ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক সম্পদ 'বোমা মেরে' ধ্বংস করতে চেয়েছিল মোগলরা, মনে করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।
আগরতলার এক ক্লাবের আয়োজিত শারদ সম্মান অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়ে গিয়ে বিপ্লববাবু বলেন, "ত্রিপুরায় এখনও এমন অনেক সম্পদ আছে, যা অনেকের অজানা। কিন্তু মোগলরা বোমা মেরে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল ত্রিপুরার শিল্প এবং স্থাপত্য।" পাশাপাশি তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন ত্রিপুরার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, সৌন্দর্য, এবং ঐতিহ্যের কথা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: অষ্টম শ্রেণি থেকেই উপার্জনের চিন্তা করো, শিক্ষার্থীদের উপদেশ বিপ্লব দেবের
মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, "সবাই যদি অন্তত পাঁচটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে (সোশ্যাল মিডিয়ায়) পোস্ট করেন, তবে ত্রিপুরা পর্যটনের আর বিশেষ বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন হবে না, সারা বিশ্বে ত্রিপুরার জনপ্রিয়তা আপনা থেকেই ছড়িয়ে যাবে।"
কিন্তু মোগলরা ত্রিপুরার কোন কোন ঐতিহাসিক স্থাপত্যে 'বোমা মারতে' চেয়েছিল, তা স্পষ্ট করা হয় নি ওই বিবৃতিতে।
সাহিত্যিক তথা ইতিহাসবিদ অশোক দেব বলছেন যে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের বড় ভাই তথা বাংলা এবং ওড়িশার সুবেদার শাহ সুজা ছোট ভাইকে সিংহাসনচ্যুত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আরাকান (বর্তমানে বর্মার রাখাইন অঞ্চল) পালিয়ে যান আশ্রয়ের খোঁজে। পথে পড়ে তিপ্পেরা (ত্রিপুরা) অঙ্গরাজ্য, যেখানে তিনি এর আগে আশ্রয় চেয়েছিলেন মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য বাহাদুরের কাছে।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় স্পেশাল ইকোনমিক জোন, বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগে আশাবাদী বিপ্লব
অশোকবাবু জানাচ্ছেন, "মোগল যুবরাজ শাহ সুজাকে যাতে সম্রাটের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই মর্মে মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্যকে চিঠি লেখেন ঔরঙ্গজেব। কিন্তু সেই নির্দেশ না মেনে ঔরঙ্গজেবকে শান্ত করার চেষ্টায় হাতি এবং অন্যান্য উপহার নজরানা পাঠান মহারাজা। তাতে ফল না হওয়ায় ত্রিপুরা ছেড়ে আরাকানের দিকে পালিয়ে যান শাহ সুজা।"
শাহ সুজা নির্মিত সুজা মসজিদ আজও দেখা যায় ত্রিপুরার উদয়পুর শহরের বদরমোকাম এলাকায়। সপ্তদশ শতাব্দীতে তিপ্পেরা রাজ্যের রাজধানী ছিল উদয়পুর, যা আজও তার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।
ইতিহাসবিদরা এও মনে করেন যে ১৬২৫ সালে তিপ্পেরার সিংহাসনে মহারাজা কল্যাণ মাণিক্য বসার আগে ধনসম্পত্তির খোঁজে সেখানকার একাধিক মন্দির এবং জলাশয় নষ্ট করে মোগল সৈনিকরা।