অবশেষে জামিন পেলেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। রাউত মুম্বইয়ের পাত্র চাউল কেলেঙ্কারিতে আর্থিক তছরুপের দায়ে দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন তিনি। মুম্বাইয়ের পিএমএলএ আদালত ২ নভেম্বর তার বিচারবিভাগীয় হেফাজত ১৪ দিন বাড়ায়। আজ জামিন পেলেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। মুম্বইয়ের একটি বিশেষ আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। আদালত রাউতের জামিনের আবেদনের রায় সংরক্ষিত রেখেছিল যা আজ, বুধবার ঘোষণা করার কথা ছিল।
Advertisment
গত ২১ অক্টোবর তার জামিন আবেদনের শুনানি মুলতবি করেন আদালত। সেই সময় সঞ্জয় রাউতের বিচার বিভাগীয় হেফাজতও বাড়ানো হয়। এই মামলায় ইতিমধ্যে চার্জশিট দাখিল করেছে ইডি। এতে সঞ্জয় রাউতকে মামলার অন্যতম আসামি হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এতে বেআইনি আর্থিক তছরুপ মামলার আসামি হিসেবে রাউতের নাম উল্লেখ করা হয়। যদিও রাউত বিশেষ আদালত ফর প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ) মামলায় জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন।
অবশেষে জামিন পেলেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত।
প্রায় ৪ মাস জেলে ছিলেন
Advertisment
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা সঞ্জয় রাউতের জন্য আদালতের এই রায় তাৎক্ষণিক স্বস্তি এনে দিয়েছে। ৩১ জুলাই রাউতকে ইডি গ্রেপ্তার করেছিল। শিবসেনা সাংসদের জামিনের আবেদনের শুনানি বেশ কয়েকবার চলতে থাকে, কিন্তু প্রতিবারই আদালত থেকে তার বিচার বিভাগীয় হেফাজত বাড়তে থাকে। কিন্তু অবশেষে জুলাই মাস থেকে কারাগারে থাকা রাউত জামিন পেয়েছেন।
প্রথমে ৮ আগস্ট এবং পরে ২২ আগস্ট পর্যন্ত রিমান্ড বাড়ানো হয়
প্রথমে সঞ্জয় রাউতের রিমান্ড ৮ আগস্ট পর্যন্ত এবং তারপর ২২ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। একই সঙ্গে তৃতীয় দফায় তার রিমান্ড ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মুম্বাইয়ের পাত্র চাউল জমি কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থ পাচারের অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাকে গ্রেফতার করে।
পাত্র চাউল প্রকল্পটা কী?
সিদ্ধার্থ নগর। যার অন্য নাম পাত্র চাউল। মুম্বইয়ের উত্তর শহরতলির গোরেগাঁওয়ে এই চাউল। এখানে ৬৭২টি বাড়ি আছে। ৪৭ একর এলাকাজুড়ে এই চাউল। ২০০৮ সালে মহারাষ্ট্র হাউসিং অ্যান্ড এরিয়া ডেভলপমেন্ট অথরিটি (এমএইচএডিএ) এই চাউলের উন্নয়নভার হাতে নেয়। উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় গুরু আশিস কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডকে (জিএসিপিএল)। ওই সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৬৭২টি বাড়িরই উন্নয়ন ঘটানোর। পাশাপাশি, এলাকার উন্নয়ন ঘটানোরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই সংস্থাকে। এনিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল জিএসিপিএল, আবাসিক সোসাইটি আর এমএইচএডিএর মধ্যে। তারপর থেকে গত ১৪ বছর ধরে পাত্র চাউলের আবাসিকরা তাঁদের বাড়ি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছেন।
ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে কথা ছিল জিএসিপিএল পাত্র চাউলের ৬৭২ জন আবাসিককে নতুন ঘর বানিয়ে দেবে। আর ফ্ল্যাটগুলোর উন্নয়ন করবে এমএইচএডিএ। চাউলের বাকি জমি বিভিন্ন উন্নয়নকারী সংস্থাকে বেচে দেওয়া হবে।
কিন্তু, ইডির দাবি, সঞ্জয় রাউতের ঘনিষ্ঠ প্রবীণ রাউত এবং গুরু আশিস কনস্ট্রাকশনের অন্যান্য ডিরেক্টররা এমএইচএডিএকে ভুলপথে চালিত করেছিল। আর, ওই চাউলের জমিতে আবাসন তৈরি হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার গ্রাউন্ড ফ্লোর ন’টি প্রোমোটার বা ডেভলপিং সংস্থাকে বেচে দিয়েছিল। তা থেকে লাভ করেছিল ৯০১.৭৯ কোটি টাকা। আর, এমএইচএডিএর অংশে ৬৭২ জন বাস্তুচ্যুত আবাসিকের যে ঘর বানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বানিয়েও দেয়নি।
এরপর জিএসিপিএল ‘মিডোস’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করে। যে জমিটা বেচে দিয়েছিল সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে। সেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে ক্রেতাদের থেকে ১৩৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ইডির অভিযোগ, এই পুরো অপরাধটা করে গুরু আশিস কনস্ট্রাকশন ১,০৩৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল।