সেনার কাণ্ডজ্ঞানহীন ভূমিকায় তপ্ত নাগাল্যান্ড। মন জেলার ওটিং গ্রামের ঘটনায় ফুঁসছে সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্নের মুখে নাগা শান্তি আলোচনা। মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করে কবে ফের শান্তি আলোচনা সম্ভব তা নিয়েই সন্দিহান মধ্যস্থতাকারী গোষ্ঠীর সদস্যরা।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে প্রতিরক্ষা বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক শীর্ষ আধিকারিক বলেছেন, 'এটা নাগাল্যান্ড পুলিশের অভিযান ছিল না। ঘটনার দায় রাজ্যের পুলিশ বা রাজ্য সরকারের উপর চাপানো যাবে না। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে মারাত্মক ভুলের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। ফলে নাগা জনগোষ্ঠী বনাম ভারত রাষ্ট্রের সংঘাতের তত্ত্ব ফের গাঢ় হচ্ছে। ফলে সাময়িকভাবে হলেও এতে জঙ্গি সংগঠনগুলির হাত শক্ত হবে। এখন কেন্দ্রকে নিপুণ হাতে অবস্থার মোকাবিলা করতে হবে। প্রয়োজন অপরাধীদের দ্রুত শাস্তিবিধান করা, তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।'
গত কয়েকবছরে এনএসসিএন-এর বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে আলোচনার টেবিলে বসাতেপেরেছে মোদী সরকার। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, খাঙ্গো কন্যাক ও নিকি সুমি গোষ্ঠী। এরা একসময় আলোচনা বিরোধী গোষ্ঠী এনএসসিএন (খাপলাং বা কে) গোষ্ঠূবুক্ত ছিল। খাপলাংয়ের মিলিটারি কমান্ডার ছিলেন নিকি সুমি। ফলে মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
সেনার গুলিতে মন জেলায় গ্রামবাসী হত্যার পর নাগাল্যান্ডের ভারতপন্থী গোষ্ঠীগুলিও চাপে পড়েছে। এনএসসিএন (খাপলাং)-এর আলোচনপন্থী ও কিটোভি গোষ্ঠী ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াবে। জোড়াল হবে স্বাধীন নাগাল্যান্ডের দাবি। ফলে ব্যহত হতে পারে শান্তি আলোচনা। নাগা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, 'জনগণের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতপন্থী এনএসসিএন খাপলাং বা কিটোভিগোষ্ঠী, যারা আলোচনায় বসেছে এখন তারা কীভাবে চুপ করে থাকবে? কেউ অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার ঝুঁকি নেবে না।'
কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্রে বলছে, 'পরিস্থিতি নিপুণ হাতে মোকাবিলা করা হলে মন জেলার আঁচ খুব একটা পড়বে না। সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এই ধরনের হিংসার ঘটনা যদিও নাগাল্যান্ডে বহু না হওয়ায় কিছুটা হইচই হবেবে। কিন্তু বেশিরভাগ গোষ্ঠীই জানে তারা কী চায় এবং সে বিষয়ই আলোচনা হবে।'
বিবৃতি জারি করে হত্যার ঘটনাকে নাগাল্যান্ডের ‘কালো দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এনএসসিএন (আইএম)। সংগঠনটি বলেছে, 'ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ঘটনার দাগ কোনওদিন মুছতে পারবে না। প্রায় দুই দশক ধরে রাজনৈতিকস্তরে ইন্দো-নাগা শান্তি আলোচনা চললেও নাগাদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা জারি রয়েছে।' সম্পূর্ণ বিষয়টিকে '১৯৯৭ সালের পর এই ধরমের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক ও একতরফা' বলে দাবি করা হয়েছে।
আলোচনাপন্থী নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ এনএনপিজি মন জেলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ। সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য জি জিমোমি বলেছেন, 'ইন্দো-নাগা শান্তি আলোচনা শেষ। এখন ভারত সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তাদের মনোভাব দেখে পরবর্তী পন্থা ঠিক হবে। শান্তি আলোচনার জন্য কেন্দ্রকে নাগাল্যান্ড থেকে আস্পা প্রত্যাহার করতে হবে। এই আইন না থাকলে রবিবারের ঘটনা ঘটতো না।'
সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ নাগাল্যান্ডে মানুষের ক্ষোভ বিশাল আকার ধারণ করেছে। যার সুযোগ নিতে পারে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ফলে প্রশ্নের মুখে নাগা শান্তি আলোচনা।
Read in English
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন