''দেখুন আমার দোকানে এখনও আগুন জ্বলছে, দেখুন জলই পৌঁছতে পারছে না ওখানে। ওরা তো জলই ঠিক মতো দিতে পারছে না,'' চোখের সামনে নিজের সাধের দোকান জ্বলতে দেখে একথা বলতে বলতেই মেজাজ হারালেন এক ব্যবসায়ী। সোমবার দুপুরেও বাগরির বিভিন্ন তলার ফাঁকফোঁকর দিয়ে মাঝেমধ্যেই উঁকি দিচ্ছে সেই নাছোড়বান্দা আগুনের শিখা। শনিবার মাঝরাতের সেই জ্বালাময়ী অগ্নিশিখা প্রায় দু'দিন পরেও প্রজ্বলিত রয়েছে, যা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। কেন এতক্ষণ পরেও অগ্নিদেবের রোষকে বাগে আনতে পারল না দমকল? এ প্রশ্ন ঘিরেই সরব ওই ব্যবসায়ীরা, যাঁদের স্বপ্ন উৎসবের মরশুমে এই অভিশপ্ত আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে।
চোখে-মুখে রাগ-ক্ষোভের বহি:প্রকাশ শুধুমাত্র ওই ব্যবসায়ীরই নয়, এমন অনেক ব্যবসায়ীই ক্ষুব্ধ। একটাই অভিযোগ, ''দমকল বাহিনী কিছু কাজ করছে না।'' শনিবার মধ্যরাতের সেই বিধ্বংসী আগুন সামলাতে এদিকে হিমশিম অবস্থা দমকল বাহিনীর। কিছুতেই আগুন বাগে আনতে পারছেন না। তাঁদের চেষ্টার কোনও কসুর নেই, কিন্তু ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগের আঙুল দমকলের অব্যবস্থার দিকে। এক ব্যবসায়ী বললেন, ''দমকলের গাড়িতে তো জলই নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে। মাঝেমধ্যেই তো জল ফুরিয়ে যাচ্ছে।'' আরেক ব্যবসায়ী রাগে গজগজ করতে করতে বললেন, ''দমকলের জল তো আগুনের জায়গায় পৌঁছতেই পারছে না তো নিভবে কীভাবে!'' এক ব্যবসায়ী আওয়াজ তুললেন, ''আগুন লাগিয়ে তো ওরা পালিয়ে গেছে। কোথায় বাগরির মালিকরা? রাধা বাগরি কোথায় এখন?''
ঠিকমতো কাজ করছে না উদ্ধার কর্মী, দমকল। এমনটাই অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। উদ্ধার কাজ সবটাই ব্যর্থ, এমনটাই দাবি তাঁদের। pic.twitter.com/fNhSLbt83e
— IE Bangla (@ieBangla) September 17, 2018
সোমবার তখন ঘড়ির কাঁটা সন্ধে ছটার ঘর ছোঁবে ছোঁবে করছে। এমন সময় এক ব্যবসায়ী ফের ঘটনাস্থলে এসেই দিশেহারা হয়ে বললেন, ''কী কাজ করছে এরা, এখনও নেভাতে পারল না! কী হচ্ছে এটা?'' ওই ব্যবসায়ীর কথা শুনেই আরেক ব্যবসায়ী বললেন, ''দমকল পুরো ফেল করেছে।'' হায়দার নামের এক প্রবীণ ব্যবসায়ী বললেন, ''যা দেখছি, দমকল তো কিছু কাজই করতে পারছে না।'' দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার চোখে ধরা পড়েছে দমকল বাহিনীর হোসপাইপের সূক্ষ ছিদ্র, যেখান দিয়ে অবিরাম জল বেরোচ্ছে। যেদিকে কারওরই হুঁশ ছিল না।
হোস পাইপের একাধিক জায়গায় লিক#BagriMarketFire https://t.co/sosoOVSWB5 pic.twitter.com/5tuLPu3fb4
— IE Bangla (@ieBangla) September 17, 2018
আরও পড়ুন, Kolkata Bagri Market fire day 2 live updates: আরেকটি রাত আসন্ন, এখনও ধিকি ধিকি জ্বলছে আগুন
এ আগুন সম্পূর্ণ নিভবে কবে? প্রশ্ন শুনে এক দমকলকর্মী বললেন, ''যা অবস্থা, আরও সময় লাগবে। আরও হয়তো ৭২ ঘণ্টা লাগবে।'' সোমবার সন্ধের পরও কালো ধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে বাগরির আকাশ। বিপর্যয় বাহিনী তখন বাগরির জানলা দিয়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন দৃশ্য দেখে এক ব্যবসায়ী বললেন, ''এটা ম্যানমেড আগুন। তদন্ত করে দেখা হোক, কে বলতে পারে এর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র নেই!''
এদিন অবশ্য অনেক ব্যবসায়ীই বাগরির ভিতরে ঢুকে নিজেদের দোকানের অবশিষ্ট যা পড়ে ছিল, তা দু'হাত দিয়ে আগলে উদ্ধার করেছেন। কারওবা দোকান আবার আগুনের গ্রাস থেকে কোনওরকমে রেহাই পেয়েছে। কিন্তু তাঁদের চিন্তা, সেই পসরা নিয়ে তাঁরা বসবেন কোথায়? যেমন ভবানীপুরের বাবলি নায়েক। বাবরি মার্কেটের মধ্যে বাবলিদেবীদের ওষুধের দোকান। রাক্ষুসে আগুনের গ্রাস থেকে সেই দোকান রক্ষে পেলেও এখন চিন্তা, পুজোর মুখে তাঁরা কোথায় বসবেন।