ্চলে। গোদাবরী এবং কৃষ্ণার পর দক্ষিণ ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম নদী এটি, এবং কর্ণাটক, তামিল নাড়ু ও কেরালা, তিন রাজ্যের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত সেই কারণেই কাবেরীর ধর্মীয় গুরুত্বও প্রবল, এবং বহু মানুষ দেবীজ্ঞানে পুজো করেন এই নদীকে।
আরও পড়ুন: কেন গান্ধীজির উঁচু মূর্তি বানালো না বিজেপি, প্রশ্ন শশী থারুরের
মূর্তি তৈরির প্রকল্প আগামী দুবছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং মূর্তি ছাড়াও তৈরি করা হবে একটি মিউজিয়াম, জলাধারের শোভা দেখার জন্য দুটি কাচের ঘর, একটি ব্যান্ড স্ট্যান্ড, একটি ইনডোর স্টেডিয়াম, এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপত্যের প্রতিরূপ।
গত মঙ্গলবার কর্ণাটকের জলসম্পদ মন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এবং পর্যটন মন্ত্রী সারা মহেশ একাধিক আধিকারিকের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেন, যেখানে এই প্রকল্পের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে শিবকুমার জানান, জলাধারের পাশে একটি নতুন লেক তৈরি করা হবে, যার ওপর মূর্তি এবং তার সংশ্লিষ্ট ভবন ইত্যাদি গড়ে উঠবে।
"মিউজিয়াম কমপ্লেক্সের ওপর বসানো হবে মূর্তি, দুই কাচের ঘরের মাঝখানে। কৃষ্ণ রাজা সাগর জলাধারের চেয়ে উঁচু হবে মূর্তিটি। প্রকল্পের জন্য জমি প্রদান করা ছাড়া সরকার এতে আর কোনরকম বিনিয়োগ করবে না," এএনআই-কে বলেন শিবকুমার। "এটা ঠিক মূর্তি নয়, ছোটোখাটো শহর বলতে পারেন। জমি তো সরকারের কাছে রয়েছেই, এবং আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছে অর্থের জন্য আবেদন জানাবো। কোনও সরকারি অর্থ এখানে ব্যবহৃত হবে না। এটি মূলত পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ হিসেবেই তৈরি করা হবে।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কাবেরী নদীর আশেপাশে বেআইনি বালির খনন কাজের বিরুদ্ধে সরকার কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক পরিবেশ কর্মী, যাঁদের বক্তব্য, এই খননের ফলে গত পঞ্চাশ বছরে নদীর আয়তন চল্লিশ শতাংশ কমে গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে মূর্তি তৈরির প্রস্তাব কৌতূহলোদ্দীপক বটে।
আরও উল্লেখ্য, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সম্প্রতি অযোধ্যায় সরযূ নদীর তীরে একটি ১৫১ ফুট উঁচু রামের মূর্তি স্থাপনের প্রস্তাব করেন। আবার মুম্বইতে সমুদ্রের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করা জমিতে ছত্রপতি শিবাজীর একটি ২১০ ফুট উঁচু মূর্তি তৈরির পরিকল্পনাও হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো কোম্পানিকে ৩,০০০ কোটি টাকার একটি চুক্তি প্রদান করেছে।
Read the full story in English