প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ২১ টি দ্বীপের নামকরণ পর্ব সারেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। 'পরাক্রম দিবস' উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এদিনই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে 'উৎসর্গ' করা রস দ্বীপে স্মৃতিসৌধেরও উন্মোচন করেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর 'জন্মদিবস উপলক্ষে' পালিত 'পরাক্রম দিবসে' আন্দামান ও নিকোবরের ২১ টি নামবিহীন দ্বীপের নামকরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের সম্মান রক্ষার্থে কর্তব্য পালন করে পরমবীর চক্র প্রাপ্ত ২১ সৈনিকের নামে নাম রাখা হল আন্দামানের ২১টি দ্বীপের। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপে নির্মিত নেতাজিকে উৎসর্গ করা 'রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্মারক মডেলের'ও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
এই পরম বীর চক্র বিজয়ীদের নামে দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে
২১টি দ্বীপের মধ্যে যেটি সবথেকে বড়, সেটির নাম রাখা হয়েছে স্বাধীন ভারতের প্রথম পরমবীর চক্র প্রাপ্ত মেজর সোমনাথ শর্মার নামে। তিনি ১৯৪৭ সালের ৩ নভেম্বর শ্রীনগর বিমানবন্দরে পাকিস্তানি জঙ্গিদের রুখতে গিয়ে শহিদ হন। 'বদগামে' তাঁর এই আত্মত্যাগের জন্য তিনি মরণোত্তর পরমবীর চক্রে ভূষিত হয়েছিলেন।
দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে দেশের দ্বিতীয় পরমবীর চক্র প্রাপ্ত সৈনিক সুবেদার তথা অনারারি ক্যাপ্টেন (যুদ্ধের সময় ল্যান্স নায়েক) করম সিংয়ের নামে। বাকি দ্বীপগুলির নামকরণ করা হল সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট রমা রাঘোবা রানে, নায়ক যদুনাথ সিং, কোম্পানি হাবিলদার মেজর পিরু সিং, ক্যাপ্টেন জিএস সালারিয়া, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (তৎকালীন মেজর) ধন সিং থাপা, সুবেদার জোগিন্দর সিং, মেজর শয়তান সিং, সিকিউএমএইচ আবদুল হামিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরদেশির বুর্জরজি তারাপোরের নামে।
আরও পড়ুন: < ‘নেতাজির যা লক্ষ্য, সঙ্ঘেরও সেই লক্ষ্য’, বললেন আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত >
ল্যান্স নায়েক আলবার্ট এক্কা, মেজর হোশিয়ার সিং, লেফটেন্যান্ট অরুণ ক্ষেত্রপাল, ফ্লাইং অফিসার নির্মলজিৎ সিং সেখন, মেজর রামস্বামী পরমেশ্বরন, নায়েব সুবেদার বানা সিং, ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা, লেফটেন্যান্ট মনোজ কুমার পান্ডে, সুবেদার মেজর (তখন রাইফেলম্যান) সঞ্জয় কুমার, এবং সুবেদার মেজর অবসরপ্রাপ্ত (অনারারি ক্যাপ্টেন) গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্র সিং যাদবের নামে বাকী দ্বীপগুলির নামকরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আজকের এই অনুষ্ঠানে নেতাজিকে স্মরণ করে বলেন, “আজ, পরাক্রম দিবসে, আমি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানাই এবং ভারতের ইতিহাসে তাঁর অনন্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন নেতাজি। তাঁর ধ্যান-ধারণা চিন্তাভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা ভারতের জন্য তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি।”
আজ নতুন ২১টি দ্বীপের নামকরণ নিয়েও বড় বার্তা দেন মোদী। তিনি বলেন, 'আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সাহসিকতাকে দেশ চিরকাল মনে রাখবে। মোদী বলেন, ২১ জন পরমবীর চক্রে ভূষিত সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ানের একটাই লক্ষ্য ছিল তা হল 'ইন্ডিয়া ফার্স্ট'। তিনি আরও বলেন, আজ এসব দ্বীপের নামকরণের মাধ্যমে তাঁদের সেই লক্ষ্য 'চির অমর' হয়ে গেল।
তিনি বলেন, 'কয়েক দশক ধরে দেশের সম্ভাবনাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এখন ভারতকে আধুনিক উন্নয়নের শিখর ছোঁয়া দেশ হিসেবে দেখছে সারা বিশ্ব। আন্দামান-নিকোবরের বিশ্বের কাছে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। কিন্তু আগে এই সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি'। পাশাপাশি, তিনি শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানান।
এদিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই উদ্যোগে আজ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ২১টি বড় দ্বীপ আমাদের পরম বীর চক্র বিজয়ীদের নামের সঙ্গে যুক্ত করেছেন এবং তাদের 'স্মৃতি' অমলিন হয়ে থাকবে । প্রধানমন্ত্রী মোদীর শক্তিশালী নেতৃত্ব ভারতকে সমৃদ্ধ করেছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বিরাট এক যোগসূত্র রয়েছে'।