সোমবার ২০২১-২২ অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে চর্চা। যার মূল বিষয় হল- এলআইসি, এয়ার ইন্ডিয়ার মত সংস্থার বেসরকারিকরণ। বাজেট নিয়ে সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এ সব প্রশ্নেরই জবাব দিলেন।
প্র: স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারের বরাদ্দ আশানুরূপ হয়েছে। কিন্তু কোভিড ট্যাক্স বা কোভিড সেস কেন বসছে না? প্রভূত অর্থ উপার্জনকারীদের উপর নতুন ট্যাক্স বসবে এমন প্রত্যাশা ছিল। রাজস্ব বৃদ্ধি করতে চ্যালেঞ্জ কতটা মোকাবিলা করতে হল?
নির্মলা সীতারমণ: এ বছর কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি কীভাবে জিএসটি সংগ্রহে উন্নতি করতে পারি আমরা। স্বাভাবিকের বাইরে গিয়ে কিছু করিনি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ছিদ্রগুলি রয়েছে তা ঢাকতে আর্টিফিসসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করেছি মাত্র। যাতে ভুয়ো বিল, মিথ্যা বিলগুলিকে ধরা যায়। এগুলি একটা দিক। আরেকটি দিক হল, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সম্পদকে নগদে পরিণত করা। এটাই শীর্ষ অগ্রাধিকার। যে সম্পদগুলি পড়ে রয়েছে, সেগুলিকে যদি নগদে পরিবর্তিত করা যায় রাজস্ব সংগ্রহের চাপটা কম হবে অনেকটাই। এর মাধ্যমে যে বাস্তবদিকগুলিতে নজর রেখেছি তা অনেকটাই অর্জন করতে পারব। তবে ট্যাক্স বৃদ্ধির বিষয়ে আমি প্রথম থেকেই খুব স্পষ্ট ছিলাম। জিএসটির ১৫ শতাংশ স্টিমুলাস প্যাকেজ হিসেবে ঘোষণা ভারত ছাড়া আর কোনও দেশ করেছে বলে আমার জানা নেই।
প্র: ট্যাক্সের বিষয়ের মধ্যে যোগ হয়েছে কেবল কৃষি এবং উন্নয়ন সেস। যা নিয়ে চর্চাও শুরু হয়েছে। আপনি আরও বিশদে বলতে পারবেন!
নির্মলা সীতারমণ: আমি একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি। ধরে নিন যে কোনও আইটেম বা পণ্য রয়েছে যার মধ্যে ১২ শতাংশ কাস্টম ডিউটি আরোপিত ছিল। আমি যা করেছি তা হ'ল শুল্ক কমিয়ে তা ৭ শতাংশে নিয়ে এসেছি। এর সঙ্গে সেস যুক্ত করেছি। দেখা গেল মোট শুল্ক গিয়ে দাঁড়াল ১০ শতাংশ। তাহলে কী হল। শুল্ক কিন্তু কমল। ক্রেতা কম দামেই কিনছেন। সেস লাগু মানেই যে দাম বৃদ্ধি হয় তেমনটা নয়। কৃষি এবং উন্নয়ন কাঠামোতে সেস জারির অর্থ, সেই খাতকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। আমদানি যারা করছে তাঁদেরও কম শুল্ক দিতে হল আবার সেস লাগুর ফলে দুটি ক্ষেত্র সাহায্য পাবে। একই বিষয় পেট্রোল এবং ডিজেলের দামের ক্ষেত্রে। দাম বাড়বে না। দাম বৃদ্ধি করলে তা সংস্থারা করছে তাঁদের বাজারমূল্যের উপর। সরকার কিন্তু কিছু আরোপ করেনি। এটা একেবারেই কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাজেটে কী পেল বাংলা? শূন্য হাতে রইল কোন কোন ক্ষেত্র?
প্র: আপনি সম্পদ নগদীকরণ সম্পর্কে বলেছেন বাজেটে। কিন্তু নথিতে এটির কোনও লক্ষ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। আপনি কি এই বছর এটির জন্য কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য গ্রহণ করেননি?
না। আমি কেবল ডিসইনভেস্টমেন্টের কথা বলেছি। সেখান থেকে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা প্রত্যাশা করছি। তবে করোনার পরবর্তী নিদির্ষ্ট কিছু সংখ্যা প্রকাশ করাটা কঠিন। বাজারের অবস্থাটা বুঝতে হবে তো আগে। পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইসগুলির কী অ্যাসেট ভ্যালু ইত্যাদি বুঝতে হত আগে। তাই আগেই কিছু সংখ্যা বলে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়...
প্র: আপনি প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছিলেন নমিনাল গ্রোথ ১৪.৪ শতাংশ। ইকোনমিক সার্ভে অনুমান বলেছিল ১৫.৪ শতাংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। আপনি কেন কম বৃদ্ধি আশা করেছিলেন?
সিদ্ধান্ত নেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি এক একজনের এক এক রকম। বাইরে বসে অনেক কিছু বলা যায়। আমি যেহেতু অর্থমন্ত্রকের ভিতরে বসেই কাজ করি তা প্রাকৃতিকভাবে এবং সঠিকভাবে কী মূল্যায়ণ হতে পারে তা যুক্তিসঙ্গত ভাবে বলতে পারি।
আরও পড়ুন, বাজেটে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আওড়ালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা
প্র: ভারতের মত দেশে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত একটি সাহসী পদক্ষেপ! এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক বিরোধিতা আশা করছেন?
এক্ষেত্রে একটু যুক্তি দিতে চাই। সরকারি খাতের ব্যাঙ্ক থাকবে না, এটা কিন্তু বলা হয়নি। অবশ্যই থাকবে। কার্যকরও হবে। আমাদের এ দেশে আরও অনেক এসবিআই দরকার এবং সে জন্য আমরা আছি। ব্যাঙ্ক তুলে দেয়নি। মার্জ করেছি কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে। ব্যাঙ্কের মত গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা যাতে দক্ষভাবে, পেশাগতভাবে পরিচালিত হয়, সেটা দেখতে হবে আগে। আমাদের দেশ অনেক ব্যাঙ্ক তৈরি করতেই পারে। পরিকাঠামো আছে। কিন্তু প্রত্যেকটি জায়গায় কি সেই পরিষেবা সমানভাবে বন্টন সম্ভব? সেটা যুক্তি দিয়ে দেখতে হবে। আমরা সরকারি ব্যঙ্কের বিপক্ষে নই। বরং নয়া কৌশলে যদি প্রতিবছর ভাল পারফরম্যান্স করতে পারি সেটাই আনন্দের।
অনুবাদ- পল্লবী দে
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন