ত্রিপুরায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পশুপাচারকারীদের থেকে বিগত ছয় মাসে প্রায় আড়াইশোটি গরু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ত্রিপুরার সিপাহিজালা জেলার বিশালগড়ের একটি গোশালা থেকে চুরি যাওয়া গরুগুলিকে উদ্ধার করেছে বিএসএফ। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুলাই মাসে খবরে আসে ত্রিপুরার এই গোশালাটি। অপুষ্টি এবং হাইপারথার্মিয়ার কারণে একসঙ্গে ১৫৯টি গরু মারা যাওয়ার কারণে শিরোনামে এসেছিল এই গোশালাটি। উল্লেখ্য, দিল্লির একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ৪ একর জমির ওপর অবস্থিত এই গোশালটি পরিচালনা করে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি গরু থাকে। সারা দেশে ২৮টিরও বেশি গোশালা পরিচালনা করে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। উত্তরপূর্ব ভারতে একমাত্র ত্রিপুরাতেই এই গোশালা পরিচালনা করে তারা।
আরও পড়ুন- মমতার ঘরে ঢুকে হতবাক রাজ্যপাল! কী বললেন তিনি?
এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য আর লতা দেবী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে বলেন, এই গোশালাটি দেখভাল করেন দু'জন স্বেচ্ছাসেবক এবং কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। এখানে কোনও সুরক্ষা কর্মী নেই। তাই চোরাচালানকারীদের নজরে পড়ে এই গোশালাটি। লতাদেবী আরও বলেন, "গোশালায় এখন আমাদের ৬০০টি গরু রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ২৫০ থেকে ৩০০টি গরু চুরি হয়েছে। এর মধ্যে গত দু'মাসে দেড়শোর বেশি গরু চুরি গিয়েছে। সশস্ত্র চোরাচালানকারীরা প্রায়ই এখান থেকে পশু চুরি করে নিয়ে যায়।" লতা দেবী জানান, চুরির জেরে সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে এই গোশালাটিতে। কিন্তু তাতেও রোখা যায়নি চুরি।
আরও পড়ুন- শেষ রক্ষা হল না, গর্ত থেকে উদ্ধার হল সুজিতের পচাগলা মৃতদেহ
এদিকে গত দু'মাসেও গোশালাটিতে ৬১টি গরু মারা গিয়েছে। বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, পেটে প্লাস্টিক, পা ও মুখের রোগ, কৃমি এবং হাইপারথার্মিয়ার কারণেই এই মৃত্যু। তবে গরু চুরি নিয়ে স্থানীয় থানায় গোশালা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানালেও পুলিশ এ ব্যাপারে সহায়তা করেনি, এমনটাই মত তাঁদের। মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বিষ্ণুপদ ভৌমিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে বলেন, “আমরা গোশালা থেকে গরু চুরির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এখনও পর্যন্ত আমরা সাতটি গরু উদ্ধার করে তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছি। তবে তাঁরা তাঁদের গোশালায় থাকা প্রাণীর সংখ্যা সম্পর্কে কোনও বিস্তৃত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। শ্রীনগর, কামথানা, কুলুবাড়ি, ফটিকচেরা, হরিহরডোলা, কৈধেপা এবং বাংলাদেশের আরও কয়েকটি বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) থেকে উদ্ধার করা গরুকে ওই আশ্রয় স্থানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- এক মাস সমুদ্রে দিশেহারা অমৃত, জীবনযুদ্ধের কাহিনী হার মানাবে সেলুলয়েডকেও
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, এই সমস্ত উদ্ধারকৃত প্রাণী রাজ্য সরকারকে হস্তান্তরিত করার কথা ছিল। অখিল ভারত কৃষি গোসেবা সংঘের দায়ের করা আবেদনের শুনানিতে এমনটাই জানিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। গবাদি পশু পাচার এবং চোরাচালান বন্ধ করার জন্য রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
তবে ত্রিপুরার সরকার গবাদি পশু উদ্ধারকাজে ব্যর্থ হওয়ার পরেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি এই কাজটি নিজেদের কাঁধে নেয়। এমনকি এআরডিডি-র সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী, তাদের সিপাহিজালা জেলার দেবিপুর গ্রামে ৪ একর জমিও বরাদ্দ করা হয়। তবে এত পশুর জন্য এই জমি যথেষ্ট নয়, তা সরকারকেও জানায়। তাঁদের বক্তব্য, “এই ৪ একর জমি যথেষ্ট নয়। আরও জমি বরাদ্দের জন্য আমরা রাজ্য সরকারের প্রাণীজ পালন ও উন্নয়ন বিভাগ (এআরডিডি)এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওনারা দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুমে ২০ একর জমির প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু তা উপযুক্ত নয়।"