বিপাকে কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে অধীরের ‘রাষ্ট্রপত্নী’মন্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে একটি নোটিশ জারি করা হয়। সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি ভিডিও ক্লিপে, চৌধুরীকে মুর্মুকে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলে উল্লেখ করতে শোনা যায়। এরপরই অধীরের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিপ্তে সুর চড়াতে শুরু করে বিজেপি।
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া গান্ধীকে তলবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে "রাষ্ট্রপত্নী" হিসাবে উল্লেখ করেই বিতর্কে জড়ান কংগ্রেস সাংসদ। রাষ্ট্রপতিকে অবমাননার অভিযোগ এনে অবিলম্বে তাঁর এই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সোচ্চার হন বিজেপি নেতারা। যদিও বিরোধীদের দাবিকে কার্যত নস্যাৎ করে এদিন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই”।
সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধীর বলেন, ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি ভুল করে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলে ফেলেছিলাম। বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে এটাকে নিয়ে একটা ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও অধীরের এই দাবি মানতে রাজি নন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। গতকাল অধীরের এই মন্তব্য নিয়ে লোকসভায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি সাংসদ ও মন্ত্রীরা। তালিকায় ছিলেন, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সহ বিজেপির প্রথম সারির নেতারা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “কংগ্রেস নেতা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। এই মন্তব্য সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের মর্যাদাকে অবমাননা করে। দেশ জানে যে কংগ্রেস উপজাতি বিরোধী, দলিত বিরোধী এবং নারী বিরোধী। তাঁর এই মন্তব্যের জেরে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ” ।
আরও পড়ুন : <কর্ণাটকে বিজেপি নেতা খুনের ঘটনায় পুলিশের জালে ২, ড্যামেজ কন্ট্রোলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী>
অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন,” যখন থেকে দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল তখন থেকেই তিনি কংগ্রেসে তাঁকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে এবং তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে, কংগ্রেসীরা সাংবিধানিক পদে মহিলাদের অবমাননা করেই চলেছে৷ আমাদের দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতিকে অবমাননা করার জন্য সংসদে এবং প্রকাশ্যে কংগ্রেসের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ”। এদিকে এই বিক্ষোভের জেরে বেলা ১২ টায় লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে, জাতীয় মহিলা কমিশন একটি নোটিশ জারি করে। যাতে আগামী ৩রা অগাস্ট প্যানেলের সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে। সেই সঙ্গে অধীরকে তাঁর মন্তব্যের একটি লিখিত ব্যাখ্যাও দিতে বলা হয়েছে। কমিশনের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ কংগ্রেস নেতা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘রাষ্ট্রপত্নী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। এই মন্তব্য সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের মর্যাদাকে অবমাননা করে, এবং এটি মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে অপমান করার সামিল”।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মধ্যপ্রদেশে ইতিমধ্যেই অধীরের বিরুদ্ধে এফআইআর ও দায়ের করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের দিনদরি জেলায় অধীরের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: <ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে বায়ুসেনার মিগ-২১ বিমান, মৃত ২ পাইলট>
ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩(বি) এবং ৫০৫(এ) ধারায় অধীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জগন্নাথ মারকাম বলেছেন যে বিজেপি কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।