প্রকৃতির ভয়াল রূপে জলে ডুবে তছনছ কেরালার মাথায় ঝুলছে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির বোঝা। নতুন করে তাঁর রাজ্য়কে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বানভাসি কেরালার ফাঁকা লক্ষ্মীর ভাঁড় ভরার জন্য় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্য়ের মুখ্য়মন্ত্রীদের ত্রাণ তহবিলও আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু দেশ থেকেই নয়, বিদেশ থেকেও আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব পেয়েছে কেরালা। গতকালই তেমন এক প্রস্তাবের কথা জানিয়েছিলেন দক্ষিণের এই রাজ্য়ের মুখ্য়মন্ত্রী। বন্য়াবিধ্বস্ত কেরালাকে ৭০০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। যা শুনে কেরালাবাসীর ফিকে মুখে কিছুটা হলেও হাসির রেখা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না, সৌজন্য়ে দেশের বিপর্যয় সহায়তা নীতি। হ্য়াঁ, এই নীতির ফলেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দেওয়া ৭০০ কোটি টাকা নিতে পারবে না পিনারাই বিজয়নের সরকার।
ব্য়াপারটা কী? ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে সুনামির পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বিপর্যয় সহায়তা নীতি তৈরি করেন। যে পলিসি অনুযায়ী, এ দেশ দুর্যোগ বা বিপর্যয়ের মুখে পড়লে, বিদেশের কোনও সরকারের থেকে আর্থিক সাহায্য় গ্রহণ করা হবে না। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক সরকারি আধিকারিকের তরফে জানানো হয়,''২০০৪ সালের ওই পলিসি মেনে চলছি আমরা। বিদেশের কোনও সরকারের থেকে কোনওরকম সাহায্য় নিতে পারব না আমরা। কেরালার ক্ষেত্রেও এই পলিসি মানা হবে।''
এই পলিসি সম্পর্কে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, ''আমরা নিজেরাই সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব। যদি প্রয়োজন হয়, তবেই সাহায্য় নেব।'' সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, প্রধানত দুটি কারণে এই নীতির কথা বলা হয়েছে। কী কী ? সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, এধরনের বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য় যে ক্ষমতা, তা এদেশের আছে বলেই মনে করে সরকার। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের সাহায্য়ে কূটনৈতিক দিক থেকে সমস্যা হতে পারে।
যদিও এই পলিসি বিদেশের সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য়, তবে ব্য়ক্তিগত ক্ষেত্রে বা কোনও সংস্থার ক্ষেত্রে এই নীতি খাটবে না। অর্থাৎ বিদেশের কোনও নাগরিক বা কোনও সংস্থা যদি সাহায্য় করতে চান তবে তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন, বানভাসি কেরালার পাশে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী
অন্য়দিকে, দু:সময়ে কেরালার পাশে দাঁড়ানোর জন্য় সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর উপরাষ্ট্রপতি ও দুবাইয়ের শাসককে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, ভারতীয কূটনীতিকরাও কৃতজ্ঞতা জানাবেন এবং একইসঙ্গে এই মুহূর্তে সাহায্যের যে কোনও প্রয়োজন নেই, একথাও জানাবেন তাঁরা।
গত ১৪ বছরে, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সাহায্য় প্রত্য়াখান করেছে ভারত। ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডে বন্য়া, ২০০৫ সালে কাশ্মীরে ভূমিকম্প ও ২০১৪ সালে কাশ্মীরে বন্য়ার ঘটনায় এই পলিসি মেনে বিদেশের সাহায্য় নেয়নি ভারত। তবে এই পলিসির আগে, ১৯৯১ সালে উত্তরকাশীতে ভূমিকম্প, লাতুরে ভূমিকম্প(১৯৯৩), গুজরাতে ভূমিকম্প(২০০১), পশ্চিমবঙ্গে সাইক্লোন(২০০২) ও বিহারে বন্য়ার(জুলাই, ২০০৪) ঘটনায় বিদেশ থেকে সাহায্য় নিয়েছে ভারত।