লকডাউনে যখন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য জোগারে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে ঠিক তখনই একদল মানুষ সুরা পানের জন্য হা-হুতাশ করে চলেছে। পরিস্থিতি দেখে অনেকেই বলছেন, একদলের জুটছে না খাবার, অন্যদিকে কেউ কেউ ১০০ টাকার মদ ৫০০ টাকায় কিনছে অথবা পাঁচশ টাকার বোতল সংগ্রহ করছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। মোটের উপর সারা রাজ্যেই এমন অভিযোগ উঠছে। কিন্তু কবে খুলবে মদের দোকান? আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউন না উঠলে কোনওভাবেই মদের দোকান খোলার কোনও সম্ভাবনা নেই। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও তারিখ উল্লেখ করতে পারছেন না কেউই।
শুক্রবার রাজ্যে লকডাউনের ১৩ তম দিন। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বা জরুরি পরিষেবা ছাড়া প্রায় সব কিছু বনধের আওতায় রয়েছে। রাজ্যে কয়েক হাজার মানুষ এ মুহূর্তে কোয়ারেন্টাইনে। ইতিমধ্যে করোনা পজেটিভের সংখ্যা অর্ধশতর মুখে। জেলায় জেলায় করোনা হাসাপাতাল তৈরি হয়েছে। আর এরমধ্যেই শুরু হয়েছে মদের আকাল ও কালোবাজারি। প্রধানমন্ত্রী ২২ মার্চ রবিবার দেশ ব্যাপী জনতা কার্ফুর ডাক দিয়েছিলেন। এরপর দিন অর্থাৎ সোমবার বিকেল ৫টা থেকেই শুরু হয়ে যায় লকডাউন। ফলে অনেকেই পছন্দের পানীয় ক্রয় করে ঘরে মজুত রাখতে পারেননি। আর এতেই মৌতাতে ছন্দপতন।
আরও পড়ুন: লকডাউনে মদ অমিল, শেভিং লোশন খেয়ে মৃত্যু
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তা সামাল দেওয়ার জন্য রাস্তায় নামতে হয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু সুরাপ্রেমীরা সেই তিমিরেই। লকডাউনের বাজারে হন্যে হয়ে তাঁরা খুঁজে বেরাচ্ছেন পছন্দের পানীয়, কিন্তু হাতে পেলে তো! কখনও রটেছে, দিনে ঘণ্টাদুয়েকের জন্য খুলতে পারে মদের দোকান। এমন রটনা ঠিক কিনা তা খোঁজ খবর করতে অনেকে পৌঁছে যাচ্ছেন মদের দোকানে। কিন্তু সেই যাওয়াই সার, অল্প সময়েই ভুল ভাঙছে সকলের। ফলস্বরূপ, বাংলা থেকে বিলেতি মদ কালোবাজারে তিন-চারগুন বেশি দামে বিকোচ্ছে, এমনই অভিযোগ। তবে তা-ও নাকি মিলছে না অধিকাংশ সময়ে। এই পরিস্থিতিতে মিষ্টির দোকান কিছুক্ষনের জন্য খোলার অনুমতি পাওয়ার পরই আশায় বুক বেঁধেছিলেন সুরাপ্রেমীরাও। তবে এখনও পর্যন্ত তেমন আশা দেখাতে পারছেন না রাজ্যের আবগারি কর্তারা।
আরও পড়ুন: ‘মাস্ক পরবো না’, জানালেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
এ রাজ্যের আবগারি দফতরের এক কর্তার কথায়, লকডাউনের মধ্যে মদের দোকান খোলার কোনও সম্ভাবনাই কার্যত নেই। যাঁরা রটাচ্ছেন, দু-এক ঘণ্টার জন্য দোকান খুলতে পারে, তাঁরা না জেনেই এসব বলছেন। তাছাড়া মদ কোনও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নয়, যা না পান করলে জীবন চলবে না। অর্থাৎ লকডাউন জারি থাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। একইসঙ্গে কেরলের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনাও নজরে রয়েছে রাজ্যের।
প্রসঙ্গ: সুরা রাজস্ব
ওই কর্তার দাবি অনুযায়ী, চলতি লকডাউনের ফলে ২০১৯-২০২০ আর্থিক বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আবগারি রাজস্ব ক্ষতি হল বাংলার। ক্ষতির বহর এতটা বাড়ার বিশেষ কারণ "ইয়ার-এন্ডিং"।
দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে আবগারি রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯হাজার ৩৪০ কোটি টাকায়। ২০১৮-১৯-এ ১০হাজার ৫৯০ কোটি টাকা হয়। এরপর ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ১৩-১৪ হাজার কোটি টাকা। তাই, এই লকডাউনের ফলে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে রাজ্য সরকারের আবগারি দফতর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন