শহরে যত গাড়ি বাড়ছে, তত বাড়ছে ড্রাইভারের চাহিদা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অলিতে গলিতে মোটর ট্রেনিং স্কুল। এবং জনমত বলছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া তো অনেকটা মুড়ি-মুড়কির মতো। নাম কা ওয়াস্তে ড্রাইভিং স্কুলে মুখ দেখাতে যাও, টাকা ঢালো, লাইসেন্স নাও, এই চিত্রটা আপাতত বদলাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রশাসন।
সেকারণেই এবার পরিবহণ দফতরের নজরে রাজ্যের মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলো। ড্রাইভিং লাইসেন্সে পাওয়ার ক্লাস আপনি অবসর সময়ে করতেই পারেন, কিন্তু অবসরকালীন এই ক্লাসের গুরুত্বকে এবার উপেক্ষা করার জো নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন কড়া হচ্ছে প্রশাসন, তেমনই যেখানে চালকের প্রথম হাতেখড়ি হয়, সেই মোটর ট্রেনিং স্কুলের নিয়মকানুনও আরও আঁটোসাঁটো করার পথে এগোচ্ছে রাজ্যের পরিবহণ দফতর।
আরও পড়ুন, প্রচার হলো, আইন হলো, আমরা মানলাম কি?
সম্প্রতি রাজ্যের ৪৩৯টি মোটর ট্রেনিং স্কুলে ঢুঁ মেরেছিল পরিবহণ দফতরের বিশেষ পরিদর্শক দল। কী অবস্থায় রয়েছে এই ড্রাইভিং স্কুলগুলো? এখানকার প্রশিক্ষকরাই বা কেমন করে শেখান গাড়ি চালানো? সব ধরনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে কি এই স্কুলগুলোতে? এই ধরনের আরও বেশ কিছু মাপকাঠিতে তুল্যমূল্য বিচার করে ৮০টি মোটর ট্রেনিং স্কুলকে চিহ্নিত করেছে পরিবহণ দফতর, যেগুলোর পরিকাঠামোগত দিক থেকে আরও উন্নতি প্রয়োজন।
এতেই শেষ নয়, ওই স্কুলগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমাও দেওয়া হয়েছে উন্নতির জন্য। নির্দিষ্ট সময় পেরোলেও যদি কাজের কাজ না হয়, তবে ঝাঁপ বন্ধ হতে পারে ওই স্কুলগুলোর। এ প্রসঙ্গে পরিবহণ দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানান, "৮০টি স্কুলকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলির আরও উন্নতি দরকার। আপগ্রেডেশনের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।"
কীসের ভিত্তিতে স্কুলগুলোর পরীক্ষা নেওয়া হল? এর উত্তরে ওই আধিকারিক জানান, "কোনও স্কুলের ক্লাসরুম বড়, কারও ছোটো, কারও রেপুটেশন ভাল, কারও কম, কারও প্রশিক্ষকদের যোগ্যতা কম, কারও প্রশিক্ষকদের সংখ্যা কম, এসবের ভিত্তিতে স্কুলগুলোর মান যাচাই করা হয়েছে।" এ প্রসঙ্গে ওই আধিকারিক আরও বললেন, "এগুলো আমরা করছি যাতে গাড়ি চালানোর মান আরও ভাল হয়। মাস্টারমশাই যদি ভাল না হন, তবে কী করে তাঁর পড়ুয়ারা ভাল করে শিখবেন!"
আরও পড়ুন: ফ্রেন্ডশিপ চ্যাট হোক বা মাসাজ পার্লার, চট করে ভুলবেন না
দুর্ঘটনা এড়াতেই যে মোটর ট্রেনিং স্কুল নিয়ে আরও কড়া হচ্ছে পরিবহণ দফতর, সে কথারও আন্দাজ মিলল ওই আধিকারিকের বক্তব্যে। "ট্রেনিং স্কুলে যাতে ভাল করে ড্রাইভিং শেখানো হয় সেজন্যই এতকিছু করা হচ্ছে। কীভাবে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, সেজন্য আইআইটি খড়গপুরকে দিয়ে সিলেবাস করে দেওয়া হয়েছে। ওই সিলেবাস মেনেই ক্লাস করাতে হবে।"
এখন যদি কেউ মোটর ট্রেনিং স্কুল খুলতে চান, তবে কী কী দিক মাথায় রাখা উচিৎ? এ প্রশ্নের জবাবে ওই আধিকারিক বলেন, "কেন্দ্রের মোটর ভেহিক্যালস আইনে এর উল্লেখ রয়েছে। সব সুযোগসুবিধা, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকতে হবে। গাড়িতে ডুয়েল কন্ট্রোল ফেসিলিটি থাকতে হবে। এছাড়াও এরকম আরও অনেক গাইডলাইন্স দেওয়া রয়েছে।"
অন্যদিকে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে দালাল চক্রও তো সক্রিয়। অসাধু উপায়ে লাইসেন্স পাওয়ার সংখ্যাও তো কম নয়! এ প্রসঙ্গে ওই আধিকারিক বললেন, "এখন তো অনলাইনে সব হয়ে গেছে। ই-সারথী রয়েছে, যেখানে অনলাইনেই সব প্রক্রিয়া হয়।"
অনেক সময়ই তো দেখা যায়, চালকের পরিবর্তে খালাসিরাই দিব্যি বাস চালাচ্ছেন, এমন কাণ্ড ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ? জবাবে ডিসি ট্রাফিক সুমিত কুমার বললেন, "এটা পুরোপুরি পরিবহণ দফতরের এক্তিয়ারে। লাইসেন্স না থাকলে বা লাইসেন্স নিয়ে প্রতারণা হলে অভিযোগ পেলে মামলা করা হবে। কিন্তু কীভাবে লাইসেন্স পেল? অসৎ উপায়ে কেউ লাইসেন্স পাচ্ছেন কিনা, সেটা পরিবহণ দফতর দেখবে।" এ প্রসঙ্গে ডিসি ট্রাফিক আরও বলেন, "আমাদের বিশেষ অ্যাপ রয়েছে। ডিপো থেকে বাস ছাড়লে কোন চালক স্টিয়ারিং ধরছেন, তার সব তথ্য দেখা যায়। ওখানে আমাদের কর্মীরা রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত এসব দেখভাল করছেন।"
কিন্তু মাঝপথে যদি কোনও চালক স্টিয়ারিং ছাড়েন আর তাঁর বদলে বাস চালান কোনও খালাসি বা কন্ডাক্টর, সেক্ষেত্রে কীভাবে নজরদারি করা হয়? এর জবাবে সুমিত কুমার বললেন, "আমরা তো ভগবান নই, যে কোথাও হেল্পার হঠাৎ বাস চালাচ্ছেন বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরব। যেখানে নজরদারি চালানো হয়, সেখানে লাইসেন্স না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
হেল্পারদের বাস চালানো প্রসঙ্গে পরিবহণ দফতরের ওই আধিকারিক বলেন, "এটা সত্যি কিনা জানি না। তবে এমন অভিযোগ গুরুতর। এরকম হলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। সেক্ষেত্রে মালিককে ধরব আমরা।" প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ২৩-৩১ জুলাই পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালাবে পরিবহণ দফতর।