Advertisment

মিডডে মিলে নুন-রুটি খাচ্ছে বাচ্চারা, ভিডিও তুলে গ্রেফতার সাংবাদিক

জনসন্দেশ টাইমসের সম্পাদক বিজয় বিনীত বলেছেন, জনগণের স্বার্থে যে কোনও বিষয়ে প্রশ্ন তুললেই প্রশাসনের তরফে সেই কণ্ঠস্বর রোধ করা হচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
midday meal UP reporter

প্রতীকী ছবি

অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং জালিয়াতির অভিযোগে এক হিন্দি পত্রিকার সংবাদদাতা এবং সেউর গ্রামপ্রধানের প্রতিনিধি সমেত মোট তিনজনের নামে মামলা করল উত্তর প্রদেশ সরকার। সেউর প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়ারা মিডডে মিলে স্রেফ নুন-রুটি খাচ্ছে, এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার দশ দিনের মাথায় দায়ের করা হলো এই মামলা। ভিডিওটি তৈরি করেন পবন জয়সওয়াল নামে স্থানীয় হিন্দি দৈনিক জনসন্দেশ টাইমসের এক সাংবাদিক। অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (স্বরাষ্ট্র) অবনীশ অবস্থি বলেছেন, জয়সওয়ালকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনার ভিডিও তুলতে, যা কিনা মির্জাপুরের ওই প্রধানের "তথাকথিত প্রতিনিধির" দ্বারা সাজানো হয়েছিল।

Advertisment

সোমবার জয়সওয়ালের বিরুদ্ধে এফআইআর-এর সমালোচনায় যেমন সরব হয় এডিটর্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়া, তেমনই পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রী সতীশ দ্বিবেদীকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে "স্রেফ দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনা এবং বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হয় নি"। দ্বিবেদী আরও বলেন, তিনি পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাইবেন, কিসের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন রাজকুমার পালও। জয়সওয়াল জানিয়েছেন, তিনি স্রেফ সাংবাদিক হিসেবে নিজের কাজ করছিলেন, এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে সরকার নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি ঢাকতে চাইছে।

আরও পড়ুন: রাতারাতি মিড ডে মিলের নুন-ভাত বদলে গেল ডিম-ভাতে

ব্লক এডুকেশন অফিসার প্রেমশঙ্কর রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে এফাআইআর দায়ের হয়েছে মির্জাপুরের আহরাউরা থানায়। জয়সওয়াল এবং প্রধান প্রতিনিধি রাজকুমার পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে ভিডিওটি বানিয়েছেন, "রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়ে"।

ওদিকে অবস্থির দাবি, স্কুলের এক অস্থায়ী শিক্ষক এবং রাজকুমারের মধ্যেও শত্রুতা ছিল। তাঁর কথায়, "ওই সাংবাদিক এই শত্রুতার শিকার। গোটা ভিডিওটি বানানো হয়েছে যাতে ওই টিচারকে বরখাস্ত করা হয়, এবং প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিল...এবং স্রেফ ওই একজন সাংবাদিককেই ডাকা হয় কারণ তিনি রাজকুমারের পরিচিত।"

অবস্থি আরও বলেন, "ওই সাংবাদিক যদি সেখানে পৌঁছে দেখেন যে নুন-রুটি পরিবেশন করা হচ্ছে, তাহলে তাঁর অন্য সাংবাদিকদেরও জানানো উচিত ছিল। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্যই ছিল যাতে ভিডিও ভাইরাল হয়, যা কিনা অন্যায়, এবং অসাধু সাংবাদিকতা। শিক্ষা দপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এতে, যার ফলে আমরা ঘটনার একেবারে মূলে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলি। এমন তো কত বিধায়ক, রাজনীতিক, আধিকারিক রয়েছেন যাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে এবং তাঁরা বরখাস্ত হয়েছেন। কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও যদি হয়, তাতে দোষটা কোথায়?"

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বেসিক শিক্ষা অধিকারি (বিএসএ) প্রবীণ তিওয়ারিকে বদলি করে দেওয়া হয়। বরখাস্ত অর্থাৎ সাসপেন্ড হন ব্লক এডুকেশন অফিসার (বিইও) ব্রিজেশ সিং। এছাড়াও বরখাস্ত হন সেউর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুরারি লাল এবং ন্যায় পঞ্চায়েত সমন্বয়ক অরবিন্দ ত্রিপাঠিও। পরবর্তী নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে 'শিক্ষামিত্র' শান্তি দেবীর বেতন।

আরও পড়ুন: মিড ডে মিল কেলেঙ্কারি: প্রসঙ্গ মানবিকতা

এফআইআর-এ বলা হয়েছে, রাজকুমারের কাছে খবর ছিল যে স্কুলে শুধুমাত্র রুটিই বানানো হয়, এবং তরিতরকারি পাওয়া যায় না। কিন্তু গ্রামপ্রধানকে সেকথা না জানিয়ে তিনি স্থানীয় সাংবাদিক পবন জয়সওয়ালের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে বলেন, পবন যেন মিডডে মিলে "রুটি এবং নুন" পাচ্ছে পড়ুয়ারা, এরকম একটি ভিডিও তৈরি করেন। পরে ওই ভিডিওটি প্রচারের জন্য এক টিভি রিপোর্টারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ওই স্কুলের নিম্নমানের খাবার সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ তাঁর কানে আসে, এবং ২২ অগাস্ট রাজকুমারের কাছ থেকেও ওই একই খবর পেয়ে তিনি ঠিক করেন, তড়িঘড়ি স্কুলে গিয়ে ভিডিও বানাবেন। তাঁর দাবি, সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর এক কর্মীকে তিনি ভিডিওটি পাঠান, এবং তারপর স্থানীয় মিডিয়ার একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করেন।

জনসন্দেশ টাইমসের সম্পাদক বিজয় বিনীত বলেছেন, জনগণের স্বার্থে যে কোনও বিষয়ে প্রশ্ন তুললেই প্রশাসনের তরফে সেই কণ্ঠস্বর রোধ করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, যে কোনও মূল্যে তাঁদের সহকর্মীর পাশে দাঁড়াবেন তাঁরা।

অন্যদিকে, উত্তর প্রদেশ সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে এডিটর্স গিল্ড বলেছে, এই ধরনের প্রতিবেদন আমাদের বুঝিয়ে দেয় সাহসী সাংবাদিকতার মূল্য। "খারাপ খবর নিয়ে আসা দূতকে হত্যা করার যে চিরাচরিত নিদর্শন আমরা পাই, এটি তারই নিষ্ঠুর উদাহরণ। এই ধরনের খবর ফাঁস হলেই গণতান্ত্রিক সমাজে সাহসী সাংবাদিকতার মূল্য বোঝা যায়। সমস্যার সমাধান না করে উল্টে সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই ফৌজদারি মামলা করা, স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো ঘটনা। ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং পুলিশ ব্যবহার করে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাবে না," বলা হয় গিল্ডের তরফে।

uttar pradesh
Advertisment