সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বড় পদক্ষেপ ভারতের। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শনিবার জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করার জন্য রাষ্ট্রসংঘের তহবিলে ভারত ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার অনুদান দেবে। জঙ্গি মোকাবিলা এবং জঙ্গি দমনে পরিকাঠামো বৃদ্ধির কাজে এই অনুদান কাজে লাগবে।
বিদেশমন্ত্রী বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মোকাবিলার করার জন্য রাষ্ট্রসংঘের তহবিলে চলতি বছর ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার অনুদান দেবে ভারত। সেই অনুদান থেকে সদস্য দেশগুলির পরিকাঠামো উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গি হামলার মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”
শনিবার বিদেশমন্ত্রী বলেন, “ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে সন্ত্রাসবাদী কার্য্যকলাপ বেড়েই চলেছে। এমনকী যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্ত্রাসবাদের বীজ বপণ করার কাজ চলছে ”। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাতে পদক্ষেপ করলেও জঙ্গি কার্যকলাপ ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। জয়শঙ্কর বলেন, “সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বিগত ২০ বছর ধরে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তাসত্ত্বেও এশিয়া ও আফ্রিকাতে সন্ত্রাসবাদের বিপদ ক্রমেই বাড়ছে।”
মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) ১২৬৭ তালিকার অধীনে সন্ত্রাসীদের কালো তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট সকল সদস্য দেশের সমর্থন করা উচিত। কোন দেশেরই সন্ত্রাসবাদকে প্রশয় দেওয়া উচিৎ নয়”।
মুম্বইয়ে নিরাপত্তা পরিষদের কাউন্টার-টেরোরিজম কমিটির বিশেষ সভায় তিনি বলেন, “২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বই হামলায় নিহতদের মধ্যে ছয় মার্কিন নাগরিকও ছিলেন। “আমরা ভারত এবং সেই সমস্ত দেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি যে সকল দেশের মানুষ সেদিন সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন। মুম্বাই সন্ত্রাসবাদী হামলার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, ক্ষতিগ্রস্তদের এবং জনগণের প্রতি আমাদের একমাত্র দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, "এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ১৪ বছর ধরে ভারত এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে চলেছে।
পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদী হামলার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার পক্ষেও জোরালো সওয়াল করেন তিনি। তিনি বলেন, অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া কখনই উচিৎ নয়, তা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে সব দেশের জন্যই। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী বলেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের প্রচেষ্টা আরও কার্যকর হবে। এজন্য আমরা অনেক সন্ত্রাসবাদীকে জাতিসংঘের ১২৬৭ কমিটিতে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য ভারতের সঙ্গে কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট সকল দেশের উচিত এই প্রস্তাবগুলোকে সমর্থন করা”।
এর আগে রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদে হাফিজের ছেলে তালহাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণার পথে ভারত-আমেরিকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় চিন। পাকিস্তানি ‘জঙ্গি’ হাফিজ তালহা সইদকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার প্রস্তাবকে বাধা দিয়েছে চিন। পাকিস্তানের কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা প্রধান হাফিজ সইদের ছেলে তালহা সইদকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব পেশ করেছিল নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন। সেই প্রস্তাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় চিন।
আরও পড়ুন : < হ্যালোউইন উত্সবে মর্মান্তিক পরিণতি! সিওলে পদপিষ্ট হয়ে মৃত দেড়শোরও বেশি >
রাষ্ট্রসংঘে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কুখ্যাত ‘জঙ্গি’ হাফিজ তালহা সইদ, লস্কর-ই-তইবা প্রধান হাফিজ সইদের ছেলেকে ‘কালো তালিকা’ভুক্ত করার প্রস্তাব তোলে। চিন সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। ফিজ তালহা সইইদ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তইবার মাথা এবং ২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সইদের ছেলে। চলতি বছরের এপ্রিলে ভারত সরকার তাকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করে।রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আবারও পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করল চিন।
ভারত ও আমেরিকা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পেশ করে। এই প্রস্তাবের অধীনে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদের ছেলে তালহাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করে তাকে ‘নিষিদ্ধ’ করার কথা ছিল। চিন এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়ে সেই রাস্তা বন্ধ করে। এর আগেও পাকিস্তানি জঙ্গি শাহিদ মেহমুদের ক্ষেত্রে একই অবস্থান নেয় চিন।