/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/01/cats-165.jpg)
উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে ভুমিধসের ঘটনায় নতুন মোড়। এখন পর্যন্ত ৮২৬টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ১৬৫টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, জোশীমঠে এনটিপিসি টানেলের কাজের কারণেই ঘটেছে এই বিপর্যয়। এদিকে মঙ্গলবার এনটিপিসি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ভুমিধসের সঙ্গে এনটিপিসি প্রকল্পের কোন যোগ নেই’।
জোশীমঠ বিপর্যয়ের জন্য তাঁদের তরফে কোনও ত্রুটি নেই। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রককে চিঠি লিখে আরও এক বার তা জানিয়ে দিল এনটিপিসি। জোশীমঠের বিভিন্ন বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ার পর এবং জায়গায় জায়গায় ধস নামার পর বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা হয়। ভূতত্ত্ববিদদের একাংশ জানান, জোশীমঠ থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে এনটিপিসির তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণেই ক্রমশ আলগা হয়ে গিয়েছে জোশীমঠের মাটি। এনটিপিসির নির্মীয়মাণ এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নিয়ম মানা হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। এই প্রকল্পে ১২.১ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খোঁড়ার জন্য যে টানেল বোরিং মেশিন আনা হয়েছিল, তার আঘাতে বেরিয়ে এসেছে ভূগর্ভস্থ জল। এই জল বেরিয়ে আনার কারণে যেমন জোশীমঠের জলস্তর নেমে গেছে, তেমনই ফাঁপা হয়ে গিয়েছে জোশীমঠের নীচে থাকা নরম মাটি।
Joshimath, Uttarakhand | Land subsidence is an old issue here & this tunnel (an NTPC project) has no connection with it. This 12 km tunnel is dug by a boring machine: Bhuvnesh Kumar, Addl GM Geology, NTPC, on Joshimath residents blaming NTPC tunnel for land subsidence situation pic.twitter.com/7FBFDSA2RM
— ANI UP/Uttarakhand (@ANINewsUP) January 17, 2023
এদিকে, এনটিপিসি দাবি করেছে, ১২ কিলোমিটারের সুড়ঙ্গটি জোশীমঠ শহরের তলা দিয়ে যায়নি। বরং তা জোশীমঠ শহরের অন্তত ১ কিলোমিটার দূর দিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের সচিব বলেন, এনটিপিসি-র কারণে এই সব ঘটছে তা বলা যাবে না, ১৯৭৬ সালেও জোশীমঠে ভূমিধস হয়েছিল, তখন এনটিপিসির কোন প্রজেক্ট ছিল না।
জোশীমঠ কী ভাবে বসে যাচ্ছে, তা উপগ্রহচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে ইসরোর ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার (এনআরএসসি)। ইসরো দেখিয়েছে, ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ৯ নভেম্বর কতটা ভূমি বসে গিয়েছিল। তার পর দেখিয়েছে, ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি কতটা বসে গিয়েছে ওই এলাকার জমি।
Joshimath, Uttarakhand | There's no connection b/w the (NTPC) tunnel & land subsidence in Joshimath. 8 km in the 12 km tunnel will be built by drill boring & the rest by blasting: RP Ahirwar, Chief GM, NTPC, on Joshimath residents blaming NTPC tunnel for land subsidence situation pic.twitter.com/3gHK0fwYej
— ANI UP/Uttarakhand (@ANINewsUP) January 17, 2023
ইসরোর ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার রিপোর্ট দিয়েছে, গত ১২ দিনে আরও ৫.৪ সেন্টিমিটার তলিয়ে গেছে জোশীমঠ। গত বছর ২৭ ডিসেম্বর থেকে এ বছর ৮ জানুয়ারি অবধি, ৫.৪ সেমি বসে গেছে মাটি। ধসের কারণে ধীরে ধীরে মাটি আরও বসে যাবে বলেও আশঙ্কা করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
এনটিপিসির সহকারি ডিরেক্টর ভূতত্ত্ববিদ ভুবনেশ কুমার এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন যে এখানে (জোশীমঠ) ভুমিধস একটি পুরানো সমস্যা। এর সঙ্গে এই টানেলের (এনটিপিসির একটি প্রকল্প) কোনো সম্পর্ক নেই। এই ১২ কিলোমিটার সুড়ঙ্গটি একটি বোরিং মেশিন দিয়ে খনন করা হয়। এই টানেলের কারণে ভুমি ধসে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
এনটিপিসির প্রধান আর পি আহিরওয়ার এএনআইকে বলেছেন যে (এনটিপিসি) টানেল এবং জোশীমঠে ভূমি ধসের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। টানেলের যে জায়গাটিতে ব্লাস্টিং করা হবে সেটি জোশীমঠ থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে। টানেলটিও জোশীমঠের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে না। তাই এই টানেল নির্মাণের ফলে ভূমি ধসে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: < পাখির চোখ ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন, প্রান্তিক মানুষদের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল করার নির্দেশ মোদীর >
৩রা জানুয়ারি থেকে জোশীমঠে ফাটল গভীর হতে শুরু করলে, দ্বিতীয় দিন থেকেই মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফাটল থেকে জল বেরিয়ে আসার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশাপাশি প্রশাসনের উদ্বেগ বেড়েছে। এই জল কোথা থেকে আসছে তা খুঁজে বের করার জন্য এ জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজির বিজ্ঞানীদের একটি দল জোশীমঠে পাঠানো হয়েছে। তবে জোশীমঠে নোংরা জল বের হওয়ার রহস্য অধরাই রয়ে গেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজিকে এখন নোডাল এজেন্সি সিবিআরআই-এর কাছে সম্পূর্ণ রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। এনটিপিসি টানেলের কারণে জোশীমঠে জল বেরিয়ে আসছে? নাকি এর পিছনে অন্য কোন কারণ আছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হাইড্রোলজি সরকারের কাছে যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তা অর্ধেক অসম্পূর্ণ।
কিছু বাড়িতে এক থেকে দুই মিলিমিটার ফাটল ও মাটিতে ফাটল দেখা দিলেও নতুন করে আর কোন বাড়িতে ফাটল সৃষ্টি হয়নি বলেই জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। একই সঙ্গে ফাটল ভরাটের কাজও চলছে। অন্যদিকে জোশীমঠে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ত্রাণ কার্য ও গবেষণার কিছুটা থমকে গেছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছ ১৯ থেকে ২৩ জানুয়ারি জোশিমঠ, চামোলি এবং পিথোরাগড়ে বৃষ্টি এবং তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
হোটেল মাউন্ট ভিউ এবং মালারি ইন ভাঙার কাজ অব্যাহত, PWD গেস্ট হাউসও আজ ভেঙে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে চামোলির জেলাশাসক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন। রাস্তা থেকে শুরু করে এলাকার সাধারণ রাস্তাঘাট এবং মাঠে বসানো হয়েছে মেশিন, মাটির ভিতরের গতিবিধি খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীদের দল।