Advertisment

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভুয়ো সংঘর্ষ, অপহরণের অভিযোগ তুললেন সেনাকর্মী

অভিযোগ ছিল, মণিপুরের নির্দোষ ছেলেদের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাঙাপাহাড় ক্যান্টনমেন্টের কাছে ভুয়ো সংঘর্ষে খুন করেছে সেনাবাহিনী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ধরমবীর সিং মণিপুর হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, সে রাজ্যের নিরপরাধ নাগরিকদের থেকে জোর করে টাকা আদায় এবং হত্যার ঘটনায় যুক্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল। (ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিজেই সেনাবাহিনীর কুকীর্তির অভিযোগ করলেন। তাও একেবারে আদালতে হলফনামা পেশ করে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ধরমবীর সিং মণিপুর হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, সে রাজ্যের নিরপরাধ নাগরিকদের থেকে জোর করে টাকা আদায় এবং হত্যার ঘটনা যুক্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল। এর আগে ধরমবীর সিংকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখার অভিযোগে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন দাখিল করেছিলেন তাঁর স্ত্রী রনজু সিং। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই হলফনামা দায়ের করেছেন ধরমবীর। মণিপুর হাইকোর্ট সেনাবাহিনীকে এ সম্পর্কে তাদের পাল্টা হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ১ অগাস্টের আগে ওই হলফনামা জমা দিতে হবে সেনাবাহিনীকে।

Advertisment

হলফনামায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১ জুলাই সকালে ধরমবীর সিংকে তাঁর ইম্ফলের কোয়ার্টার থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন সশস্ত্র জওয়ান। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল নন্দা ও মেজর রাঠোর। এর পর পাঁচ দিন ধরে ধরমবীর সিংকে একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। পাঁচ দিন পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে ছাড়া হয়। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। ধরমবীর আপাতত ছুটিতে রয়েছেন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে ইম্ফলে রয়েছেন।

আরও পড়ুন: কেন পালন করা হয় কার্গিল বিজয় দিবস?

ওই হলফনামায় ধরমবীর অভিযোগ করেছেন, সেনাবাহিনীর অন্যায় কাজকর্ম নিয়ে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করার পরে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ অফিসার তাঁর উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। হলফনামায় বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, মণিপুরের নির্দোষ ছেলেদের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাঙাপাহাড় ক্যান্টনমেন্টের কাছে ভুয়ো সংঘর্ষে খুন করেছে সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে হলফনামায় তিনি এও জানিয়েছেন যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস এবং চাপের কাছে নতিস্বীকার করে লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করেন তিনি। ধরমবীর সিং তাঁর হলফনামায় নিজের ও তাঁর পরিবারের উপর হামলার আশঙ্কার কথাও ব্যক্ত করেছেন।

publive-image মণিপুরে সেনাবাহিনির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের চিত্র

হলফনামায় মোট তিনটি ভুয়ো সংঘর্ষ ও জোর করে টাকা আদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনাগুলি সবই ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সবকটি ঘটনাতেই অভিযোগের তির ৩ নং কোর ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি যে ১৩ পাতার চিঠি লিখেছিলেন, সেটি আদালতের কাছে দাখিল করার অনুমতিও চেয়েছেন ধরমবীর সিং।

আরও পড়ুন, মণিপুরে ভুয়ো সংঘর্ষ, ফের শীর্ষ আদালতে হাজিরা দিতে হবে সিবিআই প্রধানকে

হলফনামায় প্রথম যে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়, তা ২০১০-এর ১০ মার্চের। মণিপুরের তিন যুবক, ফিজম নাওবি, আর কে রোনেল এবং টিএইচ প্রেমকে ডিমাপুরের একটি ভাড়াবাড়ি থেকে অপহরণ করে ৩ নং কর্পস ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং মেসের পিছনে তাদের খুন করা হয়। হলফনামায় এও জানানো হয়ে জানানো হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০-এর ১৭ মার্চ অসমের কার্বি আংলং এলাকার বোকাজান থানার অন্তর্গত লখিজান এলাকায় এদের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে গুয়াহাটি হাইকোর্টে একটি মামলা ঝুলে রয়েছে। ২০১০ সালের ১২ মার্চ মেজর টি রবি কিরণ প্রথম এ নিয়ে জি ও সি (জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং)-এর কাছে একটি চিঠি লিখে তিন মণিপুরি যুবককে অপহরণ করে অত্যাচারের পর হত্যার অভিযোগ আনেন। তাঁর চিঠিতে এ ব্যাপারে সেনাবাহিনির ইন্টেলিজেন্স সার্ভিলিয়েন্স উইংকে দায়ী করেছিলেন টি রবি কিরণ।

আরও পড়ুন: ফের ভেঙে পড়ল বায়ুসেনার বিমান

এরকমই আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ধরমবীর সিংয়ের হলফনামায়। সে ঘটনা ২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির। এক্ষেত্রে, সেন্ট ডমিনিক কলেজের ছাত্র সতীশ ও তার বন্ধুকে মাসিমপুরের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে খুন করার অভিযোগ ওই একই সেনা দলের বিরুদ্ধে। সতীশের বাবা-মা ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখে মণিপুরের ডিজিপি-র কাছে পুত্রের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

হলফনামার তৃতীয় অভিযোগ অগাস্টের ১৮ তারিখের ঘটনা নিয়ে। পিএলএ জঙ্গি জি জিতেশ্বর শর্মা ও তার এক বন্ধুকে ডিমাপুরের এস এম কলেজের কাছে একটি ভাড়া বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। দুজনের মৃতদেহই পুঁতে দেওয়া হয় ইউনিট মেসের পিছনে। হলফনামায় দাবি করা হয়েছে,  কোন জায়গায় মৃতদেহগুলি পুঁতে ফেলা হয়েছিল, তার সঠিক হদিশ জানে কয়েকজন ইউনিট মেম্বার।

হলফনামায় অভিযোগ করা হয়েছে ডিমাপুরের এক মহিলা ও তাঁর সন্তানকে অপহরণ করে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার পিছনে রয়েছে এই ইউনিটই।

সেনাবাহিনীর স্থানীয় জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, বিষয়টি আদালতের বিবেচনাধীন হওয়ায়, তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারবেন না।

fake encounter
Advertisment