Advertisment

'সবকিছু হঠাৎ করেই ঘটে গেল'! সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর মা, মোরবি ঝুলন্ত সেতু বিপর্যয়ের বলি ৫৫ শিশু

“সবকিছু হঠাৎ করেই ঘটে গেল। আমরা যখন ফিরছিলাম তখন বিকট শব্দ শুনতে পাই। তার পরই অসহায় মানুষগুলোর আর্তনাদ। ধীরে ধীরে সব কেমন যেন মিলিয়ে গেল”।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Morbi bridge collapse, police say no structural tests done during bridge repair

মোরবির সেতু বিপর্যয়ের তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

মোরবিতে ঝুলন্ত সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৩৫ জন। তার মধ্যে রয়েছে ৫৫ জন শিশু। শোকে পাথর তাদের পরিবার-পরিজনরা। এখনও মানতে পারছেন না পরিবারের সব থেকে ছোট সদস্যটি আর নেই। টিভি খুলে আর কার্টুনের জন্য বায়না করার কেউ নেই। মোরবি দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন। মুহূর্তের উল্লাস কেড়ে নিয়েছে শতাধিক প্রাণ। আজও বুক ফাটা কান্না-হাহাকারই সঙ্গী নিহতদের পরিজনদের।

Advertisment

বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ, বিবার সন্ধ্যায়, আফ্রিদশাহ এবং তার পরিবারের সাত সদস্য ঐতিহাসিক ঝুলন্ত সেতু দেখতে যান।এক মুহূর্তেই সব শেষ। বেঁচে ফিরেছেন মাত্র একজন। 

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, আফ্রিদশাহ, তার বোন অমিয় ওরফে ইলশা (৭), মা আনিশা (৩৩),খুড়তুতো বোন মুসকান শাহমাদার (২১), নওয়াজশাহ বনভা (১৩) এবং তামান্না বনভা (৯), এবং নাসিম বানভা সবাই সেদিন ব্রিজ বিপর্যয়ের বলি। আফ্রিদশাহের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার দিদিমা। তিনি বলেন, “বাইরের ঘরে রোজ নাতির সঙ্গে টিভি দেখতাম। ও কার্টুন দেখতে খুব ভালবাসত। আজ ও নেই এটা যেন বিশ্বাসই করতে পারছি না"।

এক মুহূর্তেই যেন সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। ঘটনার দিনের কথা স্মরণ করে মুসকানের মা জামিলা বলেন, “সবকিছু হঠাৎ করেই ঘটে গেল। আমরা যখন ফিরছিলাম তখন বিকট শব্দ শুনতে পাই। তার পরই অসহায় মানুষগুলোর আর্তনাদ। ধীরে ধীরে সব কেমন যেন মিলিয়ে গেল”। ইলশা’ খুবই মেধাবী ছিল জানালেন তার স্কুলের এক শিক্ষিকা। সম্প্রতি আঁকা প্রতিযোগিতাতেও প্রথম হয় সে”। এমন পরিণতি মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে জানালেন তিনি।

আরও পড়ুন : < ৬ রাজ্যের সাত বিধানসভা আসনে চলছে ভোট গণনা! ব্যবধান বাড়ানোই লক্ষ্য বিজেপির >

গুজরাটের মোরবিতে ব্রিজ বিপর্যয়ের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। তদন্তে নেমে পুলিশ মোরবি পুরসভার প্রধান অফিসার সন্দীপসিংহ জালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেই জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে ‘ওরেভা’ গ্রুপের নিযুক্ত বেসরকারি ঠিকাদাররা ব্রিজটির সংস্কারের ক্ষেত্রে কোনও বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন করেনি। এমনকী ব্রিজটির সংস্কার ও মেরামতের সময় কোনও ধরনের কাঠামোগত স্থিতিশীলতাও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি।

মোরবি জেলা পুলিশ সুপার পি এ জালার নেতৃত্বে এই বিরাট বিপর্যের তদন্ত চলছে। এসপি ডেকে পাঠিয়েছিলেন মেরাবি পুরসভার প্রধান অফিসার সন্দীপসিং জালাকে। ওই পুর অফিসারকে প্রায় চার ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। মোরবির ঝুলন্ত ওই সেতুর চুক্তি সম্পর্কিত নথিপত্র যাচাই করে দেখেছে পুলিশ।

ব্রিজ বিপর্যয়ের তদন্তের বিষয়ে ওয়াকিবহাল সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মোরবির সেতুটির সংস্কারের কাজে ‘ওরেভা’ গ্রুপ দেব প্রকাশ ফেব্রিকেশন লিমিটেড নামে এক সংস্থাকে নিযুক্ত করেছিল। কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন ছাড়াই ওই সংস্থা ব্রিজ সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিল। মোরবির পুলিস সুপার পি এ জালা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ওই সংস্থা ব্রিজের কাঠামোগত স্থিতিশীলতা নিয়ে কোনও পরীক্ষা বা মূল্যায়ন করেনি।

অন্যদিকে, বুধবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জেনেছে সংস্কারের জন্যই ব্রিজটি সাত মাসের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে ওরেভা গ্রুপের একটি অংশ অজন্তা ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে মোরবি পুরসভা ১৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করে ওই ব্রিজ সংস্কারে জন্য।

ঘটনাস্থল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বাড়িতে বসে শোকে পাথর তিনি। সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩৫ জনের। তার মধ্যে রয়েছে ৫৫ জন শিশু। শোকার্ত শহর! চারপাশে একটাই প্রশ্ন এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা কী কোন ভাবে এড়ানো যেত না? প্রিয়াঙ্কা ও আরশাদের পরিবারের প্রশ্ন, সেতু না সারিয়ে কীভাবে তা সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হল?

ঘটনায় প্রিয় জনকে হারিয়েছেন বিক্রম। তাঁর প্রশ্ন, “কেন আধিকারিকদের পরিবর্তে নীচু তলার কর্মীদের গ্রেফতার কথা হল?  তিনি বলেন,  ওরেভার কোম্পানির মালিকদের গ্রেফতার করা হয়নি। পৌরসভার আধিকারিকরা বলছেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে তা তারা জানতেন না। এটা কী করে সম্ভব? সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হল না”। প্রশাসনের তরফে নিহতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের কথা বলা হলেও শোকে পাথর অনেক পরিবার সেই ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার করেন।

gujrat Morbi Bridge Collapse
Advertisment