Advertisment

'হায়দরাবাদের মতই গুলি করে মারা হোক ওদের'

'জানি এতে আমার মেয়ে ফিরে আসবে না। কিন্তু, ওরা মরলে মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। বাকিরাও প্রাণে বাঁচবে।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

দিল্লি থেকে নির্যাতিতার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উন্নাওয়ে।

জীবনযুদ্ধে হার মেনেছে মেয়ে। দোষীরা একবার ছাড়া পেলে পরিবারের বাকি সদস্যদেরও জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই কড়া শাস্তি নয়, হায়দরাবাদ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তদের মতই গুলি করে মারা হোক ধর্ষকদের। দাবি উন্নাওয়ের নির্যাতিতার বাবার। দিল্লির হাসপাতাল থেকে সড়ক পথে তরুণীর দগ্ধ দেহ পৌঁছেছে উন্নাওয়ের বাড়িতে। মৃতদেহের পাশে বসেই পরিতাপ করে চলেছেন কন্যাহারা পিতা। তারই মাঝে চোয়াল শক্ত করে বলছেন, 'হায়দরাবাদের ঘটনার মতই গুলি করে মারা হোক ধর্ষক ও খুনীদের। yekfjeAজানি এতে আমার মেয়ে ফিরে আসবে না। কিন্তু, ওরা মরলে মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।'

Advertisment

শক্ত চোয়াল নিমিষেই শিথিল হচ্ছে। চোখ ভিজে উঠছে। বৃদ্ধের চিন্তায় পরিবারের ভবিষ্যৎ। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠছেন, 'ওরা (উন্নাওয়কাণ্ডের পাঁচ অভিযুক্ত) বড়লোক। ওরা জেল থেকে মুক্তি পেলে আরও সর্বনাশ হবে। এখন মেয়েকে মেরেছে। ওরা আমাদেরও মেরে দেবে। আমার দাবি একটাই। ওদের এনকাউন্টারে মারা হোক।'

আরও পড়ুন: উন্নাওকাণ্ডে বেনজির প্রতিবাদ, নিজের মেয়ের গায়ে তরল দাহ্য ঢাললেন মা

মাটিতে পড়ে রয়েছে মেয়ের নিথর দেহ। শোকার্ত পিতার মুখে তখন ন্যায্য বিচারের জন্য শত প্রলোভনকে প্রত্যাখ্যানের কথা। বলছিলেন, 'মেয়েকে নির্যাতনের পর পর ওরা আমাকে বাড়ি, নগদ ২৫ লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল। কিন্তু সেসব নিয়ে আমি কি করব? রাজপ্রাসাদ, এমনকি গোটা একটা মহল্লা দিলেও আমার মেয়ে আর ফিরে আসবে না। প্রয়োজনের সময় ওরা পাশ থেকে সরে গিয়েছে।'

বৃহস্পতিবার উন্নাওয়ের ধর্ষিতা তরুণী সাক্ষী দিতে আদালতে যাচ্ছিলেন। একাই রাস্তায় বেরিয়েছিল সে। আর সেটাই কাল হল। ট্রেন ধরে রায়বরেলিতে আদালতে যাওয়ার কথা ছিল তরুণীর। কিন্তু রেলগেটের কাছে আসতেই আক্রমণ করে দুষ্কৃতীরা। প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ, পরে পেট্রল ঢেলে তরুণীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে তাঁরই ধর্ষণে অভিযুক্তরা। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও হার মানতে হয় তরুণীকে। শুক্রবার রাতে দিল্লির হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে সে।

আরও পড়ুন: জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে হার মানলেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা, দিল্লির হাসপাতালে মৃত্যু

সাত ভাই-বোনের মধ্যে আদরের ছোট মেয়ে ছিল নির্যাতিতা। সবার মধ্যে পড়াশুনোতেও ভাল ছিল সে। সমাজে ন্যায় বিচারের বড় অভাব, যা উপলব্ধি করে প্রথমে পুলিশ হতে চেয়েছিল বছর ২৩শের মেয়েটি। পরে, সিদ্ধান্ত নেয়, আইনি নিয়ে পড়ে পুলিশ হবে সে। প্রস্তুতি নিচ্ছিল আইনি পাঠক্রমের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য। নির্যাতিতার বাবর কথায়, 'শারীরিকভাবেও সক্ষম ছিল এই মেয়েটা। এক বা দু'জন আক্রমকারী হলে ও ঠিক সামলে নিত। দগ্ধ অবস্থাতেও দেড়শ মিটার ছুটেছিল মেয়েটা। তারপর ফোনে পুলিশকে খবর দেয়। ওকে ঘিরে আমাদের স্বপ্ন ছিল। ভাবতাম ও রোজগার করতে শুরু করলে পরিবারের দারিদ্রতা কাটবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল...'

অভিযুক্তদের অত্যাচার, কথার খিলাফের বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়ে সুবিচার মেলেনি। উল্টে অভিযুক্তদের হয়েই কথা বলেছিল সে। 'নিচু জাতির মেয়ে বড়লোকের ছেলের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখে কী করে?' প্রশ্ন তুলেছিল প্রধান। তারপর থেকেই গ্রামে এক ঘরে নির্যাতিতার পরিবার। মেনে এসেছিল অন্ধরৃকার। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বাড়িতে কোনও মতে টিম টিম করে জ্বলত একটি মাত্র বাল্ব। শুক্রবার, প্রশাসনের উদ্যোগে সেই বাড়ির সামনে জ্বলল জ্বল করছে বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক আলো। কিন্তু, মেয়ে হারা পরিবারে সদস্যদের মনে তখন এক রাশ অন্ধকার। দাবি একটাই, 'এনকাউন্টারে মারা হোক অভিযুক্তদের।'

Read the full story in English

Unnao national news
Advertisment