দিনটা ছিল ১২ নভেম্বর। তখন দীপাবলিতে মেতে গোটা ভারত। উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকা পড়েন ৪১ শ্রমিক। এরপর দীর্ঘ অগ্নিপরীক্ষা। গোটা দেশ আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলেছে। প্রতীক্ষা ছিল, কবে এই অগ্নিপরীক্ষার সমাপ্তি ঘটবে। এই প্রতীক্ষা মঙ্গলবার শ্রমিকদের মুক্তির আগে পর্যন্ত সমগ্র দেশবাসীকে টানাপোড়েনে রেখেছিল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এমনটাই লিখেছেন এনডিআরএফ প্রধান (ডিজি) অতুল কারওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে পাহাড় প্রমাণ বাধা অতিক্রম করলেন উদ্ধারকারীরা।
অগার ড্রিলিং মেশিনের ব্যর্থতা
ভারী মেশিন ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা সফল হয়নি। প্রথমে কম ক্ষমতা, পরে উচ্চক্ষমতার অগার ড্রিলিং মেশিন ব্যবহার করা হয়। বিমানের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গুহাবন্দি শ্রমিকদের সাহায্যের জন্য সেটাই ছিল দ্রুততম পদ্ধতি। পাশাপাশি, পাইপের সাহায্যে শ্রমিকদের খাবার, জল আগে থেকেই দেওয়া হচ্ছিল। ঈশ্বরের অসীম করুণা যে শ্রমিকরা পুরোপুরি অন্ধকারের মধ্যে ছিলেন না। ধ্বংসস্তূপের এপাশেই ছিল বিদ্যুতের ব্যবস্থা, কাজ সমাপ্ত হওয়া দুই কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গ। সব মিলিয়ে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল। যা গুহাবন্দি পরিস্থিতিতেও শ্রমিকদের মনোবল বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
কেন ভাঙল অগার মেশিন?
উদ্ধারকারীরা যে অগার মেশিনের ওপর আস্থা রেখেছিলেন, তা ভেঙে যায়। কারণ, যে ধ্বংসস্তূপে ছিদ্র করার চেষ্টা হচ্ছিল, তাতে ছিল সুড়ঙ্গের ছাদ থেকে ধসে পড়া ধাতব রড, গার্ডার এবং পাইপের মত আবর্জনা। সেই সব কারণে উদ্ধারকাজ বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আর, খোঁজ চালানো হয়েছে বিকল্প পথের। মোট পাঁচটি পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখেছিলেন উদ্ধারকারীরা। যার মধ্যে অন্যতম ছিল, দুটি জায়গায় ওপর থেকে সরাসরি মাটি খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো। তার মধ্যেই বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) সমস্ত সরঞ্জাম টানেলের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্রুত যাতায়াতযোগ্য রাস্তা তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন- সামনেই সিওপি২৮, ভারতের বিরাট ভূমিকা, জলবায়ু সম্মেলনে কেন গোড়াতেই সক্রিয় নয়াদিল্লি?
চেষ্টার খামতি ছিল না
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধারকাজের নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন। নিজেরা উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখতে উপস্থিত হয়েছেন। যা নিশ্চিত করেছে, গোটা সরকার পাশে। উদ্ধার অভিযানে কোনও অভাব থাকবে না। দক্ষতা থেকে অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি থেকে সরঞ্জাম, যখনই যা দরকার পড়েছে, নিয়ে আসা হয়েছে উদ্ধারকাজের জায়গায়। ওড়িশা ও গুজরাটের মত দূর জায়গা থেকে ভারী যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ এসেছেন। ঝাঁসি এবং দিল্লি থেকে শ্রমিক আনা হয়েছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ)-এর আধিকারিক এবং দলগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। এককথায়, চেষ্টার কোনও খামতি ছিল না।