Advertisment

রাতের শহরে পুলিশি অভব্যতার শিকার যুবক!

নির্জন রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অভিষেক কর। তা দেখেই শহরের রক্ষকরা ধরে নিলেন অভিষেকের কোনও ‘অন্য মতলব’ ছিল, জুটল চড়, গালিগালাজ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ফিরে দেখা ২০১৮: শহরবাসীর যে পাঁচ আচরণে মাথা ‘হেঁট’ তিলোত্তমার

অভিষেক কর। ছবি: ফেসবুক।

গত মাসেই ৩৭৭ ধারা নিয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেদিন অনেকেই বলেছিলেন যে, সুপ্রিম রায়ের পরই যে রাতারাতি এ সমাজের মানসিকতা বদলাবে। তেমনটা যে এখনও হয় নি, তা সামনে এল খোদ শহর কলকাতায়। কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, পরনে পাঞ্জাবি...নির্জন রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অভিষেক কর। আর তা দেখেই শহরের রক্ষকরা ধরে নিলেন, অভিষেকের ওই নির্জন পথে ধরে হাঁটার মধ্যে কোনও 'অন্য মতলব' ছিল।

Advertisment

রাত ন'টার সময় নিরিবিলি রাস্তায় অভিষেককে হাঁটতে দেখে রক্ষকদেরই ভক্ষকের ভূমিকায় দেখল শহর। তাঁর নিজের কথায়, অভিষেককে একা হাঁটতে দেখে বুলেটে সওয়ারি তিন পুলিশকর্মীর কাছ থেকে ধেয়ে আসে অশ্লীল মন্তব্য। এতেই শেষ নয়, কিছু কথা বলার আগেই ওই ছাত্রকে চড় মারা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থল পার্ক স্ট্রিট, টাই গ্রাউন্ড। সে পথ ধরেই নন্দনের দিকে যাচ্ছিলেন অভিষেক। অভিষেকের প্রশ্ন, "নির্জন পথে একা হাঁটছিলাম বলে কি আমায় অন্য কিছু ভাবা হল? ওঁদের কি মনে হল আমার যৌনকর্মের অভিপ্রায় ছিল? কিন্তু আমি তো একাই ছিলাম।" অভিষেক কেন ওই সময় একা ওই পথ ধরে হাঁটছিলেন, এ নিয়েই আপত্তি তোলেন ওই পুলিশকর্মীরা।

ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন? জবাবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে অভিষেক বলেন, "রাত তখন ৮.৫৫ হবে। আমি আর আমার দুই বন্ধু, সুব্রত ও নিলয়, নন্দন থেকে হেঁটে পার্ক স্ট্রিট ফিরছিলাম। আমরা এভাবেই ফিরতাম, হাঁটতে হাঁটতে। তারপর পার্ক স্ট্রিট থেকে মেট্রো ধরি। সেদিন মেট্রোর কার্ড পাঞ্চ করার সময়ই দেখি আমার ওয়ালেট নেই। যেহেতু নন্দন থেকে ফিরছিলাম, তাই নন্দন চত্বরে এক দোকানদার ভাস্কর দা’কে ফোন করি। উনি ফোনে জানান, আমি ওয়ালেটটা ওঁর দোকানে ফেলে এসেছি। উনি রেখে দিয়েছেন। আমায় উনি ওয়ালেটটা নিয়ে যেতে বলেন।" অভিষেক আরও বলেন, "যতক্ষণে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম নন্দন যাওয়ার, ততক্ষণে আমার বন্ধুরা টিকিট পাঞ্চ করে প্ল্যাটফর্মে ঢুকে গিয়েছে। ফলে ওদের চলে যেতে বলি। এরপর আমি স্টেশন থেকে বেরিয়ে টাই গ্রাউন্ড ধরে হাঁটি, কারণ ওই পথে হাঁটলে কম সময়ে পৌঁছব।"

kolkata police, কলকাতা পুলিশ ময়দান থানায় অভিষেকের সেই অভিযোগপত্র। ছবি: ফেসবুক সূত্রে।

আরও পড়ুন, যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুললেন মুম্বইয়ের ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন ছাত্র

অভিষেকের জবানিতেই, "দেখলাম একটা বুলেট আমাকে ফলো করছে। বুলেটে লেখা ছিল ‘পুলিশ’। বুলেটে তিনজন ছিলেন এবং কারোর মাথায় হেলমেট ছিল না। কোনও কিছু বলার আগেই আমায় চড় মারেন একজন। খুব অশ্লীল কথা বলা হয় আমাকে। গালিগালাজ করা হয়। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি যে, আমি ওয়ালেট ফেলে এসেছি, তাই তা নিতে নন্দনে যাচ্ছি। কিন্তু ওঁরা কোনও কথাই শোনেননি। উল্টে অভব্য কথা বলেন, আর আবারও মারধর করা হবে বলে হুমকি দেন। আমি তখন বলি, মারতে হলে থানায় নিয়ে গিয়ে মারুন।" এক নি:শ্বাসে বলে অভিষেক ফের শুরু করেন, "আমায় বলা হল, পুলিশের গাড়ি আসছে, অপেক্ষা করছি আমরা। খানিকক্ষণ পর বলা হয়, গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে। এমন সময় ওই পথে আরও দু’জন হাঁটছিলেন। ওঁরা আমাদের দেখে এগিয়ে আসেন। বলেন আমাকে ছেড়ে দিতে। এরপর ওই বুলেট সওয়ারিরা চলে যান।"

এখানেই যবনিকা পতন ঘটেনি। সে রাতে সাড়ে নটার পর নন্দন চত্বরে ভাস্কর দা’র দোকানে ওয়ালেট নিতে পৌঁছন অভিষেক। পরের দিন মঙ্গলবার বিকেলে ময়দান থানায় এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আসেন অভিষেক কর। থানাতেও হেনস্থার অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্র। অভিষেকের অভিযোগ, "গতকাল বিকেল চারটে নাগাদ ময়দান থানায় অভিযোগ জানাতে যাই। সেখানে আমাকে তিনজন আলাদা আলাদা করে জেরা করেন। তারপর অভিযোগপত্রের রিসিভড কপি দেওয়া হয়। এরপর আমরা থানা থেকে চলে আসি। খানিকক্ষণ পর আবারও আমায় ফোন করে থানায় আসতে বলা হয়। এরপর আবারও আমায় ২০ মিনিট বসিয়ে রাখা হয়। সে সময় দেখি, সেই তিনজনকে। ওঁদের কথাবার্তায় জানতে পারি, একজনের নাম প্রভাকর। তিনজনের মধ্যে একজন আমায় জিজ্ঞেস করেন, আমি সেখানে কেন। তখন বলি, 'কাল আমার সঙ্গে আপনারা যা করেছেন, তার অভিযোগ জানাতে এসেছি'। এরপর আবারও আমায় থানায় জেরা করা হয়। তারপর আমায় গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় এক মহিলার ছবি দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, যে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম সেটা কতটা বিপজ্জনক।"

আরও পড়ুন, পাঁচ বছরের শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শোরগোল বারাসাতে, কাঠগড়ায় স্কুল

এরপর ওই পড়ুয়া জানান, "এই সময় প্রভাকর থানার ভেতরে আমায় বলেন, 'যা করেছি বেশ করেছি, তোর সঙ্গে এটাই করা উচিত'। আমি বলি, কথাটা অন ক্যামেরা বলুন। তাতে আমার ফোন ভাঙার চেষ্টা করা হয়। সে সময় আরেক পুলিশকর্মী বলেন, 'ওঁর একটু মাথাগরম। আপনি এখন চলে যান। পরে প্রয়োজনে ডাকা হবে'।" কী করবেন এরপর? জবাবে ওই ছাত্র বললেন, "আমি আদালতে যাব। তবে গত রাতে ময়দান থানার ওসি আমায় ফোন করে আজ সন্ধ্যেয় ওঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন। যাব ভাবছি। বেশ কিছু দাবি জানাব।"

এ ঘটনা প্রসঙ্গে আমরা ডিসি সাউথ মিরাজ খালিদের সঙ্গে কথা বলি। তিনি জানান, "এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানি না।" তবে তিনি বলেছেন, "উনি আমার অফিসে এসেও দেখা করতে পারেন।" ডিসি (সাউথ)-এর সেই বার্তা আমরা ইতিমধ্যেই পৌঁছে দিয়েছি অভিষেকের কাছে। অন্যদিকে, এ ব্যাপারে ময়দান থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কয়েকবার ফোন করলেও কোনও জবাব মেলেনি। ময়দান থানার এক কর্মী জানান, "এমন একটা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে বিশদে বলতে পারব না।"

kolkata police kolkata news
Advertisment