৭৩ বছর বয়সে ব্রিটেনের রাজসিংহাসনে বসলেন যুবরাজ চার্লস, শনিবার ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটে নাগাদ হয়ে গেল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা । ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর সেদেশের নতুন রাজার মুকুট পড়লেন যুবরাজ চার্লস। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের নতুন রাজা হিসেবে ‘তৃতীয় চার্লসের’ নাম ঘোষণা করা হল।
শুক্রবার বাকিংহ্যাম প্যালেস জানিয়েছে এ তথ্য। ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটে নাগাদ সম্পন্ন হল যুবরাজের আনুষ্ঠানিক অভিষেক। ১০ সেপ্টেম্বর তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজা হিসাবে ঘোষণা করা হল লন্ডনের সেন্ট জেমস প্রাসাদে। অ্যাক্সিশন কাউন্সিল নতুন সেন্ট জেমস প্রাসাদে এক সভায়, চার্লস তৃতীয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের নতুন রাজা ঘোষণা করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান। স্কটল্যান্ডে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় তৃতীয় চার্লসই হবেন ব্রিটেনের নতুন রাজা।
ব্রিটেনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজপরিবারে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোকে আবারও নতুন করে সাজানো হয়েছে। প্রিন্স চার্লস এখন সেদেশের রাজা হয়েছেন, এবং প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস হিসেবে বড় ছেলে উইলিয়াম ও পুত্রবধূ কেট মিডলটনের নাম ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস। জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে তিনি কথা জানান।
বাকিংহাম প্যালেস থেকে জাতির উদ্দেশে তার প্রথম ভাষণে রাজা চার্লস তার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগানকেও স্মরণ করেন। এখন থেকে রাজা তৃতীয় চার্লস হিসেবে অভিহিত করা হবে তাঁকে। একই সঙ্গে পরিচয় পাল্টাতে চলেছে, সিংহাসনের পরবর্তী দাবিদার প্রিন্স উইলিয়ামের।
এতদিন তাঁর নামের পাশে লেখা হত ‘ডিউক অফ কেমব্রিজ’। তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন ওরফে কেট মিডলটনের নামের পাশে লেখা হত ‘ডাচেস অফ কেমব্রিজ’। এ বার তাঁরা চার্লস এবং তাঁর স্ত্রী ক্যামিলার ‘ডিউক অফ কর্নওয়াল’ এবং ‘ডাচেস অফ কর্নওয়াল’ উপাধিতে ভূষিত হবেন। একই সঙ্গে চার্লসের স্ত্রী, ক্যামিলাকে অভিহিত কার হবে ‘কুইন কনসর্ট’ হিসেবে। রাজার স্ত্রীকে এ ভাবেই সম্বোধিত করা হয়।
রানির মৃত্যুতে শোক জানাতে বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। তাঁকে সম্বোধন করে রাজা চার্লস বলেন, উইলিয়ামকে প্রিন্স অফ ওয়েলস বানিয়ে তিনি গর্বিত। তারা দুজনই এখন তাকে জাতীয় ইস্যুতে পরামর্শ দেবেন। চার্লস বলেন, সালটা তখন ১৯৫৮ সালে তার মা রানি এলিজাবেথ তাকে এই পদটি দিয়েছিলেন যখন তার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর।
চার্লস, বর্তমানে প্রিন্স অফ ওয়েলস, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারে রানির পর তিনিই প্রথম সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। চার্লস ২৯ জুলাই ১৯৮১ তারিখে লেডি ডায়ানা স্পেন্সারকে বিয়ে করেন। দুজনের দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারি।
১৯৯৬ সালে দুজনের বিচ্ছেদ হয়। ওয়েলসের রাজকুমারী ডায়ানা ১৯৯৭ সালে প্যারিসে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে ৯ এপ্রিল, ২০০৫, চার্লস ক্যামিলা পার্কারকে বিয়ে করেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর চার্লসকে রাজা ঘোষণা করা হয়। চার্লসের বয়স এখন ৭৩ বছর।
আরও পড়ুন: < Operation London Bridge: রানির প্রয়াণের পরই শুরু হল ১০ দিনের বিরাট কর্মযজ্ঞ, কী কী হবে জানেন? >
চার্লসের স্থলাভিষিক্ত হবেন প্রিন্স উইলিয়াম
প্রিন্স চার্লসের জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রিন্স উইলিয়াম রাজপরিবারের উত্তরাধিকারীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। উইলিয়াম, ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর, প্রিন্স অফ ওয়েলসঙ্কে রাজা ঘোষণা করা হয়। তাই এখন চার্লসের জায়গায় উইলিয়াম অফ ওয়েলসকে যুবরাজ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে, চার্লসের পরে, উইলিয়াম ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকার অর্জন করবেন।
যুবরাজ চার্লস ৭৩ বছর বয়সে ব্রিটেনের রাজা হলেন । তিনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বয়সে এই পদে অধিষ্ঠিত হলেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মাত্র ২৫ বছর বয়সে সেদেশের রানী হন। তিনি ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকা রানী ছিলেন। যুবরাজ চার্লস, তার ছোট ছেলে হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগানের কথা উল্লেখ করে, তাদের রাজপরিবারে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। বিতর্কের পর তিনি ২০২০ সালে রাজপরিবার ত্যাগ করেন।
জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দারুণ একটা জীবন পার করেছেন। তিনি সবসময় তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। আমিও মায়ের মতো আমার লক্ষ্যে অবিচল থেকে জনগণের সেবা করতে চাই”। তৃতীয় চার্লস রাজা হওয়ার পর এখন ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারীদের তালিকার প্রথমেই রয়েছেন প্রিন্স উইলিয়াম। তিনি চার্লসের বড় ছেলে। তাঁর জন্ম ১৯৮২ সালে। মা প্রিন্সেস ডায়ানা। সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকার দু নম্বরে রয়েছে প্রিন্স উইলিয়ামের ছেলে প্রিন্স জর্জ। তার জন্ম ২০১৩ সালে। তিন নম্বরে রয়েছে প্রিন্স উইলিয়ামের মেয়ে প্রিন্সেস শার্লট। তার জন্ম ২০১৫ সালে।