ইজরাইয়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাসের বিক্রয় নিয়ন্ত্রণকারী বিধি, যা অপারেটররা বিভিন্ন দেশে হোয়াটসঅ্যাপ নজরদারির জন্য ব্যবহার করছিল, তা নিয়েই ইজরায়েলের তেল আভিভে শুরু হল আইনি লড়াই। ৭ নভেম্বর ইজরায়েলের রাজধানীর একটি জেলা আদালতে পেগাসাস প্রস্তুতকারক এনএসও গ্রুপের রফতানির লাইসেন্স বাতিলের শুনানি হবে। মূল বিষয় হিসাবে যা উঠে আসছে তা হল, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা রফতানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিসিএ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যে পদ্ধতিতে সমরাস্ত্র এবং জাতীয় সুরক্ষা সংক্রান্ত উপাদানকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়, পেগাসাসকেও সেই প্রক্রিয়াতেই লাইসেন্স ছাড়পত্র দেওয়া হলেও আরও নজরদারি থাকা দরকার ছিল।
আরও পড়ুন- বিশ্লেষণ: পেগাসাস স্পাইওয়ার ঠিক কী?
প্রায় ৩০ জন মানবাধিকারকর্মীরা তেল আভিভে এই পেগাসাস সফটওয়্যারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মানবাধিকারকর্মীদের এই আইনি পদক্ষেপটি যৌথভাবে সমর্থন জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এনওয়াইইউ স্কুল অফ ল' এর বার্নস্টেইন ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস এবং গ্লোবাল জাস্টিস ক্লিনিক। এই ক্লিনিকটি মূলত ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার দ্বারা যেভাবে মানবাধিকার রক্ষাকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে সেই প্রশ্নকেই তুলে ধরছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তরফে বলা হয়েছে, তাঁদের মানবাধিকারকর্মীদের পেগাসাস দ্বারা ২০১৮ সালের জুন মাসে টার্গেট করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি আদালতে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপের অভিযোগ, ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও গ্রুপ টেকনলজিস পেগাসাস নামক একটি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ১,৪০০ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীকে টার্গেট করেছে। হোয়াটসঅ্যাপ-এর এক মুখপাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে বলেন, “ভারতের কোন কোন ব্যক্তিদের নিশানায় রাখা হয়েছে, তাঁদের পরিচয় এবং নম্বর আমাদের পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব না। তবে হোয়াটসঅ্যাপ সেই সমস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সতর্ক করে দিয়েছে।” হোয়াটসঅ্যাপ-এর ওই মুখপাত্র আরও বলেন, “যে সব ভারতীয় সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের উপর নজরদারি চালানো হয়েছে, তাঁদের পরিচয় এবং সঠিক নম্বর প্রকাশ করতে না পারলেও, আমরা এটা বলতে পারি যে এই নম্বরগুলি খুব সাধারণ কারও নয়।”
আরও পড়ুন- পেগাসাস হানা: সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রকে ১২১ জন আক্রান্তের কথা বলেছিল হোয়াটসঅ্যাপ
ইজরায়েলের তেল আভিভ আদালতে আবেদনকারীদের সমর্থনে অ্যামনেস্টির দায়ের করা হলফনামায় বলা হয়, এনএসওকে এই সফটওয়্যারটির ব্যবহারের দায়িত্ব নিতে হবে এবং সরকারকে এই সফটওয়্যারের বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এমনকী অ্যামনেস্টির কর্মীদের তরফে পেগাসাস ব্যবহারে ইজরায়েলি সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরা এনএসওর লাইসেন্স বাতিল করতে ইজরায়েল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে অনুরোধও জানিয়েছেন। তবে শুক্রবার, জেরুজালেমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ইজরায়েল সরকার এনএসও গ্রুপের এই সাইবার হ্যাকিংয়ের সঙ্গে তাঁদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জীভ এলকিন বলেন, "এনএসও একটি বেসরকারি সংস্থা। এই সাইবার জগতে অনেকের মধ্যেও তারাও আছে। কিন্তু এর সঙ্গে ইজরায়েলের সরকারের কোনও যোগ নেই। সবাই সেটা জানে।"
Read the full story in English