কাশ্মীর উপত্যকার উপর একটা প্রশ্নচিহ্ন ঝুলছে এখন। দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জেলবন্দি, একজন গৃহবন্দি এবং মূল ধারার বড় দলের অনেক নেতাদেরই তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে ন্যাশনাল কনফারেন্সের এক নেতা বললেন, "খুব শকিং, মনে হচ্ছে ডুবে যাচ্ছি। এই একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হবেই... ১৮৪৬ সালে কাশ্মীরিদের যে তাদের জমি, দল ও মাথার উপরের আকাশ সহ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল তার পর এত বড় ক্ষমতাচ্যুতি আর ঘটেনি।"
যে জায়গায় ইতিহাস এত ভারী, সেখানকার ভবিষ্যৎ নিয়ে এত অনিশ্চয়তা সচরাচর দেখা যায় না।
আরও পড়ুন, কাশ্মীরের ফরসা মেয়েদের বিয়ে করার সুযোগে উত্তেজিত বিজেপি বিধায়ক
উপত্যকার সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, অন্তর্বর্তী যোগাযোগেরও একই হাল- ইন্টারনেট সংযোগ নেই, সেলুলার ফোন নেই, ল্যান্ডলাইন নেই, কেবল টিভি পরিষেবা নেই। এলাকাবাসীরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা করার জন্যেও বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না। প্রশাসন কারফিউয়ের সময়ে বাইরে বেরোনোর জন্য পাসও দেয়নি, এমনকি নিজেদের কর্মীদের জন্যও নয়। নিরাপত্তাবাহিনী সরকারি আইডি-কে পাস হিসেবে মানছে না।
সংবাদমাধ্যমও স্বাগত নয়। টিভি কর্মীদের অধিকাংশই শ্রীনগরের জিরো ব্রিজের এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে। সেখানে নিরাপত্তা একটু ঢিলেঢালা- এখানে টিভি ক্যামেরা দেখা যাচ্ছে। অন্যত্র রাস্তায় কাঁটাতার দিয়ে তৈরি ব্যারিকেড, তাছাড়া পুলিশের চেকপয়েন্ট ও সশস্ত্র আধাসামরিক বাহিনী টহল জিচ্ছে। প্রায় সব পুলিশ কর্মীদেরই হাতে লাঠি, বন্দুক নয়।
নদীর ওপারে, জাহাঙ্গির চকে, কারফিউয়ের ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কা খাচ্ছেন এক সাংবাদিক।
আরও পড়ুন, কাশ্মীরিদের প্রতি দায়বদ্ধ: যতদূর প্রয়োজন ততদূর যাবে পাক সেনা
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্টাররা অফিসে আটকে রয়েছেন। এখান থেকেই তাঁরা বাড়ি গিয়ে ফের ফিরে আসেন। শুধু অফিস বিল্ডিংয়ের মধ্যেই ডজনখানেকের বেশি পুলিশকর্মী ঢুকে পড়ে করিডোরটাকে তাঁদের শেল্টার বানিয়ে ফেলেছেন। যেহেতু জায়গা কম, বেশিরভাগ সরকারি দফতর, স্কুল, কলেজ আদালতের দখল নিয়ে নিয়েছে রাজ্যের বাইরে থেকে আসা আধাসামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার আধডজন বাসে করে রাজস্থান থেকে এসেছেন বিএসএফের কর্মীরা। তাঁদের জায়গা হয়েছে শহরের কেন্দ্রে খালি একটা পার্কিং লটে।
শ্রীনগরের ৩০ বছরের এক যুবক, নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে বললেন, "আমরা জানি ওরা কী চায়, শুরু হবে বিনিয়োগের নাম করে।"
"সরকার সেইসব মুসলিমদের অপমান করল যারা নিজেদের লোকের সঙ্গে দ্বিমত হয়েছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের জন্য ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে থেকে যাওয়ার জন্য নিজেদের রক্ত পর্যন্ত দিয়েছে।" বলছিলেন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এক নেতা। "এবার মূলধারার দলগুলির সামনে আর কিছু রইল না। ন্যাশনাল কনফারেন্স থেকে শুরু করে শাহ ফয়জলের মত নবাগতরা সবাই এখন একই অবস্থায়।" উপত্যকার অনেকেই বলছেন তাঁদের আশা এবার মূলধারার রাজনীতিবিদরা এই চ্যালেঞ্জের মুখে একত্রিত হয়ে যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
আরও পড়ুন, “এ ভারত আমি দেখিনি। এ ভারত আমি কখনও দেখিনি।”
"গত ৭০ বছরে যে বিতর্ক ওঁদের বাঁচিয়ে রেখেছিল তা সংসদের ১৫ মিনিটে শেষ হয়ে গেল, বলছিলেন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহম্মদ উমর। এবার আর ওদের কিছু বলার নেই। জনতার সামনে গিয়ে ওঁদের ক্ষমা চাইতে হবে।" বলছিলেন এক ন্যাশনাল কনফারেন্স কর্মী, যাঁর বাবা জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছিলেন। "আমার বাবা ভারতের ধারণার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন এবং আমি মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম এই বিশ্বাস থেকে। তিনি জঙ্গিদের গুলি খেয়েছিলেন কারণ উনি বিশ্বাস করতেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতেই কাশ্মীর নিরাপদ থাকবে। এর পর, আমি ওঁর এবং নিজের বীক্ষাকে প্রশ্ন করব। যদি আমরা এর পরেও একজোট না হতে পারি তাহলে আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে আমাকে ভেবে দেখতে হবে।"
বহু ধর্মঘট, বহু কারফিউয়ের সাক্ষী এ উপত্যকা। কিন্তু এবারেরটা যে আলাদা তা অস্বীকর করা যাবে না। এবার প্রতিবেশীরাও একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। কাশ্মীর এবার কাশ্মীরের কাছেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।
Read the Full Story in English