রাজস্থানের উদয়পুরে ধর্মীয় উন্মাদনার শিকার দর্জি। বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার পয়গম্বর মন্তব্যকে সমর্থন করায় উদয়পুরের কানহাইয়া লাল নামে দর্জিকে নৃশংস খুনের ঘটনায় গোটা দেশ স্তম্ভিত। সর্বত্র সমালোচনা হচ্ছে। গোটা রাজস্থানে এক মাসের জন্য বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। একদিনের জন্য গোটা রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। তার মৃতদেহ ঘিরে রেখে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।
দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না করলে বিক্ষোভ আরও তীব্র হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন স্থানীয়রা। কানহাইয়ার মুণ্ডচ্ছেদ করার পর একটি ভিডিও পোস্ট করে আততায়ী মহম্মদ রিয়াজ এবং ঘাউস মহম্মদ। সেই ভিডিওতে কানহাইয়ার শিরশ্ছেদের দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং নূপুর শর্মাকেও খুনের হুমকি দেয় তারা। এদিকে কানহাইয়া লালের নৃশংস খুনের পরই পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তার ছেলের।
সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কানাইয়ার ছেলে অভিযোগ করেন, ‘বাবা নিয়মিত ফোনে হুমকি পেত, এমনকি এই বিষয় নিয়ে পুলিশকে এর আগে একাধিকবার জানানো সত্বেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি”। কানহাইয়া লালের দুই ছেলে যশ এবং তরুণ দাবি করেছেন যে পুলিশ যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত তাহলে তাদের বাবাকে এভাবে মরতে হত না”।
ঠিক কী বলা হয়েছে কানাইয়ার পরিবার সূত্রে? কানাইয়া লালের দুই ছেলে দাবি করেন, “বাবা ভুল বশত সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আপত্তিকর পোস্ট করেন, যার জেরে তিনি গ্রেপ্তার হন, পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান, এমনকি তাঁর এই মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিলেন। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে প্রায়ই নানা ধরনের হুমকি ফোন আসত বাবার ফোনে, যার জেরে বেশ কয়েকদিন বাবা দোকান বন্ধও রেখেছিলেন। পুলিশকেও এই হুমকি কলের ব্যপারে জানানো হয়েছিল কিন্তু সেভাবে পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি, যদি পুলিশ সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিত তাহলে বাবাকে এভাবে খুন হতে হত না”।
আরও পড়ুন: <ফের বাড়বাড়ন্ত করোনার! নয়া ভ্যারিয়েন্টেই ওঁত পেতে রয়েছে বিপদ, স্পষ্ট করল WHO>
সেই সঙ্গে কানাইয়ার পরিবারের তরফে বলা হয়েছে তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর বড় ছেলে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোট ছেলে ফার্মাসির প্রথম বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি পরিবারের তরফে ধৃতদের ফাঁসির দাবিও তোলা হয়েছে।
এদিকে উদয়পুর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পাকিস্তান যোগ খুঁজে পেল পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের দুই অভিযুক্ত মহম্মদ রিয়াজ ও ঘাউস মহম্মদকে রাজসমুন্দ জেলা থেকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে ঘাউস মহম্মদ ২০১৪ সালে করাচিতে গিয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
তার কাছ থেকে পাকিস্তানের বেশ কিছু ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে। ওই সব ফোন নম্বর যাদের, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত এই অভিযুক্ত। তদন্ত যেহেতু এখনও চলছে সেই জন্য বিশদে জানাতে রাজি হননি রাজস্থান পুলিশের কর্তারা।