'ব্যাট হাতে পুর আধিকারিককে মেরে তাড়াচ্ছেন' এমন ভিডিও সামনে আসতেই গ্রেফতার করা হয় ইন্দোরের বিজেপি বিধায়ক তথা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র পুত্র আকাশ বিজয়বর্গীয়কে। ইন্দোর পুরসভার আধিকারিকের গায়ে হাত তোলার অপরাধে গ্রেফতার আকাশ বিজয়বর্গীয়কে গতকালই জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের মাঝেই কৈলাশ পুত্র জানালেন তিনি যে 'কাজ'টি করেছেন তার জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। তবে এখন থেকে গান্ধীজির আদর্শে মেনে চলার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তার এই বক্তব্যর মাঝেই ভেসে ওঠে স্তাবক, সমর্থকদের প্রশস্তিবাক্য-বন্দনা। কেউ কেউ আবার 'বিজয়'মাল্যও পরিয়ে দিয়েছেন। উদযাপনের সেই মূহুর্তেই বিজেপির পতাকায় সজ্জিত ইন্দোরের এই বিধায়কের পার্টি অফিসের সামনে থেকে 'শূন্যে গুলি চালানোর' আওয়াজ ভেসে আসে। হঠাৎ কেন এই গুলি চালনা? এও কি উদযাপনেরই অঙ্গ? সেই প্রশ্নের উত্তরে এলাকার নতুন বিধায়ক আকাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, "এই ঘটনাটি নিন্দনীয়। খুবই লজ্জাজনক যে কেউ সেই সময়ে গুলি ছুড়েছে। আমি এমন একজন সমর্থককেও জানি না যার বন্দুক আছে। তাই আমি বিশ্বাস করি না যে গুলি ছুড়েছে সে আমার দলের সমর্থক। কিন্তু আমাদের এই লড়াই ছিল মানুষের জন্য লড়াই। দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে এসেছিলেন আমাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য। মনে হয় কংগ্রেসের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করতেই কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে।" ইন্দোরের উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার অবশ্য জানিয়েছেন ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে এবং তদন্ত করে যিনি গুলি ছুড়েছেন তাঁকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
আরও পড়ুন, ‘আমি আতঙ্কিত’, বললেন কৈলাশ-পুত্রের হাতে প্রহৃত পুর আধিকারিক
উল্লেখ্য, ইন্দোরের একটি বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে জুন (বুধবার) কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র পুত্র আকাশ বিজয়বর্গীয়র বিধানসভা এলাকাতে অভিযান চালায় স্থানীয় পুরসভা। আসন্ন বর্ষার কথা মাথায় রেখেই এলাকার এক বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু এই বিপজ্জনক বেআইনি নির্মাণ ‘রক্ষা করতে’ই ব্যাট হাতে এগিয়ে আসেন মারমুখী বিজেপি বিধায়ক আকাশ বিজয়বর্গীয়। হুমকির সুরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “১০ মিনিটের মধ্যে এলাকা না ছাড়লে ফল ভালো হবে না”। এরপরই কর্তব্যরত আধিকারিক ধীরেন্দ্র ব্যাসকে মারধর করেন আকাশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই তোলপাড় হয় দেশ এবং গ্রেফতার হন আকাশ বিজয়বর্গীয়। তাঁর অবশ্য দাবি তিনি দুর্নীতির বিরোধিতা করতে এবং সেই সময় মহিলাদের প্রতি দুর্ব্যবহার রুখতেই সেখানে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন, আধিকারিককে মেরে শ্রীঘরে, তবু বিজেপির ‘বাঘের বাচ্চা’ আকাশ বিজয়বর্গীয়
যদিও রবিবার সকালেই 'বিপদজ্জনক' বাড়িটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইন্দোর পুরসভা। কিন্তু বাড়িটি ভাঙা নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ায় পুলিশের তরফে বাড়ি ভাঙার কাজে সাময়িক স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই প্রসঙ্গে আকাশ বলেন, " আমার কাছে এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে কোনও নিশ্চয়তার খবর নেই। যখন শুনতে পাবো সেই মত ব্যবস্থাও গ্রহণ করবো।"
আরও পড়ুন, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কী কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?
গ্রেফতারের তিনদিনের মধ্যে জামিন পাওয়ার পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কৈলাশ-পুত্র বলেন, " এই ঘটনায় আমি দুঃখিতও নই, অনুতপ্তও নই। আমার কাছে খবর আছে যে কিছু কংগ্রেস নেতা আমার কেন্দ্রে পুরসভার সঙ্গে জোট করে বাড়ি কেনার নামে গরিব মানুষদের আশ্রয়স্থান ভেঙে দিচ্ছে। আমি এখানকার বিধায়ক, আমার তো জানার অধিকার আছে যে এখানে কী হচ্ছে? ওঁদের বলেছিলাম আমাকে জানাতে কিন্তু ওরা আমার কথা শোনেনি"। তিনি আরও বলেন, "ওরা নোটিশ পাঠিয়েছিল। আমি বাড়িটির ছবি তুলে কমিশনারের কাছে পাঠাই, এবং অনুরোধ করি যে তাঁরা যেন কিছুটা সময় দেন পরিবারটিকে। সেখানে একজন প্রতিবন্ধী মহিলাও থাকেন। কিন্তু পুরসভার লোকজন কিছু না শুনেই পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে মহিলাদের জোরজবরদস্তি বাড়ি থেকে বের করে দিতে থাকে। আমি সেই সময় ব্যাট নিয়ে তাঁদের দিকে ছুটে যাই।"
তাঁর বক্তব্য, "আমি যদি সেই সময় না যেতাম তাহলে ওরা বাড়িটাই ভেঙে ফেলত। তবে ভবিষ্যতে আমি গান্ধীজির দেখানো পথ অবলম্বন করে চলতে চাই"।
Read the full story in English