Advertisment

এনআরসিছুট যৌনকর্মীদের পাশে মহিলা কমিশন

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় শিলচরের প্রায় ২০০ যৌনকর্মী এনআরসি থেকে বঞ্চিত হওয়ার খবরটি প্রকাশিত হয়। এরপরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

শিলচরের নিষিদ্ধ পল্লীর যৌনকর্মীদের সুরক্ষা দিতে পাশে দাঁড়ালো রাজ্য মহিলা কমিশন, জাতীয় মহিলা কংগ্রেস সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় শিলচরের প্রায় ২০০ যৌনকর্মী এনআরসি থেকে বঞ্চিত হওয়ার খবরটি প্রকাশিত হয়। এরপরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের সরকারএবং স্থানীয় প্রশাসন। যৌনকর্মীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এদিকে আইনজীবীদের একাংশও এনআরসি থেকে বাদ পড়া মহিলাদের নাম তালিকায় নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছেন।

Advertisment

পর্যাপ্ত নথিপত্রের অভাবে শিলচর শহরের নাগাপট্টি সংলগ্ন পতিতালয়ে প্রায় ২০০ যৌনকর্মী এনআরসি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিবেদনেই প্রথম জানানো হয়েছিল। এই মহিলারা মূলত মানবপাচারের শিকার হয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে এসেছেন তাই তাদের কাছে পরিবারের পর্যাপ্ত নথি নেই। যেহেতু তারা এখন যৌনকর্মী তাই তাদের সঙ্গে পরিবার কোনো নথি বা লিগেসি ভাগ করবেনা, ফলে তারা এনআরসিছুট। হয়তো আগামীতে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার মতোও পর্যাপ্ত নথি তারা দেখাতে পারবেন না। শেষমেষ তাদের ঠাঁই হতে পারে গোয়ালপাড়ার বিদেশি আটক শিবিরে।

আরও পড়ুন: ১৮ অক্টোবরের মধ্যে নিস্পত্তি করতে হবে অযোধ্যা মামলা: সুপ্রিম কোর্ট

খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন চিকিমিকি তালুকদার তার কার্যালয়ের বিভিন্ন আধিকারিক এবং শিলচরের ওয়ানস্টপ সেন্টারের কর্মকর্তাদের নিয়ে নিষিদ্ধ পল্লী পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, এমন অনেক কিছু কথা আছে যা প্রকাশ্যে বলা যাবেনা। তবে আমরা ভেতরে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নিয়েছি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুয়োমোটো মামলাও করেছি। আমরা চাইছি আগামীতে এই মহিলাদের একটি সরকারিভাবে তালিকা তৈরি করতে, যাতে প্রত্যেককে সাধারণ মানুষ হিসেবে সুরক্ষা দেওয়া যায়। ওয়ানস্টপ সেন্টার কাছাড় জেলার আধিকারিক সুচেতা ভট্টাচার্য্য জানান, তারা যে এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন সেগুলো সাধারণ মানুষের থাকার যোগ্য নয়। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে মহিলারা জীবন কাটাচ্ছেন। এই মহিলারা যে কাজটি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এতে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ খুব স্বাভাবিক। সংবাদ প্রতিবেদন ভেতরে শিশুদের থাকার কথা বলা হয়েছিল। এলাকাটি পরিদর্শন করতে গিয়ে সেখানে বিভিন্ন বয়সের অনেকগুলো শিশু দেখতে পান মহিলা কমিশনের আধিকারিকরা। তাদের নিয়ে আগামীতে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রস্তাব পাঠানো হবে ওয়ানস্টপ সেন্টারে তরফে। এই শিশুদের পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ করে না দিলে হয়তো ভবিষ্যতে তারা হয়তো এই পেশাতেই যোগ দেবে অথবা বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে বাধ্য হবে। এমন কিছু মহিলারা রয়েছে যাদের বয়স হয়েছে। এদের পূনর্বাসনের জন্য সরকারি তরফে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তবে এই সব কিছুর জন্য প্রথমে তাদের সরকারিভাবে পরিচয় পত্র প্রদান করতে হবে।

জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব যৌনকর্মীদের এনআরসি থেকে বাদ পড়ার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, "শিলচর শহরের এই এলাকা নিয়ে প্রত্যেকেরই ধারণা রয়েছে, তবে আমরা অনেকেই তাদের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধাবোধ করি। দেশের সরকার শুধু মানুষের কাছে নথি খুঁজে বেড়াবে এটাই তাদের দায়িত্ব হতে পারে না। সরকার বা প্রশাসন মানুষের দ্বারা গঠিত এবং তাদের দায়িত্ব মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই মহিলারা প্রথমে মানুষ, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির মতো তাদেরও মানবাধিকার রয়েছে, এই অধিকার তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া যাবে না। জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে এবং একজন মহিলা হিসেবে আমি তাদের সঙ্গে আছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে আমি এব্যাপারে কথা বলেছি এবং এই মহিলাদের সরকারিভাবে নথি পাইয়ে দিতে প্রয়োজনে আমরা মাঠে নামব।"

খবরটি প্রকাশের পর রাজ্যের বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে যুব সমাজ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিবেদনটি শেয়ার করে প্রত্যেককে এই মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। শিলচরের তরুণ আইনজীবী তথা সমাজসেবী তানিয়া লস্কর লিখেছেন, "যাদের ব্যাপারে কথা বলতে বা পাশে দাঁড়াতে সমাজ ভয় পায় তাদের কথা তুলে আনা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।" তার সঙ্গে কথা বললে তিনি এনআরসি প্রক্রিয়াকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, "সরকার নাগরিকত্ব বাছাই করছে অথচ তারা নাগরিকের কাছে আসেনি, নাগরিককে তাদের কাছে যেতে হয়েছে। আমাদের সমাজে এমন নাগরিকও রয়েছেন যারা কখনোই কোন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন না। যৌনকর্মী, ট্রান্সজেন্ডার, বানজারা এধরনের বিভিন্ন সম্প্রদায় রয়েছে যাদের কাছে সরকারি নথি থাকেনা। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে এদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, এটা সরকারের কর্তব্য। শিলচরে নিষিদ্ধ পল্লী রয়েছে এটা সবাই জানেন, তবু এখানে যারা থাকেন তারা সমস্ত রকম সুবিধা এবং সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। শেষমেষ এনআরসির তালিকা তারা বাদ পড়েছেন, এটা আমাদের প্রত্যেকের ব্যর্থতা।"

আরও পড়ুন: LIVE: রাজীব কুমারকে পাকড়াও করতে গাড়ি নিয়ে কলকাতার রাস্তায় সিবিআই

সমাজ যাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে, সাধারণ মানুষ বা সরকার যাদের নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয়। সমাজের কিছু অংশ এদের পাশে দাঁড়ানোর এবং তাদের হয়ে আওয়াজ তোলার সাহস রাখে। সমাজকর্মী এবং পেশায় আইনজীবী তুহিনা শর্মা জানিয়েছেন, তারা এই মহিলাদের এনআরসিতে নাম অন্তর্ভুক্তির কাজ শুরু করেছেন। তাদের পরিবারের খোঁজ নিয়ে সেখানে নোটিশ পাঠিয়ে নথি সংগ্রহ করা হবে এবং সেগুলো বিদেশি ট্রাইব্যুনালে পেশ করা হবে। এতে হয়তো মহিলারা শেষ পর্যন্ত ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়ার হয়রানি থেকে বাঁচবেন। কাছাড়ের জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরির সঙ্গে এব্যাপারে কথা বললে তিনি আশ্বাস দেন যদি প্রক্রিয়া শুরু হয় জেলা প্রশাসন এই মহিলাদের পাশে দাঁড়াবে। তবে আপাতত সরকারের তরফে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোনো বিশেষ নির্দেশ নেই। সমাজসেবী কমল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, যদি কোনভাবে তাদের কিছু নথি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় তবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এদের নাম এনারসিতে অন্তর্ভুক্ত করানোর আশা রয়েছে।

উল্লেখ্য এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এতে নিজেদের নাম খুঁজে পাননি শিলচর শহরের নিষিদ্ধ পল্লী এলাকায় বাস করা প্রায় ২০০ যৌন কর্মীরা। এটি উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম বড় পতিতালয়। এখান থেকে প্রায় প্রত্যেক বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পুলিশ হারিয়ে যাওয়া মহিলাদের খুঁজে পায় এবং তাদের উদ্ধার করে। নাম খুঁজে না পাওয়ায় তারা চিন্তা ব্যক্ত করেছিলেন, হয়তো শেষ পর্যন্ত ডিটেনশন ক্যাম্পে তাদের ঠাঁই হবে। তবে এবার মহিলা কমিশন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহায়তার আশ্বাসে হয়তো তারা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন।

national news NRS
Advertisment