নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ডের চার অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকর। শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় নির্ভয়ার চার ধর্ষক মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা, অক্ষয় কুমার সিংয়ের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
চতুর্থ বারের পরোয়ানায় নির্ভয়ার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর হল। এর আগে তিনবার সেই নির্দেশ দেওয়া হলেও আইনি সংস্থানের কথা বলে নানান টালবাহানায় ফাঁসির তারিখ পিছিয়েছে। আশঙ্কা ছিল, ফের কোনও আইনি ফাঁক বার করে এবারও সেই সুযোগ অপরাধীরা নিতে পারে কিনা- তা নিয়েই। বৃহস্পতিবার রাতেও চার অপরাধীর তিনজন দিল্লি হাইকোর্টে ফাঁসি মুকুবের আর্জি জানায়। রাতেই চলে শুনানি। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের ফাঁসির আদেশই বহাল রাখে হাইকোর্ট। নৃশংস ঘটনার সাত বছর পর শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হল ২০১২ দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের চার অপরাধীর।
দীর্ঘ লড়াই শেষে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে মেয়ের ধর্ষকদের। আইনি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হসিল হয়েছে। স্বস্তিতে নির্ভয়ার মা আশাদেবী। ফাঁসির সাজা কার্যকরের পর সংবাদ মাধ্যমের কাছে সেই কথাই জানান তিনি।
#WATCH Asha Devi, mother of 2012 Delhi gang rape victim says, "As soon as I returned from Supreme Court, I hugged the picture of my daughter and said today you got justice". pic.twitter.com/OKXnS3iwLr
— ANI (@ANI) March 20, 2020
চলতি সপ্তাহের শুরুতে মৃত্যুদণ্ড নাকচ করার আবেদন জানিয়ে মুকেশ সিংয়ের পিটিশনের ওপর রায়দান মুলতুবি রাখে দিল্লি হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতে আবেদন জানিয়ে বিফল হওয়ার পর চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মুকেশ সিং। নিম্ন আদালতে মুকেশ জানিয়েছিল, ঘটনার দিন দিল্লিতে সে উপস্থিত ছিল না। মঙ্গলবার মুকেশের আইনজীবীকে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য তিরস্কার করে নিম্ন আদালত ভারতের বার কাউন্সিলকে পরামর্শ দেয়, ওই আইনজীবীকে আরও সচেতন হওয়ার জন্য।
গত সোমবার মৃত্যুদণ্ড রদ করার আবেদন নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে শুনানি প্রার্থনা করে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসের দ্বারস্থ হয় নির্ভয়ার চার অপরাধীর তিন জন। তাদের আইনজীবী এ পি সিংয়ের মাধ্যমে এই আবেদন জানায় বিনয়, পবন, এবং অক্ষয়। তাদের দাবি, এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ 'বেআইনি'।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় রবিবার দেশে জনতা কার্ফু, ঘোষণা মোদীর
আন্তর্জাতিক আদালতে জমা পড়া তাঁর পিটিশনে আইনজীবী এ পি সিং দিল্লিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টিও যোগ করেছিলেন। বক্তব্যের সারমর্ম ছিল, “দিল্লির বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ এবং সম্প্রতি করোনাভাইরাস বা COVID-19 দেখা দেওয়ার ফলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে…১৬ মার্চ থেকে ব্যাহত হয়েছে আদালতের পরিষেবা, এবং বেঞ্চের সদস্যরা তাঁদের পদমর্যাদা ও মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। দিল্লি এবং দিল্লি মহানগর অঞ্চলে (এনসিআর) জলবায়ুর কী পরিস্থিতি, তা সারা দুনিয়া জানে। জীবন এমনিতেই আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে, তবে মৃত্যুদণ্ড কেন?” পিটিশনে আরও বলা হয়েছিল যে, দিল্লির তিহার জেল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি ওই চারজন দোষীর ফাঁসির আয়োজন করছেন, এবং “এই তাড়াহুড়ো ও গোপনীয়তা স্পষ্টতই বেআইনি, যেহেতু উপরোক্ত তিন আসামী এখনও তাদের সবরকম আইনি প্রতিকারের সদ্ব্যবহার করেনি”।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে একটি বাসে করে বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী। চলন্ত বাসে বছর ২৩-য়ের ওই পড়ুয়াকে নৃশংস অত্যাচার করে গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। রড দিয়ে অত্যাচার করা হল। মারধর করা হয় নির্যাতিতার বন্ধুকেও। শেষে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয় দু'জনকেই। প্রথমে দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও নির্য়াতিতার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শেষ পর্যন্ত ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় ওই পড়ুয়ার।
এই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রেফতার করা হয় বাসের চালক রাম সিং, মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্তা, অক্ষয় সিংকে। তালিকায় ছিল এক নাবালক অপরাধীও।
এই মামলার গুরুত্ব অনুশারে গঠন করা হয়ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। সেখানেই চলে শুনানি। ২০১৩ সালেই, ১০ সেপ্টেম্বর ধৃত ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। তার মধ্যেই জেলে আত্মহত্যা করে ধৃত রাম সিং। এই মামলার নাবালক অপরাধীকে তিন বছরের সাজা দেয় জুভেনাইল কোর্ট । ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাকি ৪ অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে সেই আদেশই শুক্রবার কার্যকর হল। ফাঁসিতে ঝোলানো হল নির্ভয়া গণধর্ষণের চার অপরাধীকে।
Read the full story in English