মার্কিন নাগরিকের দেহ উদ্ধারের কাজ বন্ধ করল আন্দামান প্রশাসন
বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক রাখে না সেন্টিনেলিজ উপজাতি, এবং সেন্টিনেল দ্বীপে সাধারণ মানুষের যাওয়ার ওপর কড়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যা জন অ্যালেন চাউ মানেন নি।
শেষমেশ উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপেই রয়ে গেলেন সদ্যপ্রয়াত মার্কিন নাগরিক জন অ্যালেন চাউ, যাঁর মৃত্যু হয় গত ১৬ নভেম্বর, খুব সম্ভব ওই দ্বীপে বসবাসকারী সেন্টিনেলিজ উপজাতির হাতে। আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসন জানিয়েছে, সেন্টিনেল দ্বীপ থেকে জনের দেহ উদ্ধার করতে আর কোনও অভিযান চালানো হবে না।
Advertisment
সোমবার এক বৈঠকে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেন দ্বীপপুঞ্জের উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক, নৃতত্ত্ববিদ, এবং বনবিভাগের কর্তারা। জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রের তরফেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন দেহ উদ্ধারের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে সেন্টিনেল দ্বীপের ওই উপজাতিকে আর বিরক্ত না করা হয়। প্রসঙ্গত, সেন্টিনেলিজ উপজাতি ভারতের বিরলতম উপজাতিগুলির মধ্যে অন্যতম। অনুমান করা হয়, বর্তমানে তাঁদের জনসংখ্যা একশোরও কম। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক রাখে না এই উপজাতি, এবং সেন্টিনেল দ্বীপে সাধারণ মানুষের যাওয়ার ওপর কড়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যা জন অ্যালেন চাউ মানেন নি।
সোমবারের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তার কথায়, "সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে আমরা উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ থেকে দেহ উদ্ধার করার আর কোনও চেষ্টা করব না। এর কারণ মূলত সেন্টিনেলিজদের স্পর্শকাতর পরিস্থিতি। আমরা কোনোভাবেই আর ওঁদের বিরক্ত করতে চাই না।"
সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই বিষয়ে রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে সচিবালয় এবং পুলিশের সদর দফতরে একাধিক বৈঠক করা হয়, যেগুলিতে উপস্থিত ছিলেন উপজাতীয় কল্যাণ বিভাগ এবং আন্দামান নিকোবর উপজাতীয় গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা, একাধিক নৃতত্ত্ববিদ, এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
দ্বীপপুঞ্জের এক উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকের বক্তব্য, "এই ধরনের অভিযান সেন্টিনেলিজদের পক্ষে বিপজ্জনক শুধু নয়, আমাদের পক্ষেও অর্থহীন, কারণ আমাদের টিম এখন পর্যন্ত দেহটি দেখতেই পায় নি। ওই উপজাতিকে আর বিরক্ত করা আমাদের উচিত নয়। কেন্দ্রেরও একই মত, এবং তারাও আমাদের জানিয়েছে যে নতুন করে আর উদ্ধার অভিযান না চালানোই ভালো।"
জনের দেহ উদ্ধার অভিযান শুরু হয় ২০ নভেম্বর, যেদিন আকাশ এবং সমুদ্র থেকে উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ পরিদর্শন করা হয় দেহের খোঁজে। অভিযানের অংশ ছিলেন কিছু পুলিশকর্মী, আদিম জনজাতি বিকাশ সমিতির সদস্যরা, এবং বন বিভাগের আধিকারিকরা। ভারতীয় কোস্ট গার্ডের সাহায্যে দ্বীপ পরিদর্শন করেন তাঁরা।
আপাতত যে কজন জেলে বেআইনিভাবে জন অ্যালেন চাউকে ওই দ্বীপে নিয়ে যান, তাঁদের মধ্যে তিনজনকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। উদ্দেশ্য, সেদিনের ঘটনাবলীর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জেনে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নির্ধারণ করা।
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন