বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড বিষয়ক বিশেষ দূত ডেভিড নাবারো নভেল করোনাভাইরাস রোগ ছড়ানো রোধ করায় ভারতের ব্যাপক সাফল্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে তিনি বলেছেন সাফল্যের আসল চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে পরবর্তী পর্যায়ে গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকাতে স্থানীয় সরকার কতটা তৈরি থাকছে তার উপরে।
নাবারো একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ পদের দৌড়ে রয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হুয়ের মহাসচিব বিভিন্ন দেশে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় পরামর্শ দেওয়ার জন্য এবং সে সম্পর্কিত উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনার জন্য যে ৬ জন বিশেষ দূত নিয়োগ করেন, নাবারো তাঁদের অন্যতম।
আরও পড়ুন, লকডাউনের মধ্যেই চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা
৭০ বছর বয়সী নাবারো ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া আটকাতে ভারত দারুন কাজ করেছে এবং তাক কেবল শহরাঞ্চলের পকেটগুলিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে। কিন্তু তিনি বলেছেন লকডাউন তুলে নেওয়া হলেই অন্যান্য জায়গাতেও রোগ ছড়াবে এবং দেশের সবাইকে কী ঘটছে সে সম্পর্কে শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং সংকটের মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখতে হবে।
“ভারত কোভিডের সঙ্গে বাঁচতে পারে এবং কিছু কাজকর্মের মাধ্যমে ভাইরাসকে দূরে রাখতে পারে। তার মধ্যে একটা হল দেশের প্রতিটি মানুষ ভাইরাস সম্পর্কে অবগত হবেন যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন রোগ ছড়ালে সংক্রমণ কীভাবে আটকানো সম্ভব।”
“এবং দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রতিটি পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদকে এই রোগের প্রকোপ দমন করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তাতে অবশ্যই এই দমনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতা থাকতে হবে কারণ দরিদ্র মানুষরাই এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু একই সঙ্গে রোগের প্রকোপ দমন করা ও গরিবদের সুরক্ষা দেওয়া ভারতের অবশ্যপালনীয় দ্বিতীয় কর্তব্য।”
আরও পড়ুন, দেশ জুড়ে আবার বাড়ল করোনা সংক্রমণ
“যদি সকলে সংক্রমণ আটকানোর ব্যাপারে ত্বরিৎ থাকে এবং প্রকোপ রোধের ব্যাপক বন্দোবস্ত থাকে যার মধ্যে বর্তমান লকডাউনের মত বিধিনিষেধও রয়েছে, কিন্তু তা হতে হবে একেবারেই স্থানীয় স্তরে, সমাজের বাকি অংশ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন, আনন্দে থাকতে পারবেন, কাজকর্মও করতে পারবেন।”
“এটা খুব সহজ কাজ নয় নিশ্চিত, কিন্তু বর্তমান লকডাউন প্রত্যাহারের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ ও কয়েক মাস কঠিনতর হবে, কিন্তু ব্যাপারটা করা যাবে।”
নাবারো বলেছেন এই ধরনের পদক্ষেপ চিনে মহামারীর ফিরে আসাকে অনেকটাই ব্যর্থ করেছে।
“আমার চিনের সহকর্মীদের কাছ থেকে আমি যা শুনেছি তা হল ওরা গোষ্ঠী স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা জাতীয় নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যারা বিভিন্ন বিষয়ের উপর কড়া নজর রাখছে। যে মুহূর্তে ওরা কোনও রকম সংক্রমিতের খোঁজ পাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে ওরা রোগীকে আইসোলেট করে ফেলছে। ওরা সত্যিই গোটা দেশে ব্যাপারটা যথাযথভাবে মোকাবিলা করছে। এমনটাই আমাকে বলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ওরা (চিন) নিশ্চিত করে বলতে পেরেছে যে গোটা দেশের মানুষ জানে যে সমস্যা কতটা গুরুতর। এবং তারপরেও, ওরা অত্যন্ত অত্যন্ত সাবধানী। তারণ ওরা জানে যে দেশে নতুন লোক আসবে, এবং বেশ কয়েকবার রোগের প্রাদুর্ভাব অবশ্যম্ভাবী। ফলে ওরা প্রস্তুত হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টা মেটাতে। আমার ধারণা ভারতকেও তেমনটাই করতে হবে।”
আরও পড়ুন, সাপ্লাই লাইন, মদ কিংবা ছড়িয়ে থাকা রুটি
নাবারো বলেন, “ভারত যে ভাবে এ মহামারীর মোকাবিলা এতদিন করেছে তাতে তাঁর দারুণ আত্মবিশ্বাস জন্মেছে, তিনি মনে করেন পরের পর্যায়েরও সফল মোকাবিলা করতে পারবে ভারত।”
তিনি বলেন, “আমি আপনাদের দেশে যেটা দেখলাম তা হল সংক্রমণ দ্বিগুণত্বের হার। কয়েকদিন আগে আমি দেখলাম আপনাদের দেশে এই হিসেবটা ১১ দিনের মত। এটা যথেষ্ট ভাল কারণ অন্য অনেক জায়গাতেই এই সংখ্যাটা আড়াই দিনের মত। ফলে আপনাদের যদি দ্বিগুণত্বের হার ১১ দিন হয়, তাহলে বলতে হবে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গিয়েছে।”
তিনি বলেন “১১ দিনের দ্বিগুণত্বের হার একটা দারুণ ব্যাপার। তার মানে একটা সত্যিকারের চেষ্টা রয়েছে, একটা সফল চেষ্টা রয়েছে যাতে ভাইরাস ছড়ানো আটকানো সম্ভব।”
নাবারো বলেন লকডাউন ‘বর্বরোচিত’ হতে পারে এবং সাধারণভাবে ‘ভয়ানক একটা ব্যাপার’ হতে পারে, কিন্তু ভাইরাস ছড়ানো রোধে তা অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও হতে পারে।
তিনি বলেছেন, “যদি একে রোধ করার কোনওরকম চেষ্টা ছাড়াই এই ভাইরাসকে পৃথিবীময় ঘুরে বেড়াতে দেওয়া হত, তাহলে আমার ধারণা অসংখ্য মানুষ অসুস্থ ও মৃত হতেন। আমরা এখনও এই ভাইরাসের সব বিষয় পুরোটা বুঝতে পারিনি। শুধু শ্বাসকষ্ট ছাড়াও এর অন্যান্য প্রভাবও থাকতে পারে। আমরা যারা এই ভাইরাস নিয়ে এবং অন্যান্য করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করেছি, তারা শিখেছি যে এই ভাইরাস সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।”
আরও পড়ুন, কোভিড অর্থনীতি- নিম্ন আয়ের কর্মীদের কাজ হারানোর আশঙ্কা বেশি
তিনি আরও বলেন আগামী দু বছরের আগে ভ্যাকসিন মানুষের উপকারে আসবে না বলেই তিনি মনে করেন, এবং ততদিন পর্যন্ত সমস্ত দেশ ও মানুষকে এই ভাইরাসের সঙ্গে বাঁচতে শিখতে হবে।
তিনি বলেন, “আমি সকলকেই এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়ে দুবছর কাটানোর ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছি। এ কথাটা এই গ্রহের ৭.৮ বিলিয়ন মানুষের ক্ষেত্রেই সত্য। এটা একটা সার্বিক শিক্ষণ পদ্ধতি।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন