নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিক্ষোভে অশান্ত হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ। বিক্ষোভের সেই আগুনের শিখা নিভতে না নিভতেই এবার সরকারি সম্পত্তি নষ্টের ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করে দিল যোগী প্রশাসন। ক্ষয়ক্ষতির সংক্রান্ত চূড়ান্ত কোনও হিসেব নিকেশ তৈরি করে উঠতে না পারলেও সরকারি সম্পত্তি ক্ষতি করার অভিযোগে ২৬ জনকে শো কজ নোটিস পাঠাল ফিরোজাবাদ জেলা প্রশাসন। নোটিস পেয়েছেন এমন বেশ কয়েকটি পরিবারের পক্ষ থেকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানানা হয় যে তাঁরা প্রত্যেকেই দিনমজুরের কাজ করেন। নোটিস প্রাপকদের বেশিরভাগই এখন জেলে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে ধ্বসে পড়ল জ্বলন্ত কারখানা, আটক দমকল কর্মী-সহ বেশ কয়েকজন
এদের মধ্যে আছেন ২০ বছর বয়সি আদিল খান। পেশায় ছুতোর এবং ছ সন্তানদের মধ্যে দ্বিতীয় আদিল তাঁর বাবা সায়েদ খানের সঙ্গেই কাজ করতেন। ঘটনা প্রসঙ্গে বিহ্বল বাবা বলেন, "ও যখন নমাজ শেষ করে আসছিল তখনও আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। হঠাৎ করে ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু সময় পরে আমরা জানতে পারি যে ওঁকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদিল আমাকে জানায় যে পুলিশ খুব মারধরও করেছে ওঁকে। আমাকে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের নোটিস দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমার ছেলে তো এর মধ্যে জড়িত নয়। ও নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিল।"
উল্লেখ্য, ফিরোজাবাদ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের জারি করা সমস্ত নোটিসেই উল্লেখ করা হয়েছে “… এফআইআর থেকে আমি নিশ্চিত যে আপনি প্রাথমিক (সরকারী এবং ব্যক্তিগত সম্পদের ক্ষতির) জন্য দায়ী। এক সপ্তাহের মধ্যে এই আদালতে উপস্থিত হয়ে এই ক্ষতি পুনরুদ্ধারের জন্য কেন আপনাকে আদেশ জারি করা হবে না তা জানিয়ে দিতে হবে।" যদিও বিজ্ঞপ্তিটিতে কোনও নির্দিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০ ডিসেম্বর পিডাব্লুডি, পৌর কর্পোরেশন, পুলিশ, অন্যান্য সরকারী বিভাগ এবং সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাঁচ শীর্ষ নেতা বাদে জম্মু কাশ্মীরে আটক রাজনীতিকদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের
এদিকে আদিলের মতোই একই ঘটনার শিকার বছর কুড়ির আমির। ছয় ভাইবোনদের মধ্যে চতুর্থ আমির রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আয় বলতে প্রতিদিন ১৫০-২০০ টাকা। আমিরের দাদা আসিফ বলেন, "আমার ভাই আসিফ জিনিশপত্র নিয়ে ফিরে আসার সময় প্রতিবাদ মিছিলের মধ্যে আটকা পড়ে যায়। এরপর ও একটি দোকানে ঢোকে আশ্রয় নিতে। সেখানে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা ওঁকে মারধর করে । এমনকী ওঁর ফোন ও সঙ্গে থাকা ২৬৭০ টাকাও ছিনিয়ে নেয়। ওই যুবকরা তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। প্রতিবাদের সাথে তার কোনও যোগসূত্র নেই।"
নাদিমের এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হল ২৩ বছর বয়সি হাফিজকে। পেশায় মসজিদের গৃহশিক্ষক হাফিজকে মুক্তি দেওয়ার কথা হলেও এখনও তাঁকে জেলবন্দি করেই রাখা হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁর মা রেশমা। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য প্রকাশ শ্রীবাস্তব বলেন, “আমাদের একটি অনুমান আছে যে ২০-২৫ লক্ষ টাকার সরকারী ও বেসরকারী সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। চূড়ান্ত পরিসংখ্যান গণনা করা হবে। আমরা এফআইআর-এর ভিত্তিতে নোটিশ পাঠিয়েছি। ”