রাফাল চুক্তি সংক্রান্ত নথি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দফতর থেকে চুরি হয়ে গেছে, কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল দাবি করেছিলেন এমনটাই। দিন দুয়েকের মধ্যেই অবশ্য সেই অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে জানিয়েছেন, “ফাইল চুরি গেছে, এই মন্তব্য একেবারেই ভুল।”
বুধবার কেন্দ্রের তরফ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, যে দেশের দুটি সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দু এবং এএনআই ও একজন উকিলের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় “ফৌজদারি পদক্ষেপ” নেওয়া হবে, কারণ তারা আদালতে পেশ করা নথির ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, এবং বিচারপতি এস কে কাউল ও কে এম জোসেফকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চের সামনে এই মর্মে আর্জি জানান বেণুগোপাল।
চার বছর আগে সম্পূর্ণ অন্য একটি ঘটনায় অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-এর আওতায় পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লির পুলিশ কমিশনার বিএস বসসি বলেছিলেন কেন্দ্রের পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক থেকে গোপন নথি ফাঁস করা হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। তারপর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে ৮ খানা চিঠি পাঠিয়ে দিল্লি পুলিশ জানতে চেয়েছে ঠিক কোন ধরণের নথি ছিল এগুলো। অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-এর আওতায় তাকে ফেলা যাবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই একাধিক বার বিষয়টি সম্পর্কে মনে করিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ডিসিপি(ক্রাইম) রাজেশ দেও জানিয়েছেন, "আমরা বারবার মন্ত্রককে বিষয়টি সম্পর্কে মনে করানোর চেষ্টা করেছি। এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে উত্তর আসেনি"।
আরও পড়ুন, হামলার জের, নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ বাতিল
পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক যদিও অন্যরকম কথা বলছে। "দিল্লি পুলিশের থেকে চিঠি পেয়েই আমরা জবাব দিয়েছিলাম। আমাদের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে ওদের কিছু প্রশ্ন ছিল। খুব শিগগির সেসবের উত্তর দেওয়া হবে", জানালেন মন্ত্রকের মুখপাত্র যোগেশ কুমার।
নীরজ কুমার গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলেন সরকারি নথি চুরিতে সরকারের ভেতরকার দুই ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের কার্যালয় শাস্ত্রী ভবনে বেআইনি ভাবে প্রবেশ করে নথি চুরি করা হয়েছিল। এর পরই প্রতারণা, জালিয়াতি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়।
অপরাধ বিভাগের আন্তঃ জেলা শাখা সব মিলিয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছিল। সেই ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সবাই। পুলিশের বক্তব্য, "অভিযুক্তদের হাত অনেক লম্বা। সরকারের গোপন নথি চুরি করার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে"।
অভিযুক্তদের মধ্যে অন্ততপক্ষে দু'জনের কাছে মন্ত্রকের কার্যালয়ের ডুপ্লিকেট চাবি ছিল, জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারী আধিকারিক ইন্সপেক্টর সুনীল কুমার ১৭ এপ্রিল, ২০১৫ তে চার্জশিট ফাইল করেছিল। পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে, চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে মনে করিয়ে এখনও 'যথাযথ জবাব'-এর অপেক্ষায় দিল্লি পুলিশ।