আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে সমুদ্রে পথ হারিয়েছেন এক মাস আগে। লড়াইয়ের অদম্য ইচ্ছে নিয়ে ঝড়ের মোকাবিলা করে অবশেষে শুক্রবার ওড়িশার উপকূলে ভেসে উঠলেন বছর ঊনপঞ্চাশের অমৃত কুজুর। না, এ কোনও সিনেমা নয়, জীবন! তবে আন্দামান নিবাসী অমৃতের জীবনযুদ্ধের এই উপাখ্যান হার মানাবে যে কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যকে।
ঠিক কী হয়েছিল?
আন্দামান-নিকোবরের শহিদ দ্বীপের বাসিন্দা অমৃত, পেশায় একজন জাহাজের মাসকাবারি বিক্রেতা। দ্বীপে আসা জাহাজে নিত্যদিনের খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা অমৃত কুজুর এবং তাঁর বন্ধু দিব্যরঞ্জন ২৮ অক্টোবর আন্দামান থেকে ভারত মহাসাগরের জাহাজগুলিতে ব্যবসার কাজে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ধেয়ে আসা ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাঁদের জাহাজ। সাংবাদিকদের অমৃত বলেন, "জাহাজটি এতটাই খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল যে আমাদের সমস্ত জিনিস ফেলে দিতে হয়েছিল জাহাজটি হালকা করার জন্য।"
আরও পড়ুন- ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় কিয়ার, ত্রস্ত ওমান উপকূল
সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ফিরে দেখতে গিয়ে অমৃত জানান, সীমাহীন সমুদ্রে বাঁচতে চাওয়ার আশায় অনেক জাহাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েও তাঁরা ব্যর্থ হন। তবে আন্দামান থেকে আসা মায়ানমার নৌসেনার জাহাজ তাঁদের ২৬০ লিটার তেল এবং কম্পাস দিয়ে সাহায্য করে। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাসে ওড়িশা উপকূলে এসে ফের ঝড়ের সম্মুখীন হয়ে পথ হারান অমৃত কুজুররা। এমনকী জ্বালানীও ফুরিয়ে যাওয়ায় ফের সমুদ্রে আটকা পড়েন অমৃত ও তাঁর বন্ধু। আন্দামাননিবাসী অমৃত বলেন, "আমি সমস্ত আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম তখন। তবে সমুদ্রের জল পান করে বেঁচে গিয়েছি। তোয়ালে জলে ভিজিয়ে পরিশুদ্ধ করে খেতাম।"
আরও পড়ুন- মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় বর্ধমানে নিহত চার পুলিশকর্মী
অন্যদিকে, ওড়িশার ক্রুশনাপ্রসাদ থানার পুলিশ অফিসার অভিমুন্য নায়েক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "আমরা অমৃতের বিষয়টি নিয়ে দেখছি। আমরা খবর পেয়েছি, গত মাসে সমুদ্রে দু'জন নিখোঁজ হয়েছেন, যাঁদের পরিবারের লোকজন আন্দামান-নিকোবর দ্বীপে থাকেন।" তবে জীবনযুদ্ধে অমৃত কুজুর বেঁচে ফিরলেও তাঁর বন্ধু দিব্যরঞ্জন জীবনযুদ্ধে হেরে যান। অমৃত বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রের জল পান করার জন্য আমরা ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। এভাবেই নৌকাতেই ও(দিব্যরঞ্জন) প্রাণ হারায়। আমি ওর দেহ নৌকাতেই রেখে আসি।" যদিও পুলিশ জানায় অমৃতের এই কথার সত্যতা যাচাই করার সম্ভাবনা কম।
Read the full story in English