আরও ১৯ দিন বাড়ল লকডাউনের মেয়াদ। ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেন, 'দেশবাসীর ত্যাগেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।' জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীকে সাতটি কাজের আর্জি জানান মোদী। বলেন, 'ওই সাত কর্তব্যই সরকারকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তি দেবে।'
মোদীর সাত আর্জি:
১. বয়স্কদের যত্নের সঙ্গে দেখভাল করতে হবে।
২. বাড়িতে তৈরি মাস্ক সাবধানে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।
৩. আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউলোড করুন ও অপরকেও করতে বলুন।
৪. গরীব মানুষের খাবার সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে দেখভাল করতে হবে।
৫. কাউকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেবেন না।
৬. স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত ব্যক্তি, নিকাশি কাজের কর্মী ও পুলিশদের সম্মান জানান।
৭. সর্ব শক্তি দিয়ে ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন মেনে চলুন। যে যেখানে আছেন সেখানে সুস্থ ও সাবধানে থাকুন।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা টেনে মোদী জানান, 'এটা এমন সংকট যে কোনও দেশের সঙ্গেই তুলনা করা উচিত নয়। তবুও, করোনা পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে দিন কয়েক আগেও যে সব দেশের সঙ্গে ভারতের তুলনা টানা হত সেখানে এখন মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। পরিসংখ্যান বিচার করলে ভারত তুলনামূলক ভাবে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে।' তাঁর দাবি, 'সংক্রমণ ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ করেছে ভারত। রাজ্য সরকারগুলিও দায়িত্বের সঙ্গে ভাল কাজ করছে। ফলে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত আজ দৃষ্টান্ত।'
গত শনিবারই প্রধানমনন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের ভিডিও বৈঠকে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানায় একাধিক রাজ্য। এদিন ভাষণে মোদী জানান, 'সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন লাগু করে লাভ মিলেছে। দেশজুড়ে লকডাউন বাড়ানো দাবি জানানো হচ্ছিল। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিচার করলে দেশবাসীকে মূল্য চোকাতে হচ্ছে। কিন্তু তা জীবনের থেকে বেশি নয়। তাই লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।'
আরও পড়ুন- Live: দেশে করোনা আক্রান্ত ১০ হাজার ছাড়াল
দেশবাসীর কাছে কঠোরভাবে লকডাউন মেনে চলার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'হটস্পটগুলি'র উপর কড়া নজর রাখতে হবে। সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে নতুনভাবে হটস্পট হতে পারে এমনসব এলাকায়। ২০ তারিখ পর্যন্ত সব জেলার উপর নজরদারি চলবে। যেখানে পরিস্থিতি স্বভাবিক সেখানে কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে। এই বিষয়ে বুধবার গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে।' তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, অবস্থার অবণতি হলে লকডাউনে শিথিলতা বাতিল করা হবে।
ভয়ঙ্কর করোনার ভ্যাকসিন তৈরির জন্য এদিন বিজ্ঞানী ও যুবসমাজের কাছে আহ্বান জানান নরেন্দ্র মোদী। বলেন, 'দেশে ২২০-র বেশি ল্যাবরেটরিতে করোনা পরীক্ষার কাজ হচ্ছে। বিশ্বের নিরিখে ১০ হাজার করোনা সংক্রমণের ঘটনার জন্য ১৫০০-১৬০০০ শয্যা লাগে। কিন্তু, ভারতে ৬০০-র বেশি হাসপাতালে ১ লাখ শয্যা রয়েছে। এই আযোজন আরও বাড়ানো হচ্ছে।'
আরও পড়ুন- মাস্কের পর কি গ্লাভস? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
করোনা নিয়ে এর আগে দু’বার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমবার ‘জনতা কার্ফু’ ও দ্বিতীয়বার দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউনের ঘোষণা করেছিলেন তিনি। মাঝে ভিডিও বার্তায় পারস্পারিক সংহতির প্রকাশ হিসাবে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের আবেদন জানিয়েছিলেন।
সোমবারই স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানায়, গত ১৪ দিনে করোনা সংক্রমিত দেশের ১৫ রাজ্যের ২৫ জেলায় আর নতুন করে পজেটিভের খবর মেলেনি। একে লকডাউনের সুফল বলেই মনে করা হচ্ছে।
লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা আগেই বাংলা সহ দেশের ৬ রাজ্য লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। একই পথে হাঁটে মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ু। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ওই দুই রাজ্যেও বাড়ানো হল লকডাউন। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রেই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। কিছুটা শিথিল করে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে অরুণাচল, মেঘালয় ও পুদুচেরিও।
গত ২৪ ঘন্টায় ৫১ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। যা এ দেশে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে রেকর্ড। আক্রান্ত হয়েছেন ৯০৫ জন। সব মিলেয়ে ভারতে করোনা পজেটিভ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে ও মৃত ৩৩৯। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লভ আগারওয়াল বলেছেন, 'ভারতে মোট ৮৫৭ জন করোনা আক্রান্ত সিস্থ হয়ে উঠেছেন। এদের মধ্যে নজির স্থাপণ করে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৪১ জন।' দেশের বহু জায়গায় করোনা সংক্রমণ হয়নি। অথবা মাত্র এক বা দু'জনের করোনা সংক্রমণের খবর মিলেছে। সেইসব জায়গায় নমুনা পরীক্ষা করতে চায় আইসিএমআর।
আইসিএমআরের এপিডেমিওলজিস্ট ডঃ আর আর গঙ্গাখেদর বলেছেন, 'আগামী ৬ সপ্তাহ করোনা পরীক্ষার জন্য কীট মজুত রয়েছে। রবিবার পর্যন্ত দেশে মোট ১,০৬,২১২ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৫৬ সরকারি ল্যাবে ১৪,৮৫৫ ও ৬৯ বেসরকারি ল্যাবে ১,৯১৩ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে।' তবে চিনা কীটের মান নিয়ে সরকারি স্তরেই এখনও দ্বিধা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন