Indian armys live briefing: পহেলগঁওয়ে জঙ্গি হামলার পাল্টা জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে সফল বিমান হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে মাত্র ২৫ মিনিটের অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর অধীনে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। অপরেশন সিন্দুর ভারতীয় সেনা, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযান। এই অভিযান ও তার উদ্দেশ্য নিয়ে নিয়ে বুধবার সকালে একটি লাইভ ব্রিফিং আয়োজন করা হয় সেনাবাহিনী ও সরকারের তরফে।
লাইভ ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বলেন, “পহেলগাঁও হামলার তদন্তে পাকিস্তানের যোগসূত্র সামনে এসেছে। তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িতদের এবং পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করেছে... ভারত সন্ত্রাসবাদীদের পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্য তার অধিকার প্রয়োগ করেছে,”। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “পহেলগাঁও হামলা জম্মু ও কাশ্মীর এবং ভারতের অন্যান্য অংশে সাম্প্রদায়িক বিভেদ উস্কে দেওয়ার লক্ষ্যে করা হয়,”। ভারতের তরফে জানানো হয়েছে রাত ১টা বেজে ০৫ মিনিট থেকে ১টা বেজে ৩০ মিনিটের মধ্যে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা।
পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনার বিমান হামলা, মোদীকে কুর্নিশ ওয়াইসি সহ দেশের তাবড় রাজনীতিবিদদের। ভারতের 'আত্মরক্ষার অধিকারের' পাশে দাঁড়িয়ে বিরাট বার্তা দিয়েছে ইজরায়েল। ভারতে নিযুক্ত ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার বলেছেন, "ইসরায়েল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সম্পুর্ণরুপে সমর্থন করে। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত যে নিরপরাধ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তারা জঘন্য অপরাধ করে চলেছে তা থেকে তাদের মুখ লুকানোর কোনও জায়গা নেই।"
২২শে এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুর দুই সপ্তাহের মধ্যে, ভারত সন্ত্রাসবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে একের পর এক এয়ার স্ট্রাইক চালিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে একযোগে চালানো ভারতীয় বিমান হামলায় ধ্বংস করা হয়েছে অন্তত ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, এই হামলার কোডনেম ছিল ‘অপারেশন সিন্দুর’। সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় সেনা বাহিনী অত্যন্ত নিখুঁত ও সীমিত আকারে এই আক্রমণ চালিয়েছে। রাত ১:৪৪-এ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, “কিছুক্ষণ আগে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী 'অপারেশন সিন্দুর' শুরু করে, পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে সেইসব জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানে যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।”
এরপরই ভারত জুড়ে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। জয় হিন্দ স্লোগানে মুখরিত হয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে ওয়াইসির মত নেতারা এই পালটা হামলার প্রশংসায় সুর চড়ান। অপারেশনের পরপরই অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বলেন, “পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিতে সেনাবাহিনীর হামলাকে আমি স্বাগত জানাই। পাকিস্তানি ডিপ স্টেটকে অবশ্যই কঠোর শিক্ষা দিতে হবে যাতে আরেকটি পহেলগাঁও যাতে আর কখনও না ঘটে। জয় হিন্দ!”
এনসিপি (এসপি) প্রধান শরদ পাওয়ার বুধবার অপারেশন সিন্দুরের পরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে বলেছেন যে জাতি তাদের জন্য গর্বিত। সশস্ত্র বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে পাওয়ার বলেন, "পহেলগাঁও হামলার 'যোগ্য জবাব' দেওয়ার জন্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী।" এদকে হামলার পর বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, "বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।"
এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও এক্স-এ 'অপারেশন সিন্দুর'কে সমর্থন জানিয়ে ভারতীয় সেনার প্রশংসা করেন। এদিকে সেনাবাহিনীর হামলার পরিপ্রেক্ষিপ্তে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বুধবার সকাল ১১টায় শ্রীনগরে একটি জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। সীমান্তবর্তী জেলার নিরাপত্তা, নাগরিকদের সুরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অপারেশন সিন্দুরের পর জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে বাড়ানো হয়েছে সতর্কতা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।