বুনো হাতির মৃত্যুর তদন্তের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন
কেরালার পালক্কড় জেলায় গর্ভবতী বুনো হাতির মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মূলত তিনজন সন্দেহভাজনকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে তদন্ত। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, "দোষীদের কাঠগড়ায়" তোলার জন্য সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হাতিটির মৃত্যুতে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে নানা মহলে, এবং দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।
Advertisment
টুইট করে বিজয়ন লেখেন, "তিনজন সন্দেহভাজনকে কেন্দ্র করে তদন্ত শুরু হয়েছে। যৌথভাবে তদন্ত পরিচালনা করবে পুলিশ এবং বনবিভাগ। জেলা পুলিশ প্রধান এবং জেলা ফরেস্ট অফিসার আজ ঘটনাস্থলে যান। দোষীদের শাস্তি দিতে যা যা সম্ভব, তা সব করব আমরা।" মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে মানুষ-পশু সংঘাতের ক্রমবর্ধমান ঘটনার নেপথ্য কারণগুলি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবে তাঁর সরকার।
Advertisment
তবে পাশাপাশি রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারের নিন্দা করে বিজয়ন বলেন কেরালার "সমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে সম্মান করে"।
তিনি লেখেন, "আমরা দুঃখিত যে এই মর্মান্তিক ঘটনার সুযোগ নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন কেউ কেউ। অসত্য এবং অর্ধসত্য বর্ণনার ভিত্তিতে মিথ্যে কথা ব্যবহার করে সত্যকে ঢাকা দেওয়া হচ্ছে। অনেকে আবার এর মধ্যে ধর্মান্ধতাও ঢোকানোর চেষ্টা করছেন... যদি এই ঘটনায় একটিও ইতিবাচক দিক থেকে থাকে, তা হলো এই যে আমরা এখন জানি, অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ শোনা হবে। আমরা যেন তেমন মানুষ হতে পারি, যাঁরা সর্বদা, সর্বত্র সবরকম অবিচারের বিরুদ্ধে লড়েন।"
An investigation is underway, focusing on three suspects. The police and forest departments will jointly investigate the incident. The district police chief and the district forest officer visited the site today. We will do everything possible to bring the culprits to justice.
— Pinarayi Vijayan (@vijayanpinarayi) June 4, 2020
গত ৩০ মে হাতিটির ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে ফেসবুকে একটি আবেগময় পোস্ট লেখেন পালাক্কড় জেলার মান্নারকড়ের সেকশন ফরেস্ট অফিসার মোহন কৃষ্ণন, যা অচিরেই ভাইরাল হয়ে যায়।
অভিযোগ, বিস্ফোরকে ঠাসা আনারস খেয়ে মারাত্মক জখম হয় হাতিটি। ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ হাতিটিকে বিস্ফোরকে ঠাসা ফল খেতে দিয়েছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু আধিকারিকরা বলছেন, বুনো শুয়োর মারতে এই ধরনের ফল দিয়ে যে ফাঁদ পাতা হয়, সেই ফলই খেয়ে থাকতে পারে ওই হাতিটি, এমন সম্ভাবনা যথেষ্ট প্রবল।
মান্নারকড়ের বিভাগীয় ফরেস্ট অফিসার কে কে সুনীল কুমার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, “জঙ্গলের কিনারায় পটকা এবং দেশি বোমা ব্যবহার করে শুয়োর এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী মারার খবর এর আগে পাওয়া গেছে। এটাও অবৈধ কাজ, সুতরাং এটাকে ছোট করে দেখছি না আমরা, তবে ওই হাতিটি ভুলবশত এই ফাঁদে পা দিয়েছিল, এমনটা হতেই পারে।”
বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, কেন্দ্র সরকার ঘটনাটিকে "অত্যন্ত গুরুত্ব" দিয়ে দেখছে। তিনিও টুইট করে জানান, "সঠিক তদন্ত করে দোষীদের ধরতে কোনও ত্রুটি রাখব না আমরা।ভারতের সংস্কৃতি বিস্ফোরক খাইয়ে খুন করতে শেখায় না।"
মৃত্যুর নেপথ্যে
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জেনেছে যে ১৫ বছরের জখম হাতিটিকে বনবিভাগের আধিকারিকরা প্রথম দেখেন ২৩ মে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ঠিক কোন জায়গায় কার দোষে সে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় - যার ফলে তার মুখে এমন আঘাত লাগে যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় - তা এখনও জানা যায়নি।
সূত্রের আরও খবর, ২৩ মে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মান্নারকড় মহকুমায় পোট্টিয়ারা জঙ্গলের সীমান্তে আম্বালাপ্পারার কাছে হাতিটির উপস্থিতির খবর পায় বনবিভাগ। ঘটনাস্থলে পৌঁছে জখম হাতিটিকে দেখতেও পান আধিকারিকরা। তবে তারপরেই সে হেঁটে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে যায়।
এর দু'দিন পর, ২৫ মে, থেইয়ামকুন্ড এলাকার একটি নদীতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে, আপাতদৃষ্টিতে তার জখমের যন্ত্রণা থেকে কিঞ্চিৎ নিষ্কৃতির আশায়। যে পশু চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করেন, তিনি আধিকারিকদের জানান যে জখম অত্যন্ত গুরুতর হওয়ার কারণে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে তার চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।
সেসময় বনবিভাগ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে অন্তত এক সপ্তাহ আগে জখম হয়েছে হাতিটি। এর পরের সিদ্ধান্ত, 'কুনকি' (প্রশিক্ষিত) হাতি ব্যবহার করে তাকে জল থেকে বের করে আনার চেষ্টা। তবে সেই চেষ্টা করা মাত্রই তেড়ে আসে হাতিটি, যদিও এমনিতে মাথা নিচু করে, জলে শুঁড় ডুবিয়ে, কারও কোনও ক্ষতি না করে শান্তভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল সে। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা একইভাবে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার পর ২৭ মে বিকেলে শরীরে গভীর অভ্যন্তরীণ আঘাতের কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সেই হাতি।
মৃত্যু-পরবর্তী পোস্টমর্টেমে তার গর্ভাবস্থা ধরা পড়ার পর যেন আরও মর্মান্তিক হয়ে যায় তার মৃত্যু।
আধিকারিকরা গোড়া থেকেই বলে আসছেন যে হাতিটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে যে র্যাপিড রেসপন্স টিম, তার সদস্য কৃষ্ণন তাঁর ফেসবুক পোস্টে একবারও বলেন নি যে হাতিটিকে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিস্ফোরক-বোঝাই আনারস খাওয়ানো হয়। বরং বন্যপ্রাণী তাড়াতে বাজি-পটকার প্রয়োগ যে কতটা বিপজ্জনক, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
'আঘাতের ফলে কয়েক সপ্তাহ কিছু খেতে পারে নি'
যিনি হাতিটির পোস্টমর্টেম করেন, সেই সহকারী ফরেস্ট ভেটেরিনারি অফিসার ডাঃ ডেভিড আব্রাহাম বলেছেন, "মুখের মধ্যে বাজি ফাটার ফলে মারাত্মকভাবে জখম হয় তার ওপরের এবং নীচের চোয়াল। মুখটা পোকায় ভরে গিয়েছিল, জখমের জ্বালায় কয়েক সপ্তাহ কিছু খেতে পারে নি, জল পর্যন্ত না। অত্যন্ত বেশিরকমের দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে।"
হাতিটি যে গর্ভবতী, তা পোস্টমর্টেমের শেষ পর্যায়ে টের পান ডাঃ আব্রাহাম, যখন তিনি দেখেন যে তার জরায়ুটি স্ফীত। "আমি ঘটনাচক্রে সেটা লক্ষ্য করি। ভ্রূণের বয়স এক বা দু'মাস ছিল। এভাবে বিস্ফোরণে জখম হয়ে গর্ভাবস্থায় হাতির মৃত্যু অতীব বিরল ঘটনা। অত্যন্ত দুঃখজনক।"
পোস্টমর্টেমের শেষে সেদিনই যথাবিহিত সৎকার করা হয় হাতিটির।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন